প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে সর্ববৃহৎ জনবহুল এবং নদীসিকস্তি এলাকা হলো বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন। তাছাড়া সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে নামের তালিকায়ও এ ইউনিয়নটি সর্বাগ্রে। তাই সকল ক্ষেত্রেই এটি ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে সর্বক্ষেত্রে বেশি এগিয়ে। জানা যায়, এ ইউনিয়ন পরিষদ এক সময়ে বৃহৎ ছিলো, যা ভেঙে কয়েকটি ইউনিয়নে পরিণত হয়।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২৬ হাজার ২শ’ ৫৭ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৬০৫ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৬৫২ জন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উক্ত ইউনিয়নের ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত নির্বাচনগুলোতে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে অনেক প্রার্থী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিলেও এবারই সবচেয়ে কমসংখ্যক প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এঁরা হচ্ছেন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন খান শামীম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী অজিউল্লা সরকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের খোরশেদ আলম। এ তিন প্রার্থীর মধ্যে ২ জন নির্বাচনী যুদ্ধে একেবারেই নবীন।
ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৯ জন সাধারণ সদস্য পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছেন ২৫ জন। সংরক্ষিত নারী ৩টি সদস্য পদের মধ্যে ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন রহিমা বেগম। বাকি ২টি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
২৭ অক্টোবর প্রার্থীদের মাঝে রিটার্নিং অফিসার প্রতীক বরাদ্দ দেয়ায় ওইদিন থেকেই মূলত প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্যে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
অপরদিকে যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি মূলত বিএনপি সমর্থিত। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় দলের নেতা-কর্মীরা গোপনে বিভক্তভাবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
এদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাছির উদ্দীন খান শামীম এবারসহ তিনবার নির্বাচনী যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তবে প্রথম নির্বাচনে পরাজিত হলেও ২য় নির্বাচনে বিজয়ী হন।
নাছির উদ্দীন খান শামীম হলেন ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের সন্তান। শুধুমাত্র বিষ্ণুপুর ইউনিয়নেই নয়, পুরো চাঁদপুর সদর উপজেলায় রয়েছে এই পরিবারের বেশ সুনাম। এ খান পরিবারের লোকজন চাঁদপুরে পূর্ব থেকেই জনপ্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। এ পরিবারের পক্ষ থেকে নৌকা প্রতীকের নাছির উদ্দীন খান শামীমের পূর্বেও বেশ ক’জন জনপ্রতিনিত্ব করেছেন। শামীমের দাদা দীর্ঘদিন এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। জেঠাতো ভাইও একই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিও এক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে এবার ২য় বারের মতো চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার জেঠা মরহুম আলহাজ¦ হারুনুর রশিদ খান দুবারের সাবেক এমপি। এক কথায় পূর্বপুরুষদের থেকেই এ পরিবার জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন।
উক্ত ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় এ পরিবারের রয়েছে ব্যাপক সুনাম। আবার দানশীল পরিবার হিসেবেও খান পরিবারের রয়েছে বেশ সুনাম ও ঐতিহ্য। এক কথায় খান পরিবারের দীর্ঘ সুনাম ও ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে খান পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তায় অনেক এগিয়ে রয়েছেন বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
নির্বাচন বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়নে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী অজিউল্লাহ সরকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন পেয়ে আমরা জনগণের সাড়া পাচ্ছি। আমাদের দৃঢ় বিশ^াস, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে হাতপাখা প্রতীক বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। কিন্তু আমাদেরকে এখনই যেভাবে হুমকি- ধমকি দেয়া হচ্ছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছি না।
এদিকে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম খলিলুর রহমান (মদিনা)-এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই আমাকে পোস্টার, ব্যানার এবং গণসংযোগে বাধা প্রদান করে আসছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।
তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী হয়ে বলেন, সত্যিকারের জনরায়ে আনারস প্রতীকের বিজয় হবেই।
অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে নাছির উদ্দীন খান শামীম বলেন, নৌকা প্রতীকের জনপ্রিয়তায় মিথ্যা অভিযোগ করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চলছে।
এদিকে দিন-রাত সকল প্রার্থীর প্রচারণায় এখন নির্বাচনী উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে। একদিকে প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, অন্যদিকে মাইকিং পোস্টার আর ব্যানারে ভাসছে পুরো ইউনিয়ন।