রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

হানারচর ইউনিয়নে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা
মিজানুর রহমান ॥

আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৩নং হানারচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ডের গ্রামে-গঞ্জে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোটার ও প্রার্থীরা।

সকাল থেকে রাত অবধি ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে মাইকিংয়ে চলছে নির্বাচনী প্রচারণার গান-বাজনাসহ নানান বৈচিত্র্যময় কথামালা। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষার জন্যে ছুটছেন প্রার্থীরা। অনেকেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

মেঘনা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এ ইউনিয়ন। নদী ভাংতে ভাংতে ইউনিয়নটিকে অনেক ছোট করে ফেলেছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৯০৩ জন। এর মধ্য পুরুষ ৩ হাজার ৭৭৫ জন এবং মহিলা ভোটার ৩ হাজার ২৮ জন।

এ জনপদের মানুষ অনেক ধার্মিক, শিক্ষা-দীক্ষা চাকরি-বাকরি, ব্যবসা ও রাজনীতিতে এগিয়ে। অধিকাংশ কৃষি ও মৎস্যের ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানে অবস্থিত প্রাচীন প্রায় একশ’ ত্রিশ বছরের পুরানো হাইস্কুল হরিণা চালিতাতলী অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন এবং মেঘনা নদীর চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি নৌ-রূটের হরিণা ফেরিঘাট।

এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে এবার ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুকবুল হোসেন মিয়াজী। এর আগে তিনি দুইবার নির্বাচন করেছিলেন। তার সাথে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় নেতা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন টিটু গাজী। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। অপরজন হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমর্থিত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী হাফেজ মোঃ মনির হোসেন (বকাউল)।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি থেকে কোনো প্রার্থী না থাকায় হানারচরে মূল লড়াই হবে নৌকার সাথে আনারস প্রতীকের।

ভোটাররা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের মোজাম্মেল হোসেন টিটু গাজীর এখানে শক্ত অবস্থান রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা তার পক্ষে কাজ করছে। টিটু গাজীর বাবা লনি গাজী এ ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। এখানে চরমোনাই পীরের দল হাতপাখারও অনেক ভোট রয়েছে।

এই ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী আবদুস ছাত্তার রাঢ়ি। এবার দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।

চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান এ ইউনিয়নের। তিনি এক সময় এই ইউনিয়ন থেকে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বিগত ৫ বছরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এই ইউনিয়নকে নদী ভাঙ্গার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে ব্যবস্থাগ্রহণ করেন এবং জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করেছেন।

তবে, এ ইউনিয়নে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যারাই দল করেন, গ্রুপিং রাজনীতি তাদের পিছু ছাড়ে না। এই কারণে অনেক সময় শান্ত হানারচর ইউনিয়ন অশান্ত রূপ নিতে দেখা যায়।

ভোটাররা জানান, এবারের নির্বাচনে এখানে নৌকার প্রার্থী চ্যালেঞ্জের মধ্য পড়তে পারে। এ জন্যে এলাকার মানুষের মাঝে ভয় ও সংশয় কাজ করছে। ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ ও অধিকাংশ ভোটার স্বতন্ত্র প্রার্থী টিটু গাজীকে নিয়ে ভাবছে। হাতপাখার প্রার্থীও ভালো ভোট পাবে।

ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, হাট-বাজারে নৌকার প্রচারণার সাথে আনারস ও হাতপাখা মার্কার নির্বাচনী প্রচারণা ব্যাপকভাবে চলছে। মেম্বার ও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পোস্টার ব্যানারে এলাকা ছেয়ে গেছে। সচেতন ভোটারদের মতে, এ ইউনিয়নে মূলত দ্বিমুখী লড়াই হবে আনারস ও নৌকার।

নৌকার প্রার্থী মুকবুল হোসেন মিয়াজী জানান, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শোকরিয়া, জননেত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় আমি নৌকার নমিনেশন পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ভিশন-২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা করেছে, আমি সেই ট্রেনে শরিক হতে চাই। দীপু মনি এমপির মাধ্যমে হানারচরের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে ইউনিয়নবাসী নৌকায় ভোট দিবে এবং আমাকে বিজয় করবে।

তিনি বলেন, আমি হানারচর ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে উপহার দিতে চাই। যেখানে সন্ত্রাস, মাদক, ইভটিজিং, হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। এ ইউনিয়নের মানুষ তাদের অধিকার নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে।

অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের মোজাম্মেল হোসেন টিটু গাজী বলেন, আমি জনগণের মনোনীত প্রার্থী। ভয়-ভীতি, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপবাদের বিরুদ্ধে হানারচরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ। আমার এলাকায় কোনো মানুষ বলতে পারবে না যে, আমি কোনো মানুষের ক্ষতি করেছি। বিগত সময় আমার আত্মীয়-স্বজন অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েও দলের হাল ছাড়েনি। ডাঃ দীপু মনি আপার নির্বাচনের সময় আমরা আপার নির্বাচন করেছি। ইনশাল্লাহ জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে সবার আগে আমি প্রিয় আপা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রথমই ছুটে যাবো। তার দিক-নির্দেশনায় পথ চলবো। আমাদের হানারচর ইউনিয়নবাসী দীপু আপাকে খুব ভালোবাসে। তাঁর হাত ধরেই হানারচর হবে আরো সুন্দর একটি ইউনিয়ন।

এদিকে চরমোনাইর পীর সমর্থিত প্রার্থী হাফেজ মোঃ মনির হোসেন (বকাউল) বলেন, আমি চাই এ ইউনিয়নে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। মানুষ যাতে তাদের ভোটের অধিকার পায়। ভোটের মাধ্যমে যে পাস হয়, ইনশাল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়