প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড চাঁদপুরে!
শহরজুড়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ॥ নাজির পাড়ায় কোমর সমান পানি
চাঁদপুরে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হওয়ার রেকর্ড হলো! যা ২৪ ঘণ্টার রেকর্ডে ২৫০ মিলিমিটার। এই ২৪ ঘণ্টা হচ্ছে ৪ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ৫ অক্টোবর শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত। আবহাওয়া বিজ্ঞানে বৃষ্টিপাত রেকর্ডে ২৪ ঘণ্টার হিসাব এভাবেই নেয়া হয়। চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ্ মোঃ শোয়েব এই তথ্য জানিয়ে বলেন, আগেরদিন সকাল ৯টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত হচ্ছে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ডের হিসাব করা হয়। সে হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁদপুরে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এটি এ বছর চাঁদপুর জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এর আগে ২৭ মে এই জেলায় ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ২৫৭ মিলিমিটার। যা এ বছর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত চাঁদপুরে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা দেশের সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টির রেকর্ড। এদিকে গতকাল ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চাঁদপুরে ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এদিকে মুষলধারে টানা এমন বৃষ্টিতে জেলা শহর, সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বাসাবাড়িতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় নতুন নির্মিত দেয়াল ধসে পড়েছে এবং গ্রামীণ রাস্তাও ভেঙ্গে গেছে। সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নস্থ নিজ গাছতলা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি বাড়ির নতুন নির্মিত দেয়াল ধসে পড়তে দেখা গেছে। এখানকার গ্রামীণ সড়কও ভেঙ্গে গেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, যা শনিবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
চাঁদপুর শহর ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মহল্লায় সড়কে জলাবদ্ধতা। অনেক বাসাবাড়ির নিচতলায় হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। বিরামহীন বৃষ্টি হওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। শহরের পুরাণবাজার মধুসূদন হাইস্কুল মাঠ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠসহ কলেজের সড়ক বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। নতুনবাজারের নাজির পাড়া, মিশন রোড আশ্রম এলাকা, শেরেবাংলা ছাত্রাবাস এলাকার পূর্বপাশ লাগোয়া সড়ক ও বাসাবাড়ি, প্রফেসর পাড়া, মমিনপাড়া, গুয়াখোলা, চিত্রলেখা মোড়, পালপাড়া, আলিম পাড়া, রহমতপুর আবাসিক এলাকা, তালতলা গাজী সড়ক, করিম পাটওয়ারী সড়ক ও মুন্সী বাড়ি মাদ্রাসা রোডে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসব এলাকার সড়কের বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। নাজির পাড়ায় সড়কেই ছিল কোমর সমান পানি।
মিশন রোড এলাকার অটোরিকশা চালক রেদওয়ান ইসলাম বলেন, ভোর ৬টায় সড়কে নেমেছেন। বৃষ্টির কারণে লোকজন বাসাবাড়ি থেকে নামেনি। যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন। সড়কে যানবাহন সংখ্যা খুবই কম বলে জানালেন তিনি।
শহরের নাজির পাড়ার মামুনুর রশিদ বলেন, বৃষ্টির পানিতে তাদের বাসার নিচতলায় হাঁটু পরিমাণ পানি। শুক্রবার রাত থেকেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব নাজির পাড়াস্থ এলাহী মসজিদের নিচতলায় হাঁটু পরিমাণ পানি শুক্রবার রাত থেকে।
পালপাড়া এলাকার মাজহারুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর এর আগে টানা বৃষ্টি হলেও শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টির পরিমাণ ছিলো অনেক বেশি। তাদের বাসায়ও পানি হাঁটু পরিমাণ।
শহরের শপথ চত্বর এলাকায় মাঠা বিক্রি করেন বিকাশ। তিনি বলেন, সকাল ৬টায় এসে মাঠা বিক্রির জন্যে বসেছেন। বৃষ্টির কারণে সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো ক্রেতা আসেনি। মাঠা বিক্রিতেই তার সংসার চলে। যে কারণে বৃষ্টিতেও ঘরে বসে থাকতে পারেননি।
সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলগী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাড়ির চারপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সড়কেরও বেহাল অবস্থা।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। থেমে থেমে সারা রাত বৃষ্টি ও বজ্রপাত অব্যাহত ছিলো। সন্ধ্যার পর থেকে শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল কমে যায়। অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাসাবাড়িতে চলে যায়।
এদিকে মুষলধারে এমন বিরামহীন বৃষ্টিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষগুলো দারুণ বিপাকে পড়ে। আর নিম্ন এলাকার বাসিন্দারা ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে খুবই বেকায়দায় পড়ে। এ অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে গতকাল দুপুর থেকে দেখা গেছে শহরের সড়ক ও অলিগলিতে পৌর কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেছে। তবে পানি সরতে সময় নিচ্ছে।