চাঁদপুর তথা ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃতী ক্রিকেটার শামীম হোসেন পাটোয়ারীর টি-২-০ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে স্থান পাওয়া নিয়ে উচ্ছ্বসিত ফরিদগঞ্জবাসী। বিশ্বকাপের দল ঘোষণায় শামীম পাটোয়ারীর নাম উঠে আসায় বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভরে যায় তাকে ধন্যবাদ দেয়ার স্ট্যাটাসে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে ক্রীড়াপ্রেমিরা।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া গ্রামের শামীম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে! শামীম ডানপিটে এবং দুরন্ত বটে। পড়াশোনার চেয়ে ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহের কমতি ছিলো না তার। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জয়ের মিশনে যাচ্ছে শামীম পাটোয়ারী। গ্রামের পুকুরে কিংবা পাশের ডাকাতিয়া নদীতে সাঁতার কেটে দুরন্তপনায় মেতে ওঠা সেই ছেলেটি এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট স্কোয়াডে- এমন আনন্দের সংবাদে খুশিতে আত্মহারা শামীম পাটোয়ারীর পরিবারের সদস্যসহ গ্রামের ছোট-বড় সবাই। শামীম পাটোয়ারীর বাড়িতে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানুয়া গ্রামে কথা হয় ক্রিকেটার শামীম পাটোয়ারীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ছেলের এমন অর্জনে বাবা আব্দুল হামিদ পাটোয়ারী, মা রিনা বেগম, এলাকাবাসী এবং তার প্রথম কোচ, বিসিবির জেলা কো-অর্ডিনেটর শামীম ফারুকীও বেশ খুশি।

শামীম পাটোয়ারীর বড় ভাই মনির হোসেন পাটোয়ারী চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি খুব দুর্বল ছিলো শামীম। বাড়ির উঠোনে কিংবা পতিত জমিতে সঙ্গীদের নিয়ে ক্রিকেট খেলতো সে। তবে পড়াশোনার দিকেও তার ঝোঁক ছিলো। গ্রামের সবুজ নামে আরেক যুবক বলেন, বেশ ডানপিটে শামীম বর্ষা এলেই পুকুরে কিংবা পাশের ডাকাতিয়া নদীতে দল বেঁধে সাঁতরে বেড়াতো।

যার হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে শামীম হোসেন পাটোয়ারী আজ দেশ-বিদেশে পরিচিতি পাচ্ছে, সেই কোচ শামীম ফারুকী চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, ২০১১-১২ সালে যখন আমার কাছে ছিলো তখন খুব দুষ্টু ছিলো শামীম। তবে প্রশিক্ষণে কখনো ফাঁকি দেয়নি। যেখানেই নিয়ে যেতাম সবার নজর কাড়তো শামীম। আর সেই সময় থেকেই আমার ভাবনা ছিলো শামীম একদিন বড় ক্রিকেটার হবে। আমার প্রত্যাশা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শামীম বেশ ভালো করবে এবং দেশের সুনাম কুড়িয়ে আনতে সক্ষম হবে।

এদিকে এলাকাবাসীর সঙ্গে ছেলের জন্যে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন শামীম পাটোয়ারীর বাবা আব্দুল হামিদ পাটোয়ারী ও মা রিনা বেগম। তবে তাদের একটু আকুতিও আছে। চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ মূল সড়ক থেকে তাদের গ্রামের বাড়ির যে সড়ক তার বড়ই বেহাল দশা। ভাঙাচুরা আর কাদামাখা সড়কটির প্রতি একটু নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

জানা গেছে, আব্দুল হামিদ-রিনা বেগম দম্পতির ৫ সন্তানের মধ্যে শামীম হোসেন পাটোয়ারী সবার ছোট। সবশেষ গত মাসের ১৪ তারিখে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গ্রামে আসে শামীম হোসেন পাটোয়ারী। অনূর্ধ্ব-১৯সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে সে। তবে এবারই প্রথম বিশ্বকাপে ডাক পড়েছে।

এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃতী ক্রিকেটার শামীম হোসেন জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পাওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি শিউলী হরি, ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নূরুন্নবী নোমান অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নূরুন্নবী নোমান জানান, শামীম আমাদের মান রেখেছে। অপেক্ষা এখন বিশ্বকাপ মঞ্চে তার যোগ্যতার নিদর্শন প্রদর্শন করা। তিনি বলেন, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী শামীম পাটোয়ারীসহ ফরিদগঞ্জ উপজেলার দুজনকে শুধু তারা সংর্বধনা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, করোনাকালসহ তাদের বাড়িতে অবস্থানকালে নিবিড় অনুশীলনের জন্যে ফরিদগঞ্জ এআর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড তৈরি করে দিয়েছেন।