শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত ফরিদগঞ্জ স্কাউট সম্পাদকের কাণ্ড :

অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ব্যান্ড সেট হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা

স্কাউটের ব্যান্ড সেট নিয়ে তিনি যা করলেন তা ভাবতেও লজ্জাবোধ হচ্ছে : উপজেলা স্কাউট কমিশনার

শামীম হাসান ॥
অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ব্যান্ড সেট হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা

অর্থ আত্মসাৎ বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর বহিষ্কৃত ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্কাউট সম্পাদকের বেহায়াপনায় অতিষ্ঠ রোভার-স্কাউট সদস্য এমনকি স্বয়ং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারাও।

উপজেলা স্কাউটের বহিষ্কৃত সম্পাদক জিয়াউর রহমান উপজেলা স্কাউটের ১৫টি ব্যান্ড হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। ২০ সেপ্টেম্বর সকালে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে সুযোগ পেয়েই উপজেলা স্কাউট অফিস থেকে ১৫টি ব্যান্ড সরিয়ে ফেলেন তিনি। পরে সেগুলো নিয়ে রাখেন ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের নিকটবর্তী ফরিদগঞ্জ বালিকা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে পরে রোভার স্কাউটদের তোপের মুখে পড়ে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া স্কাউট সম্পাদকের হস্তক্ষেপে উপজেলা স্কাউটের অর্থায়নে কেনা ব্যান্ডগুলো উদ্ধার করা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর বহিষ্কার হওয়ার পরও কয়েকজন স্কাউট শিক্ষার্থীকে নিয়েই নামমাত্র ট্রুপ মিটিং করেন সম্পাদক। এদিকে বহিষ্কৃত এই স্কাউট সম্পাদক বিভিন্ন মহলের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন, তাকে আপাতত স্কাউট থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। স্কাউটিং থেকে তো আর বাদ দেয়া হয়নি।

'কেন সরিয়েছেন উপজেলা স্কাউটের ব্যান্ড' এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ওনুআ মুক্ত স্কাউট ইউনিটের সম্পদ এগুলো। আমি জাহাঙ্গীর স্যারের (সদ্য দায়িত্ব পাওয়া উপজেলা স্কাউট সম্পাদক) সাথে কথা বলে বাচ্চাদের শেখানোর জন্যে ব্যান্ডগুলো নিয়েছি। অথচ ওনুআ মুক্ত স্কাউট গ্রুপ নামে উপজেলা, জেলা কিংবা অঞ্চল পর্যায়ের কোথাও কিছু নেই, এই দলের নামে কোনো অনুমোদনই নেই। যেই দলের বৈধ কোনো অনুমোদনই নেই, স্কাউট সদস্যদের নিয়ে সক্রিয় কোনো ইউনিট নেই, সেই দলের ব্যান্ড সেট আসবে কোথা থেকে? এমন প্রসঙ্গে হাস্য রসের জন্ম দিয়েছে বিতর্কিত এই উপজেলা স্কাউট সম্পাদক।

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্যে কথা হয় সদ্য দায়িত্ব পাওয়া উপজেলা স্কাউট সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন পাটওয়ারীর সাথে। তিনি জানান, সেদিনকার জরুরি সভার পর এখন পর্যন্ত অফিসের যাবতীয় সকল কিছুসহ আমি দায়িত্ব বুঝে পাইনি। গতকাল একজন রোভার সদস্যের মাধ্যমে আমি জানতে পারি, উপজেলা স্কাউট অফিস থেকে ব্যান্ড সেট একটি অটোরিকশায় করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । আমি তাৎক্ষণিক সাবেক সম্পাদক জিয়াউর রহমানকে মুঠোফোনে কল দিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আমি ফের খবর পাই, উপজেলা স্কাউটসের ব্যান্ডগুলো ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফরিদগঞ্জ বালিকা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি অফিস কক্ষে রাখা হয়েছে। তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যাই এবং কল দিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেখানে নেই। সব ব্যান্ডকে যেখান থেকে আনা হয়েছে সেখানে রেখে আসার জন্যে বলি এবং তিনি একটি অটোরিকশাযোগে সেগুলো স্কাউট অফিসে রেখে আসেন।

রোভার স্কাউট সদস্য রেদোয়ান খান এই প্রতিবেদককে জানান, বহিষ্কারের পর তিনি কীভাবে উপজেলা স্কাউটস অফিসে যান এবং ব্যান্ডসেট আত্মসাতের চেষ্টা করেন তা আমার বোধগম্য নয়। বহিষ্কারের পর তার কাছে উপজেলা স্কাউট অফিসের চাবিই বা থাকে কীভাবে? যিনি উপজেলা স্কাউটের ব্যান্ড সেট আত্মসাৎ করতে পারেন, তার কাছে উপজেলা স্কাউটের নথিপত্রসহ যাবতীয় জিনিসপত্র কোনোভাবেই সুরক্ষিত নয়।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্কাউটস কমিশনার হাসিনা আক্তার জানান, একটা অন্যায় করে বহিষ্কার হওয়ার পরও আবার উনি যে কাজটা করেছেন তা নিন্দনীয়। সেদিনকার জরুরি সভায় তাকে বহিষ্কার করার পর তিনি যেহেতু দীর্ঘদিন এই অফিসটি ব্যবহার করেছেন, তাই তিনি যেন অফিসের সকল জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিতে পারেন, আর আমরাও তা বুঝে নিতে পারি সেজন্যে কিছুটা সময় দেয়া হয়েছে। সব ঘুচিয়ে খুব সহসাভ একটা মিটিংয়ের মাধ্যমে তিনি সকল কিছু বুঝিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু তার মাঝে তিনি উপজেলা স্কাউটের ব্যান্ড সেট নিয়ে যা করলেন তা ভাবতেও নিজের কাছে লজ্জা হচ্ছে। সে যেই হোক, কখনো অন্যায়কে সমর্থন করিনি এবং করবোও না। কারো ব্যক্তিগত অপরাধের জন্যে সে যা শাস্তি পাওয়ার পাক, যা শাস্তি দেয়ার দেয়া হোক। সজ্ঞানে কখনো অন্যায়ের পক্ষে ছিলাম না, আর থাকবও না।

এ বিষয়ে উপজেলা কাব লিডার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ স্কাউট জাতীয় সদর দপ্তর থেকে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্যে উৎসাহ উপকরণের সাথে ১সেট করে ব্যান্ড দেয়া হয়। সেখান হতে উপজেলা স্কাউটের বহিষ্কৃত সম্পাদক জিয়াউর রহমান শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্যে ৫-৬ সেট ব্যান্ড রাখেন। গতকাল তিনি নির্বাহী কমিটিকে অবগত না করে অন্যত্র ব্যান্ডগুলো নিয়ে যান, যা পরবর্তীতে আবার সন্ধ্যায় বাধ্য হয়ে উপজেলা স্কাউট অফিসে ফেরত দেন। যা স্কাউটিংয়ের জন্যে নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক।

এর আগে অর্থ আত্মসাৎ করায় জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে স্কাউট ও রোভার সদস্য অভিযোগ তোলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলা স্কাউটসের এক জরুরি সভায় তাকে উপজেলা স্কাউট সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়