শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

ক্রমশ সরু হয়ে আসছে নাপিত বাড়ি খালের লোহারপুল অংশ
বিমল চৌধুরী ॥

ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার অংশে বিদ্যমান নাপিত বাড়ির খালটি দিন দিন সরু হয়ে আসছে। ক্ষমতাবান কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের সুবিধার্থে, নিজেদের সম্পদের সাথে সংযুক্ত করে নিচ্ছে খালের অংশ। অবৈধভাবে খালের দখলকৃত অংশেই ব্যবসার প্রসারতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্মাণ করছে স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা। যা এখন পরিণত হয়েছে নিজস্ব সম্পত্তিতে। চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার অংশে বৃটিশ আমলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী লোহারপুলের নিচ দিয়ে প্রবাহিত নাপিত বাড়ির খালটি ছিল দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের সুপরিচিত নৌপথ। এই খাল দিয়েই গহনা নৌকা থেকে শুরু করে ছোট ছোট পাল তোলা নৌকা যাতায়াত করতো অনায়াসে। প্রমত্তা মেঘনার বিশাল জলরাশি আর প্রচণ্ড ঢেউয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে নিরাপদ নৌপথ হিসেবে মহাজনরাও এ পথেই এগিয়ে যেতো তাদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে।

নাপিত বাড়ির এই খালটি চাঁদপুর শহরের অংশে থাকা ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত হয়ে লোহারপুলের নিচ দিয়ে গিয়ে তা মেঘনা নদীর সাথে সংযুক্ত হওয়ায় সে সময়ে খালটির গুরুত্ব ছিলো অনেক বেশি। বর্তমান সময় সড়ক পথের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হওয়ায় ধীরে ধীরে এ সকল খালের গুরুত্ব অনেকাংশে কমে যাওয়ায় তা সংস্কারের অভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে এক শ্রেণীর দখলবাজরা। তারা নিজেদের প্রয়োজনে ধাপে ধাপে খালের দুপাড় ভরাট করেছে নীরবে নিঃশব্দে। গড়ে তুলেছে কাঁচা, পাকা ভবন। খালের সম্পত্তি রক্ষার বিষয়টি যাদের দেখার কথা ছিলো তারাও নীরবে নিঃশব্দে ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন দখলকারীদেরকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে দখলকাররা দখল করে খুশি। আর ব্যবস্থাগ্রহণকারীরা তাদেরকে দখল করার সুযোগ দিয়ে খুশি। এমনটাই চোখে পড়েছে পুরাণবাজার লোহারপুল অংশের নাপিত বাড়ির খালের বর্তমান অবস্থা দেখে। অবশ্য এ স্থানে খালের দু পাড় দখল করতে দখলকারিদের তেমনভাবে মাটি ভরাট করতে হয়নি। খালের দুপাশে গড়ে ওটা অটো রাইসমিলের ছাই-তুষ এক্ষেত্রে অনেকটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। খালটি সংস্কার না হওয়ার ফলে খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে গিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভরা বর্ষা মৌসুমেও খালটি তার হারানো যৌবনে ফিরে আসতে পারছে না নাব্যতা সংকটের কারণে।

নাপিত বাড়ি খালটি লোহার পুল সংলগ্ন হওয়ায় খালের দুপাশে বসবাসরত অনেক পরিবারের নিত্যকর্ম এই খালের পানিতেই সম্পন্ন করতো। প্রতিদিন নারী-পুরুষ এইখালের পানিতেই তাদের ভান্ড-বাসন ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে স্নান পর্যন্ত সম্পন্ন করতো। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে চাঁদপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল করিম পাটওয়ারী এ স্থানে কয়েকটি পাকা ঘাটলা নির্মাণ করে দেন। কিন্তু খালের নাব্যতা কমে যাওয়ায় এবং পানির স্বচ্ছতা না থাকায় এখন তেমন করে কেউ আর এখানে তাদের নিত্য কর্ম সম্পন্ন করতে পারছেন না। যদি খালটি পুনরুদ্ধার পূর্বক সংস্কার করা যায় তাহলে পরিবেশ যেমন সুন্দর হবে, তেমনি বৃদ্ধি পাবে খালটি ব্যবহারে মানুষের সুবিধা।

অবশ্য এ ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়েছেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। যিনি নান্দনিক চাঁদপুর গড়া ও ব্যবসায়িক হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে অনার স্বপ্ন দেখিয়ে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, অচিরেই পর্যায়ক্রমে পৌর এলাকার সকল খাল পুনরুদ্ধারসহ সংস্কার করবেন। ফিরিয়ে আনবেন চাঁদপুরে ঐতিহ্য, রক্ষা করবেন পরিবেশের ভারসাম্য। তাঁর এ কথায় অনেকেই আশাবাদী।

পৌর মেয়রের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, চাঁদপুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকল্পে শহরের মাঝে থাকা খালগুলো দৃষ্টিনন্দন করা হবে। পুরাণবাজারের লোহারপুল চত্বরে থাকা নাপিত বাড়ির খালের দুই পাড় উদ্ধার পূর্বক তা বাঁধাই করে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হবে। এ স্থানে থাকা পাকা ঘাটলাগুলো সংস্কার পূর্বক ব্যবহার উপযোগী করা হবে। এক কথায় মানুষ যাতে এ স্থানে তাদের অবসর সময়ের কিছুটা সময় কাটাতে পারেন সেভাবে তা দর্শনীয় স্থানে পরিণত করার আশা রয়েছে বলে তিনি জানান। এজন্যে পৌর মেয়র এ স্থানে থাকা মিল মালিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে আমি যথেষ্ট সচেতন রয়েছি। আর এজন্যে মাননীয় সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে আরো বলেন, চাঁদপুরবাসীর সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আমাদের স্বপ্ন অবশ্যই পূরণ হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়