প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সড়কে নৈরাজ্য : বোগদাদ পরিবহনের যাঁতাকলে অতিষ্ঠ যাত্রীরা
বৈষম্যের শিকার আইদি পরিবহন
সড়কে নৈরাজ্যের বিষয়টি নতুন নয়। ক্ষমতার দাপট, চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা নিয়মে পরিণত হয়েছে। বারবার পদক্ষেপ নিয়েও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি কখনো। যারাই সুযোগ পেয়ে থাকেন তারাই একক আধিপত্য বিস্তার করে নেন পরিবহন সেক্টরে। সড়ক নিয়ন্ত্রণকারী কয়েকজন পরিবহন নেতা তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। ঘাটে ঘাটে চাঁদা আর বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হুঙ্কার ছাড়লেও বাস্তবে সুফল আসতে দেখা যায়নি। কোনো এক অদৃশ্য ঠিকানায় আটকে যায় সব। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের আড়ালে থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগীরা ইন্ধন জোগানোর ফলে এই নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যার ফলে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক যুগ আগে চাঁদপুর অঞ্চলের জনগণের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিলো লোকাল বাস। এরপর সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে স্পেশাল বাস সার্ভিস হিসেবে বোগদাদ পরিবহনের আবির্ভাব ঘটে। কয়েক যুগ অতিবাহিত হলেও তারাই চাঁদপুর- কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে দাপটের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে। জনগণের চাহিদা ও যাত্রীদের চাপ কমাতে মাঝে মধ্যে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন বাস সার্ভিস চালু করা হলেও কয়েকদিনের মধ্যেই হারিয়ে যেতে দেখা গেছে। হারিয়ে যাওয়া বাস সার্ভিসগুলোর মধ্যে ঈগল সুপার, আজমীর, বাগদাদ ও সাম্প্রতিক সময়ের রিল্যাক্স পরিবহন উল্লেখযোগ্য। হারিয়ে যাওয়া বাস সার্ভিসের তালিকা যাতে আর দীর্ঘ না হয় সেই লক্ষ্যে আঁটঘাট বেঁধে যাত্রীসেবায় সড়কে নেমেছে আইদি পরিবহন। এই পরিবহনের আয়ের টাকায় পরিচালিত হবে একটি বৃদ্ধাশ্রম। মানব কল্যাণে আইদি পরিবহনের এমন উদ্যোগে সামিল হতে যাত্রী সাধারণের আগ্রহ দিন দিন বাড়তে থাকে। সম্পূর্ণ নতুন বাস নিয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে সড়কে যাত্রা শুরু করার সাথে সাথে তোপের মুখে পড়তে হয় আইদি পরিবহন কর্তৃপক্ষের। চাঁদপুর জেলায় পরিবহনের অনুমতি পাওয়া গেলেও কুমিল্লা জেলার অনুমতি আটকে দেয় কুমিল্লা জেলা কর্তৃপক্ষ। বোগদাদ পরিবহনের আধিপত্য বজায় রাখতে তৎকালীন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য আ ক ম বাহার উদ্দিনের সরাসরি হস্তক্ষেপ সকলের দৃষ্টিতে আসে। বোগদাদ কর্তৃপক্ষ সাবেক এমপি বাহারের দাপট কাজে লাগিয়ে কুমিল্লা থেকে আইদি পরিবহনের বাসগুলো চাঁদপুরে পাঠিয়ে দেয়। নিরূপায় হয়ে আইদি কর্তৃপক্ষ চাঁদপুরের সীমানা জগৎপুর থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত তাদের সার্ভিস চালু করে। আইদি পরিবহন অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করায় এ সার্ভিস বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছে বোগদাদ কর্তৃপক্ষ।
পরিবহন সেক্টরের অনেকেই জানান, ঈগল, বাগদাদ, আজমীর ও রিল্যাক্স পরিবহন বন্ধ হওয়ার একমাত্র কারণ বোগদাদ কর্তৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপ। একক আধিপত্য বিস্তারে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে কাউকেই দাঁড়াতে দিচ্ছে না বোগদাদ কর্তৃপক্ষ।
আইদি পরিবহনের পরিচালক মীর পারভেজ জানান, বোগদাদ পরিবহনের চাঁদপুর জেলার আরটিসি অনুমোদন নেই। যে অভিযোগে আইদি পরিবহনকে কুমিল্লায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, সেই অভিযোগে বোগদাদও চাঁদপুরে প্রবেশ করার কথা নয়। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তারা জোর খাটিয়ে তাদের সার্ভিস চালু রেখেছে।
অনেকেই জানান, সাবেক এমপি আ ক ম বাহার পালিয়ে যাওয়ায় এখন আইদি পরিবহন বৈষম্যের শিকার থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বোগদাদের নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পেতে চাঁদপুর ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চাঁদপুরবাসী।