শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে ফিরে আসছে স্বস্তি

আস্থাভাজন হয়ে উঠছেন শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক

বিমল চৌধুরী ॥
আস্থাভাজন হয়ে উঠছেন শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে হাসিনা সরকারের পতনের পর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়লে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী দুষ্কৃতকারী মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রতিরোধ্যভাবে বাড়ি ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালায়। তাদের দ্বারা সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দেয় হতাশা। তারা জানমালের নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষই বেশি করে অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, তারা তাদের নিরাপত্তার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন। এমনই পরিস্থিতিতে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝেও দেখা দেয় অজানা আশঙ্কা। তারা তাদের জীবনের নিরাপত্তাসহ সহায়সম্পদ রক্ষায় অসহায়ত্ববোধ করতে থাকেন।

হাসিনা সরকার পতনের পর তাৎক্ষণিকভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় চাঁদপুরেও বিদায়ী আওয়ামী সরকারের সমর্থনপুষ্ট কিছু নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও কয়েকটি পরিবারের সহায় সম্পত্তির ক্ষতিসাধনসহ তাদের জীবনের ওপর হুমকি নেমে আসে। বাড়ি ঘর লুটপাটসহ করা হয় ভাংচুর। ঘটনার আলোকে পুরো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ই হয়ে উঠে আতঙ্কিত। এমনই পরিস্থিতিতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির কারা নির্যাতিত সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের ভূমিকায় চাঁদপুরে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক সংখ্যালঘুদের মাঝে যতটা না পরিচিত ছিলেন, তার চেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন মানবিক ফরিদ আহমেদ মানিক হিসেবে। সরকার পতন পরবর্তী সময়ে তাঁর সক্রিয় কার্যক্রমে তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের ব্যক্তিতে পরিণত হন। তাঁর কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন চাঁদপুরের কয়েকজন সংখ্যালঘু নেতা। যারা মনে করেন, শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক যদি ঘটনার আলোকে তাৎক্ষণিক কঠোর না হতেন এবং মানবিক চিন্তা নিয়ে এগিয়ে না আসতেন, তাহলে আমাদের অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটে যেতে পারতো।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে দেশে তাৎক্ষণিক যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনই বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা তাদের সহায় সম্পদের চেয়েও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে। কারণ তাদের মনে সকল সময়ই একটা আশঙ্কা ছিল, সরকার পতন হলে তাদের উপরই বড়ো ধরনের হামলা হতে পারে। বাস্তবতার আলোকে তেমনটাই দেখা গেল। সরকার পতনের সাথে সাথেই সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরে বসবাসরত কয়েকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনও দুষ্কুতকারীদের সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা পাননি। এই ক্ষেত্রে বাবুরহাট বাজারের সম্মানিত পল্লী চিকিৎসক ডাঃ জওহরলাল আচার্যীর কথা উল্লেখ না করলেই নয়। এলাকায় যিনি গরীবের ডাক্তার হিসেবে খ্যাত, যিনি নীরবে নিভৃতে মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে গেছেন দীর্ঘদিনব্যাপী। নিরীহ এই মানুষটিও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই ক্ষতির শিকার হন। কতিপয় দুষ্কৃতকারী তার বাড়ি ঘরে ব্যাপকভাবে হামলা চালায় এবং ভাংচুর করে। তারা শুধু হামলা আর ভাংচুর করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার বাড়িটি জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে এলাকার কতিপয় ভালো মানুষ বিষয়টি জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের কানে দেন। তিনি এই সংবাদ পাওয়া মাত্র ক্ষিপ্র গতিতে তা প্রতিরোধ করেন এবং যারা এহেন ন্যাক্কারজনক মানবতা বিরোধী কাজের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করেন। তার এই মানবতাবাদী কাজের জন্যে রক্ষা পায় একজন নিরীহ সংখ্যালঘু পরিবারের সহায় সম্পদ আর সাবধান হয়ে যান লুটপাট সৃষ্টিকারীরা।

আওয়ামী সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনিই হাইমচর উপজেলায় কর্মীদের উদ্দেশ্য বলেছেন, আগে নিজের ঘর থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হবে, দলে ঘাপটি মেরে থাকা কোনো অন্যায়কারীকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনিই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনে সাহস যোগাতে তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়ে অভয়বাণী দিয়ে বলেছেন, আপনারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য করুন। আমি সর্বাগ্রে আপনাদের সাথে আছি। জীবন দিয়ে হলেও চাঁদপুরে সম্প্রীতি রক্ষা করবো। কেউ আপনাদের কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না। কথাগুলো যে তিনি কথার কথা বলেই বলেছেন তা কিন্তু নয়, তিনি কথা দিয়ে কথা রেখেছেন।

তেমনটাই জানা গেল চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সস্পাদক চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষের কাছ থেকে। তাঁরা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, আমরা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিককে একজন রাজনীতিবিদ বলেই জানতাম, কিন্তু তিনি যে একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, তা কিন্তু আমাদের জানা ছিলো না। সরকার পতনের পর চাঁদপুরে তাঁর গ্রহণযোগ্য ভূমিকায় আমরা অত্যন্ত খুশি। শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক যদি ঘটনার আলোকে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ না করতেন, তাহলে আমাদের জানমালের অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আমরা ঘটনার আলোকে ব্যবসায়িক নিরাপত্তার তাগিদে তাঁর সাথে তাঁর বাসভবনে দেখা করতে গেলে তিনিসহ বিএনপির অন্য নেতৃবৃন্দ আমাদের সাথে যে সম্মানজনক আচরণ করেছেন, তাতে আমরা খুবই অভিভূত। তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, দাদা! আপনারা শান্তিতে ব্যবসা বাণিজ্য করেন, বসবাস করেন, কেউ আপনাদের কোনো ক্ষতি করবে না।

সত্যিই তিনি কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধানে তিনি পুরাণবাজারে ছুটে গেছেন। দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মিটিং করেছেন। তাঁর সমমনা লোকদের নিয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন এবং ব্যবসায়িক নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করেছেন, যা খুবই প্রশংসনীয়।

হতাশাগ্রস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে ইতোমধ্যে একটি বড় ধরনের ইমেজ তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন, যা বিভিন্ন মহলের সাথে আলোচনা করলে সহজেই অনুমান করা যায়।

একই কথা বললেন চাঁদপুর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর পুরাণবাজার মুরারী মোহন জিউড় মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রিপন সাহা। তিনি সরকার পতনের পরবর্তী সময়ের কথা বলতে গিয়ে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সরকার পতনের পরপর ৫ আগস্ট পুরাণবাজারে একশ্রেণীর মানুষ দলবদ্ধ হয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তাদের দলবদ্ধ মারমুখী আচরণে আমরা অনেকটাই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। অনেকেই প্রাণের ভয়ে নিরাপত্তার অভাবে দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান। বিষয়টি চাঁদপুর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজমুল আলম পাটোয়ারীসহ আমি আমাদেরই অভিভাবক চাঁদপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ- সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়কে অবহিত করি। তাকে আমরা বোঝাতে চেষ্টা করি, বাজারে যদি কোনো অরাজকতা শুরু হয়, তাহলে ব্যবসায়ীগণ ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দিবেন। ফলে আমদানি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে এবং ব্যবসায়িক ভারসাম্য ভেঙ্গে পড়বে। আমাদের কথার ভিত্তিতে সুভাষ চন্দ্র রায় তাৎক্ষণিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সুভাষ বাবুকে আশ্বস্ত করে বলেন, দাদা! আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, আমি থাকতে কারো কোনো ক্ষতি হবে না। সেই প্রেক্ষিতে তিনি পরের দিনই পুরাণবাজার আসেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করেন। তিনি পুরাণবাজারের ব্যবসায়ী সেলিম খান, আনিস বেপারী, নজরুল ইসলাম নজু বেপারী, আসলাম তালুকদারসহ বিএনপির সমমনা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাজারে থাকা বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎপূর্বক তাদেরকে আশ্বস্ত করেন এবং পুরাণবাজারের নতুন রাস্তায় সমাবেশের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তাঁর এই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণের ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি নেমে আসে এবং অপকর্মকারীরা অপকর্ম সাধনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

রিপন সাহার মত অনেকেই শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা জেলা বিএনপির সভাপতির সময়োপযোগী পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা মনে করেন, শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক যদি দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে এই সময়ে কঠোর না হতেন, তাহলে চাঁদপুর জেলা শহরে বড় ধরনের অঘটন ঘটার সম্ভাবনা ছিল। তারা মনে করেন, রাজনীতির পাশাপাশি চাঁদপুরের সম্প্রীতি রক্ষায় শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক আগামীদিনেও তাঁর মানবিক গুণাবলি অক্ষুণ্ণ রাখবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়