শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   অবশেষে চাঁসক সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাছানকে বদলি
  •   নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সড়কের ওপর ভবন নির্মাণের অভিযোগ
  •   বাবা মায়ের উপর ছেলেদের নৃশংসতা ।। বৃদ্ধ বাবার থানায় অভিযোগ
  •   ফিরে এলেন আগের খতিব, নামাজের আগে নাটকীয়তা বায়তুল মোকাররমে
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে টানা বর্ষণে সর্বনাশ

মৎস্যচাষীদের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে

প্রবীর চক্রবর্তী ॥
মৎস্যচাষীদের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে

সোহেল বেপারী। বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে। তিনি একজন সফল মৎস্য চাষী। গত ১০ বছর ধরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করছেন। ২০১৭, ২০১৮ সালে উপজেলা পর্যায়ে এবং ২০২১ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষী হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন। কিন্তু টানা এক সপ্তাহের ভারী বর্ষণে তার মাথায় বাজ পড়ার উপক্রম হয়েছে। তার ১৭টি প্রজেক্টের প্রায় সবগুলোই বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। এই চিত্র শুধু সোহেল বেপারীর নয়, উপজেলার শত শত মৎস্যচাষীর। উপজেলা মৎস্য বিভাগ দিশেহারা মৎস্যচাষীদের মাছ ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, গত সপ্তাহের রোববার রাত থেকে টানা বর্ষণ শুরু হয়, যা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। শুক্রবার বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়েছে। ২৪ আগস্ট শনিবার ৭দিন পর আকাশে সূর্যের দেখা মিললেও সুখবর নেই বষর্ণের কারণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হওয়া ফরিদগঞ্জের লাখ লাখ মানুষের কাছে।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের দুটি স্লুইচ গেইট দিয়ে পানি নামলেও গত দুদিনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পানি কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং কিছু কিছু স্থানে পানি বেড়েছে। উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা জলাবদ্ধতার শিকার।

মৎস্যচাষী সোহেল বেপারী জানান, তিনি গত ১০ বছর ধরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে আসছেন। তার ১৭টি মাছের ঘের রয়েছে। প্রতিটি মাছের ঘের ২ একর থেকে শুরু করে ৫/৬ একর পর্যন্ত বড়। টানা বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যায় তার অন্তত ২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। মাছ ধরে রাখতে দ্বিগুণ টাকা দিয়েও কাজের লোক খুঁজে পাচ্ছেন না। কয়েক লাখ টাকা দিয়ে জাল কিনে এনে বাকি মাছগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। সাধারণত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মাছের ঘেরে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তারা। সেপ্টেম্বর মাস থেকে তারা মাছ ধরা শুরু করেন। এবার আগস্ট মাসেই সব শেষ হয়ে গেছে।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র খলিলুর রহমান এ বছর উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষীর সম্মাননা পেয়েছেন। কুমিরার চরে তিনি মাছের চাষ করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। টানা বর্ষণে মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকাতে দিন-রাত কাজ করছেন। মাছ আছে না ভেসে গেছে কিছুই বুঝতে পারছেন না।

একই কথা কেরোয়া এলাকার কামাল মালের। তিনি জানান, পুকুর-বিল মিলে তিনি প্রায় কয়েক কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ করেছেন। সব ভেসে গেছে। এখন দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড অন্তত পানি নিষ্কাশন করলে তারা ধারদেনাগুলো পরিশোধ করতে পারবেন।

একই দশা রূপসা উত্তরের আনোয়ার হোসেন, পাইকপাড়া দক্ষিণের সাইফুল ইসলাম, পৌর এলাকার কামাল মিজি, মাকসুদুল বাশার বাঁধন, মুকুল পাটওয়ারী, মোরশেদ আলমসহ অনেকের। তারা জানান, একেক মাছের ঘেরে তারা লাখ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন মাছ চাষে। এক সপ্তাহেও পানি কমার লক্ষণ নেই। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

উপজেলা মৎস্য কর্র্মকতা বেলায়েত হোসেন জানান, তারা প্রতিনিয়ত মৎস্যচাষীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। এ বছর উপজেলায় মোট ২৬৯৫ হেক্টর জমিতে মাছের চাষ হচ্ছে। উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৯ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে এবং ৭/৮শত হেক্টর মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়