প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ
চাঁদপুরের কোরআনের পাখি সাব্বির অকালেই ঝরে গেল
ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অকালেই ঝরে গেল কোরআনের পাখি চাঁদপুরের মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন সাব্বির। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় লাভের মাত্র অল্প ক'দিন আগেই ঢাকা মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সাব্বির। গত ১৯ জুলাই বিকেলে মাত্র ১৮ বছর বয়সে এই কোরআনে হাফেজ অকালে ঝরে যাওয়ায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
নারী ছেঁড়া ধন সাব্বিরের শেষ স্মৃতিটুকু তার দুঃখিনী মায়ের কাছে নেই। ধর্মীয় আবেগের কারণে তার রক্তমাখা পাঞ্জাবি, পায়জামা ও টুপি তার কবরের পাশেই মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়।
হাজীগঞ্জের ঐতিহাসিক ফুল ছোঁয়া কওমি মাদ্রাসায় কুরআনের তালিম নেন মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন সাব্বির। হাফেজ হওয়ার পর একই মাদ্রাসায় তিনি মিজান বিভাগে ২বছর পড়াশোনা করেন। কিন্তু আর্থিক অনটনসহ নানান কারণে আর পড়াশোনা এগিয়ে নিতে পারেননি।
দিনমজুর পিতার সাথে সংসারের হাল ধরতে কাজ শিখার উদ্দেশ্যে ঢাকায় পাড়ি জমান। মিরপুর-১-এর চিড়িয়াখানা রোডে ঢাকা মটরস নামে একটি অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে কাজে যোগ দেন। থাকতেন মিরপুর ২ নম্বরে শ্রমজীবী মামা নাসিরের বাসায়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র- জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন পীড়ন তাকে ঘরে আটকে রাখতে পারেননি। ১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরে সাব্বির ছুটে আসেন মিরপুর ১০ নম্বরে বিক্ষোভে অংশ নিতে । বিকেলে হঠাৎ পুলিশের গুলি তার গায়ে বিদ্ধ হয়। তাৎক্ষণিক মাটিতে লুকিয়ে পড়েন সাব্বির। ঘাতকের বুলেট তার পেটের ডান দিক দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
আন্দোলনকারীদের একজন তাকে উদ্ধার করে দ্রুত নিয়ে যান মিরপুর হার্ট ফাউন্ডেশনে। কর্মত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাব্বিরের সাথে থাকা মোবাইল নাম্বার থেকে তার মামা নাসিরকে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর খবর জানানো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসেন মামা নাসির। হতভাগা ভাগিনার লাশ উদ্ধার করে ঐদিন রাতেই চাঁদপুরে নিয়ে আসেন।
পরদিন ২০ জুলাই সকালে চাঁদপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডস্থ রঘুনাথপুর গ্রামে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন রঘুনাথপুর বাজার মসজিদের ইমাম মুফতি তানিম আহমেদ । এ সময় তার রক্তমাখা জামা কাপড় কবরের পাশেই মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়।
রঘুনাথপুর গ্রামের রাজা বাড়ির বাসিন্দা দিনমজুর মোঃ জসিম উদ্দিন রাজার দুই ছেলের মধ্যে সাব্বির বড়। ছোট ছেলে শাফায়াত স্থানীয় রঘুনাথপুর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন।
সন্তানের লাশ কাঁধে নেয়া হতভাগা পিতা জসিমের স্বপ্ন ছিল তার ছেলে অনেক বড় ইসলামিক চিন্তাবিদ হবে। দেশে-বিদেশে কোরআনের বাণী ছড়িয়ে দিবে। কিন্তু ঘাতকের বুলেট তার স্বপ্নকে চুরমার করে দিল। হতভাগা পিতার দাবি তার ছেলেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা প্রদান করা হোক। তার ছেলের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা এসেছে, তাতে যেন দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে এমন কামনা তার।
নারী ছেঁড়া ধন ছেলেকে হারিয়ে দুখিনী মা শাহনাজ বেগম পাগলপ্রায়। গত ২০ দিনেও তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। পরিবারের লোকজনের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। রাত বিরাতে সাব্বির আসছে বলে চিৎকার দিয়ে ঘরের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ছেলের পুরনো জামা কাপড় জড়িয়ে বিলাপ করছেন। স্থানীয় চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেও তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। তাই প্রায় সময় ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে তাকে অচেতন করে রাখার চেষ্টা করছেন।
চাচা মোঃ তানভীর রাজা জানান, আমার বড় ভাইয়ের ছেলে সাব্বিরকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। সে অনেক বড় মাওলানা হবে। মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিবে। তিনি মহান আল্লাহর কাছে ঘাতকদের শাস্তি দাবি করেন।
মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন সাব্বিরের বৃদ্ধ দাদা দুদু রাজা বর্তমান সরকারের কাছে তার নাতির হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।