প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
গ্রাহকের পৌনে দুই কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক ম্যানেজার উধাও
ঈদের দুদিন আগে উধাও হয়ে গেছেন পূবালী ব্যাংক লিঃ চাঁদপুর নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী। যাবার সময় নিয়ে গেছেন এক গ্রাহকের ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। আর কোনো গ্রাহকের টাকা নিয়েছেন কিনা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছে।
জানা গেছে, ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দীর গ্রামের বাড়ি কচুয়া উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে। তিনি সপরিবারে দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে অনেকে ধারণা করছেন। তিনি চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পূবালী ব্যাংক চাঁদপুর নতুন বাজার শাখায় সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হন গত ৮ এপ্রিল। ৯ এপ্রিল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
আকবর হোসেন লিটন নামের এক গ্রাহকের ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ৮ এপ্রিল ব্যাংকে জামা দেয়ার কথা থাকলেও ওই টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন ওই ব্যাংক ম্যানেজার।
আকবর হোসেন লিটন বলেন, আমার টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন ম্যানেজার। তিনি যে চলে যাবেন তা তো আর আমি জানি না। তিনি বৃহস্পতিবার আমাকে রসিদ দেয়ার কথা। কিন্তু তিনি আর সেদিন অফিসে আসেন নি। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তার সাথে আর দেখা হয়নি। একজন ব্যাংক ম্যানেজারের এমন উধাও হওয়ার খবরে গ্রাহকদের মাঝে তৈরি হয় আতঙ্ক।
আকবর হোসেনের নিকটাত্মীয় অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দায়দায়িত্ব না এড়িয়ে যেহেতু কর্মকর্তা তাদের, তারা এই বিষয়ে ভূমিকা নিতে পারে। যেভাবে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে সে রকম কার্যক্রম গ্রহণ করাই জরুরি। না হলে পূবালী ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ আর এ ব্যাংকে ব্যাংকিং করতে চাইবে না। শুধু এ ব্যাংকই নয়, টোটাল ব্যাংক খাতেই একটা প্রভাব পড়বে, আস্থাহীনতা তৈরি হবে। যদি ব্যাংক ম্যানেজারই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়, তাহলে মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখবে কীভাবে?
এদিকে উধাও হয়ে যাওয়া ব্যাংক ম্যানেজার শ্রীকান্ত নন্দীর জায়গায় নতুন ম্যানেজার দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বর্তমান ম্যানেজার মোঃ হুমায়ুন কবির বলেছেন, ওই ম্যানেজার না আসাতে আমাকে এই ব্যাংকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। ইন্টার্নাল কোনো ধরনের অনিয়ম হয়েছে কিনা তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে ম্যানেজারকে না পাওয়ায় থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছে।
থানায় সাধারণ ডায়েরি করা মোঃ হুমায়ন কবীর বলেন, গত ৪ এপ্রিল বিকেল ৩ টার সময় শ্রীকান্ত নন্দী নতুন বাজারের ব্যাংক কার্যালয় হতে বাহির হয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে তার মুঠোফোনে বেশ কয়েক বার যোগযোগ করার চেষ্টা করলে নাম্বারটি বন্ধ পাই। আমরা সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করেও তার কোনো সন্ধান পাই নি। পরে বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। জিডি নং-৫৪০, তারিখণ্ড৯ এপ্রিল, ২০২৪।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শেখ মুহসীন আলম বলেন, আমরা বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শ্রীকান্ত নন্দীকে খুঁজে পেতে আইনগত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
এ অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।