প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
‘জাটকা এবং মা ইলিশের পাশে, আমরা আছি প্রতিটি নিঃশ্বাসে’ এ প্রেিতপাদ্যে চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের ১৫তম জাতীয় ইলিশ উৎসবের ৪র্থ দিন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার ৪র্থ দিনের গোলটেবিল বৈঠকে মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম।
এ সময় তিনি বলেন, ইলিশ মাছ মূলত নদী আর সাগরে বাসযোগ্য প্রাণী। এদের লালন-পালনে কোনো কিছু করতে হয় না, খাবার দিতে হয় না, ঔষধ দিতে হয় না, তারপরও তাদের দাম বেশি। তারপরও তাদের জন্যে কিছু নিয়মের প্রয়োজন রয়েছে। তাই সার্বিকভাবে দেখভালের দায়িত্ব সরকার দিয়েছে মৎস্য ও প্রণি সম্পদ বিভাগকে। আমরা শুধু আইন প্রয়োগ করার কাজ করে থাকি। তিনি আরো বলেন, আমি ভোলার পুলিশ সুপার ছিলাম, সেখানেও ইলিশের দাম বেশি। চাঁদপুরে এসে দেখি এখানে ইলিশের দাম আরো বেশি। এদিকে ভোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মাছ ব্যবসায়ীরা চাঁদপুরে এনে ইলিশ বিক্রি করলে কেজি প্রতি ২শ’ টাকা বেশি পায়। এ বছর নাকি ইলিশের আকাল চলছে। তিনি বলেন, বিশ্বের মধ্যে ১২টি দেশে ইলিশ পাওয়া যায়। অথচ বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ এবং চাহিদা সারাবিশ্বে রয়েছে। বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে ইলিশের উৎপাদন কমছে। আগে নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। এখন কেনো তা পাওয়া যায় না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকা সহ নৌযান বেশি চলছে, তার কারণেও নদীতে ইলিশ কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, চাঁদপুর থেকে যারা ইলিশ কিনছেন তারা চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ পাচ্ছেন না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী প্রতারণা করছে। অনলাইনে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ কোনো কোনো ক্রেতা মূল্য পরিশোধের পরও বিক্রেতার নিকট থেকে ইলিশ পাচ্ছে না বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে চাঁদপুর যে জন্যে ব্র্যান্ডিং হয়েছে তার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাঁদপুরের ব্র্যান্ডিং যাতে নষ্ট না হয় সেজন্যে কাজ করবো।
বৈঠকে অংশ নিয়ে আলোচকের বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় সচেতনতার বিকল্প নেই। জেলা পুলিশ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অভিযানের সময় মাছ ধরার নৌকাগুলো প্রশাসনের আওতায় আনা গেলে ইলিশ বেশি রক্ষা পাওয়ার ব্যাপারে চতুরঙ্গের প্রস্তাবনার সাথে আমি সহমত পোষণ করছি।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইলিশ উৎসবের আহ্বায়ক রোটাঃ কাজী শাহাদাত পিএইচএফ। তিনি বলেন, এটি মূলত ইলিশ উৎসব নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। নদী দূষণ আর নাব্যতার অভাবে আগের মতো চাঁদপুরে ইলিশের প্রাচুর্য নেই। ইলিশের আকাল চলছে। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি ও দূষণমুক্ত করতে পারলে হয়তো চাঁদপুরের নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য ফিরে আসতে পারে।
এছাড়াও বৈঠকে আলোচকের বক্তব্য রাখেন কোস্টগার্ড চাঁদপুরের চীফ পেটি অফিসার জসীম উদ্দীন ও মৎস্যজীবী নেতা সাংবাদিক শাহআলম মল্লিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চতুরঙ্গের আজীবন সদস্য অ্যাডঃ ইয়াছিন আরাফাত ইকরাম। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চতুরঙ্গের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার। বৈঠকের প্রণবন্ত সঞ্চালনায় ছিলেন ইলিশ উৎসবের রূপকার হারুন আল রশীদ।
বিকেলে প্রদর্শনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পক্ষ দলে ছিলো ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বাবুরহাট এবং বিপক্ষ দলে ছিলো বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজ। সভাপ্রধান ছিলেন চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রোটাঃ কাজী শাহাদাত।
নৃত্য পরিবেশন করেন চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের নৃত্য বিভাগের শিল্পীরা। এছাড়া চাঁদপুর নৃত্যধারা ও খাগড়াছড়ির ককবরক ডান্স একাডেমীর নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। তারপর সাধনা সরকার অনুর সংগীত এবং সবশেষে পুনম মিত্র ও বিপাশা ধর বীণার সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চতুর্থ দিনের ইলিশ উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। তাছাড়া আরো সংগীত পরিবেশন করেন শুভ্র রক্ষিত, রাজীব চৌধুরী, মুন্না ঘোষ, প্লাবন ভট্টাচার্য্য, এমএইচ বাতেনসহ অন্য শিল্পীরা।