বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

হঠাৎ করে ফরিদগঞ্জে বেড়ে গেছে চুরির ঘটনা ॥ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে জনসাধারণের গভীর উদ্বেগ
নূরুল ইসলাম ফরহাদ ॥

চুরি করবি কর, তাই বলে সাংবাদিকের বাসায়? শুধু কি সাংবাদিক? নাহ; চোরের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ইউপি সদস্যসহ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও। সমানতালে চুরি হচ্ছে বাসা-বাড়ি এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। স্বর্ণালঙ্কার, গাড়ি এমনকি গবাদি পশুও চুরি হচ্ছে। এ যেন চোরদের অভয়ারণ্য! চোর চক্রটি পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে অব্যাহতভাবে চুরি করেই যাচ্ছে। সচেতনমহলের ধারণা, এটা হলো চোর-পুলিশ খেলা। আর এই খেলায় সাধারণ মানুষ অসহায় দর্শক।

ফরিদগঞ্জে হঠাৎ করেই চুরি বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে ঘুমাতে যান মানুষ। এই বুঝি চোর তাদের অজ্ঞান করে ফেলবে। এই বুঝি তার প্রিয় বাইকটি নিয়ে যাবে, উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম অটোরিকশাটি নিয়ে যাবে, লাখ টাকার গরুটি নিয়ে যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে মুরগির খোয়াড়ে আর একটিও মুরগি নেই, কবুতরের খোয়াড় খালি। গাছের সমস্ত নারিকেল-সুপারি চুরি হয়ে গেছে। এমন দুঃচিন্তা নিয়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যেতে হয় সাধারণ মানুষকে। কবে যাবে এ দুশ্চিন্তা? সাধারণ মানুষ কবে ঘুমাতে পারবে প্রশান্তির ঘুম? এ প্রশ্নের উত্তর তাদের জানা নেই।

হঠাৎ করে কেন বেড়ে গেলো চুরি? এমন প্রশ্নের জবাবে বেরিয়ে আসে অনেক তাত্ত্বিক কথা। নানান জনের নানান ভাবনা। কেউ কেউ বলছেন অর্থনীতির চরম বৈষম্য, আবার কেউ বলছেন বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, আবার কেউ বলছেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি, কেউ বলছেন মাদকের ভয়াবহতা, সাথে আছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতার ঘাটতি।

গত ক’মাসের চুরির ঘটনা দেখলে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ফরিদগঞ্জ হচ্ছে চোরদের অভয়ারণ্য। ধারাবাহিকভাবে একের পর এক চুরি হচ্ছে আর চোরের দলটি থেকে যাচ্ছে একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে। চোরদের হাতে যেন সোনার কাঠি আর রূপার কাঠি। পুলিশ দেখলেই তারা অদৃশ্য হয়ে যায়। গত ক’মাসে প্রায় ৩০-৩৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। হয়রানি এড়াতে অধিকাংশ ঘটনার অভিযোগ, সাধারণ ডায়েরি বা মামলা হয় না। রাত নামলেই কোথাও না কোথাও ঘটছে চুরি। খোয়া যাচ্ছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল।

চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব আলোনিয়া গ্রামে আবুল হোসেন গাজীর বড় ছেলের বসত ঘরে চুরির ঘটনা ঘটে। এর ক’দিন পূর্বে রহিম গাজীর বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এর আগে মনসুর বেপারীর ছেলে সাবেক গ্রাম পুলিশ ফরিদ হোসেনের ঘরে সিঁধ কেটে চুরি সংঘটিত হয়েছে। আলোনিয়া গুদারা ঘাট এলাকায় পল্লী চিকিৎসক রিপন মজুমদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি হয়েছে। একই রাতে রতন মজুমদারের মুদি দোকানে চুরি হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে একই গ্রামের মৃত মুকবুল বেপারীর ছেলে হাছান বেপারীর ঘরে সিঁধ কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। পরের দিন রাতে তসলিম শেখের ঘরে সিঁধ কেটে চুরি হয়। একই সপ্তাহে একই গ্রামের মৃত জহিরুল ইসলাম পাটওয়ারীর ছেলে রুবেল হোসেন পাটওয়ারীর নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের রডের বান্ডিল চুরির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটেই চলছে।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মিরাজ বলেন, সম্প্রতি অনেক চুরির ঘটনা ঘটেছে। যথাযথ প্রমাণ না থাকায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের সহযোগিতা নিয়ে চুরি রোধকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের গাব্দেরগাঁও গ্রামের খতেজা বেগমের ২টি গরু, সর্দার পাড়ার বেপারী বাড়ির নূরুল হকের ২টি গরু ও মোঃ মিলনের ১টি গরু একই রাতে চুরি হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত খতেজা বেগম বলেন, আমার স্বামী অসুস্থাবস্থায় বাসায় পড়ে আছে। গরুর দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার গরুগুলোই সম্বল ছিলো। ক্ষতিগ্রস্ত নূরুল হক বলেন, রাত ২টা পর্যন্ত আমার গরুগুলো গোয়ালে ছিলো, ভোররাতে উঠে দেখি নেই।

রূপসা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কাউসারুল আলম কামরুল বলেন, ইদানিং চুরির প্রবণতা বেড়ে গেছে। মানুষকে সচেতন করতে আমি গ্রাম পুলিশ সহ প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের নিয়ে বৈঠক করবো। ৫টি গরু চুরি হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

ফরিদগঞ্জে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এক সাংবাদিকের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি স্থানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উপজেলা সদরের ফরিদগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের আলমিরা ভেঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে যায় বলে দাবি করছেন প্রধান শিক্ষিকা। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের জানালার গ্রীল কেটে চোরের দল ভিতরে প্রবেশ করে তিনটি স্টিলের আলমিরা এবং টেবিলের ড্রয়ার ভেঙ্গে তছনছ করে। একই রাতে পাশর্^বর্তী ফরিদগঞ্জ বালিকা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও সিঁড়ির কক্ষের জানালার গ্রীল কেটে চোরের দল ভিতরে প্রবেশ করে। ১১ আগস্ট রাতে উপজেলার লতিফগঞ্জ মাদ্রাসাতেও একই কায়দায় চুরি হয়েছে। চোরের দল মাদ্রাসার আলমিরায় থাকা প্রায় তিন হাজার টাকা ও শিক্ষার্থীদের তিনটি ট্যাব নিয়ে যায়। একই শনিবার দিবাগত রাতে দৈনিক আমার সংবাদের অনলাইন এডিটর আতাউর রহমান সোহাগের গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালি গ্রামের পণ্ডিত বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, দুপুরের খাবারের সাথে কে বা কারা নেশা জাতীয় কিছু মিশিয়ে চুরির চেষ্টা করে।

১৭ আগস্ট গভীর রাতে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাহাপুর গ্রামের তালুকদার (তালগইচ্ছা) বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। মোঃ ইমাম হোসেন তার পরিবার নিয়ে যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ঠিক তখনই তাদের ঘরের বেড়া কেটে প্রবেশ করে চোর চক্র। ইমাম হোসেনের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের কানের দুল নেয়ার সময় সে জেগে উঠে চিৎকার করতে থাকে। তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন সেখানে ছুটে আসেন। পরে দেখা যায় ইমাম হোসেনের স্ত্রীর কানের দুল এবং গলার চেইন নেই। মেয়ে জান্নাতের কানের দুল নেই।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের কাওনিয়া গ্রামে একই বাড়িতে ৫ মাসের ব্যবধানে দুইবার চুরি হয়েছে। ধারাবাহিক এমন চুরির ঘটনায় পরিবারটি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। দুটি ঘটনায়ই থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। ১৪ আগস্ট লাউতলী মুন্সিবাড়ির মোঃ যোবায়ের আহম্মদ সাকিবের মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। পরদিন সে ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ১৮ আগস্ট রূপসা বাজারে স্বর্ণের দোকানে চুরি হয়। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের পোঁয়া গ্রামের মোঃ বিল্লাল হোসেনের ৪টি গরু চুরি হয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের আলমগীর হোসেন কাজীর আয়শা ডেইরি ফার্ম থেকে ৮টি গরু চুরি হয়। ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের সন্তোষপুর গাজী বাড়ির আব্দুর রহমানের ২টি গরু চুরি হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌলী মন্ডল বলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। উপজেলার উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা পাওয়ার আশা রাখি।

ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি যখন মতলবে ছিলাম তখন শুনেছি এ উপজেলায় প্রচুর চুরির ঘটনা ঘটছে। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো এই উপজেলার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। চোর চক্রকে ধরে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। তবে এক্ষেত্রে সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা লাগবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়