বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

হাজীগঞ্জে জোড়া খুনে নিহতদের দাহ সম্পন্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥

হাজীগঞ্জ উপজেলার ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের বড়কুল গ্রামের সতীনাথ বাড়ির (পাউন্না) জোড়া খুনের ঘটনায় নিহতদের দাহ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে জোড়া খুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চাঁদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষজন তাদের নিরাপত্তা দাবিসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

জেলা ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারসহ তাদেরকে আইনের আওতায় এনে তাদের ফাঁসি দাবি করেন। এ সময় ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী (পিপি)সহ নেতৃবৃন্দ বলেন, যাদেরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে তারা অত্যন্ত সহজ সরল ও সহায় সম্বলহীন। এলাকার মানুষের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের কোনো শত্রু থাকার কথা নয়। তারা অন্যের বাড়ি পাহারা দিয়ে ও লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। এমন একটি অসহায় পরিবারকে হত্যার উদ্দেশ্য কী তা পুলিশ প্রশাসনকে খুঁজে বের করতে হবে।

সকল অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক উল্লেখ করে তারা বলেন, সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠ যে বা যারাই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে অপরাধের মাত্রা কমে আসবে। বিশেষ করে নির্বাচনের পূর্বে ও পরে একটি মহল সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা ও নির্যাতন করে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে। আপনারা (সনাতন ধর্মাবলম্বী) মনোবল হারাবেন না। আমরা আপনাদের পাশে আছি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যদি অবিলম্বে এই জোড়া খুনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ এলাকায় বসবাসরত সকল মানুষজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করবে। নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা প্রকাশপূর্বক আরো বলেন, দেশে যখনই নির্বাচন আসে তার আগে বা পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতনের শিকার হন। যাতে তারা আতঙ্কিত হয়ে ভোট কেন্দ্রে না যায়। তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যাতে আর কোনোভাবেই হামলা, নির্যাতন, অন্যায়, অবিচারের সম্মুখীনসহ আতঙ্কিত না হন তার জন্যে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে নেতৃবৃন্দ দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ মৃত উত্তম বর্মন ও তার স্ত্রী কাজল রাণী বর্মনের কন্যা রিনাসহ তার আত্মীয় স্বজনকে সান্ত¡না প্রদান করেন এবং মৃতদের আত্মার সদ্গতি কামনায় তাদের শ্রাদ্ধ শান্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে নেতৃবৃন্দের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি তপন সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা, হাজীগঞ্জ উপজেলা এনএসআই ফিল্ড অফিসার সুজত কান্তি তালুকদার, হাজীগঞ্জ উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন, শহর শাখার সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক গৌতম সাহা, হাজীগঞ্জ রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ অখড়ার সভাপতি দিলীপ কুমার সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার পাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিধু ভূষণ রায় সুজন, সাধারণ সম্পাদক রতন সরকার প্রমুখ।

এদিকে উত্তম বর্মন ও স্ত্রী কাজলী বর্মনের লাশের ময়না তদন্ত শেষে শনিবার দুপুরে নিহত দম্পতির বড় মেয়ে বীনা বর্মন লাশ গ্রহণ করেছে। এর পরেই হাজীগঞ্জ পৌর শ্মশানঘাটে নিহত স্বামী-স্ত্রীর দাহ সম্পন্ন করা হয়।

সরজমিনে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, পুরো বাড়িতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সারাদিন থেমে থেমে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সয়স্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তিসহ হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের শক্তিশালী টিম তদন্তে গেছে বলে দেখা গেছে। এ দিকে এ ঘটনার দিন শেষে শুক্রবার দিনগত রাতে রড়কুল এলাকা থেকে বেশ ক’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করেছে বলে স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে রাতের কোনো এক সময় বড়কুল গ্রামের কালা সিতা বাড়িতে দুর্বৃত্তরা জানালার গ্রীল কেটে দুলাল সাহার ঘরে প্রবেশ করে উত্তম চন্দ্র বর্মন তুফান (৭০) ও তার স্ত্রী কাজলী রাণী বর্মনকে (৫৫) শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শুক্রবার ভোরে প্রতিবেশী এক নারী ফুল তুলতে গিয়ে ঐ দম্পতির বসতঘরের দরজা খোলা দেখে ঘরে ঢুকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাদের লাশ দেখতে পায়।

জেলা নেতৃবৃন্দ হাজীগঞ্জ রাজা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউড় আখড়া, হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবা মিশন ও পরিদর্শন পূর্বক কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য মতবিনিময় করেন এবং আগামী ২২ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলা শহরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী সরকারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দেয়া নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দাবিতে অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার দাবি জানান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়