প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
৫ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ইতলী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে লীজ নেয়া দিঘিতে জোরপূর্বক মাছ ধরতে যাওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ সরোয়ার হোসেন বাদী হয়ে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, তার নিকটাত্মীয় মুশফিকুর রহমান ইমু এবং তার পিতা লোকমান দর্জি সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গত রোববার চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এই দিঘির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এলাকায় এখন মুখরোচক আলোচনা হচ্ছে যে, ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিশাল দিঘি তুমি আসলে কার?
পুলিশ সুপারের কাছে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ১৯ বছর যাবৎ একটানা উক্ত দিঘিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মালিক পক্ষ মিলে মাছ চাষ করে আসছিলো। বর্তমানে ওই দিঘিতে চাষকৃত মাছ বড় হওয়ায় এলাকারই কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল ও স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের বংশধর উক্ত দিঘিতে মাছ চাষে বাধা ও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তারা দিঘিতে জাল ফেলে। এ খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থ’লে হাজির হওয়ার পর এলাকাবাসীর প্রতিরোধের কারণে দিঘি থেকে মাছ ধরতে না পারলেও এলাকায় ভাংচুর করে প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও ওই দিঘির কিয়দংশের মালিক পক্ষের ৩ জন যথাক্রমে শিল্পপতি ও সমাজ সেবক মোঃ বশির উল্লা, তাফাজ্জল হোসেন ও আবু সাহেদ পাটওয়ারীসহ উভয় পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে দিঘিতে থাকা সরকারি সম্পত্তি ৭ একর ২৫ শতাংশ সরকারিভাবে ইজারা নেন। প্রতিবছর মালিকপক্ষ মিলে সরকারের কোষাগারে দিঘির ইজারা নবায়ন হিসেবে ৫৮ হাজার টাকা দিচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। বর্তমানে ইজারা নেয়া বাবুর দিঘিতে মাছ চাষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হঠাৎ করেই এলাকারই একটি তৃতীয় পক্ষের উত্থানে দ্বন্দ্ব সংঘাতে পরিবেশ উক্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নিকটাত্মীয় মুশফিকুর রহমান ইমুর নেতৃত্বে একদল দিঘির পাড়ে এসে মাছ ধরার প্রস্তুতি নেয়। ইমুর দাবি, সে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ সহিদুল্লার কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে মৌখিকভাবে ওই দিঘি সাব লীজ নিয়ে মাছ করে আসছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উক্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও সংঘাতের পর এক পর্যায়ে পুলিশ এসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দিঘির পাড়ে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান উপস্থিত ছিলেন বলে ডেপুটি কমান্ডার সারোয়ার হোসেন জানান।
দিঘির মাছ চাষের আয়ের অংশ মালিক পক্ষ এলাকার এতিমখানা ও বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যয় করেন। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যয় করে থাকেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত মুশফিুকর রহমান ইমু বলেন, আমি কমান্ডার সহিদুল্লা তফাদারের হাতে ৩ লাখ টাকা দিয়ে দিঘিটি ইজারা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে মাছ চাষ করে আসছি। সাব লীজের সপক্ষে কোনো প্রমাণাদি আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইমু আরো বলেন, আসলে মৌখিকভাবে সাব লীজ দেয়া হয়েছে। তবে টাকা দেয়া ও সাবলীজ নেয়ার সপক্ষে কোনো প্রমাণাদি তার কাছে নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, কী উদ্দেশ্যে আমাকে অভিযুক্ত করা হলো তা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
এ নিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ সহিদুল্লা তফাদার বলেন, সাব লীজ দেয়ার নামে মুশফিকুর রহমানের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি ডাহা মিথ্যা প্রচারমাত্র বলে আমি মনে করি। সরকারিভাবে উক্ত দিঘি আমরা মালিক পক্ষ মিলে ইজারা নিয়ে ১৯ বছর যাবৎ মাছ চাষ করে আসছি। দিঘিতে মাছ চাষসহ এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ওই এলাকারই বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ দেলোয়ারকে।
পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগকারী সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ সরোয়ার বলেন, দিঘিকে কেন্দ্র করে আমাদের দেয়া অভিযোগের কোনো সঠিক সুরাহা না পেলে বিষয়টি আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নিতে বাধ্য হবো।