প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
![ফরিদগঞ্জ মডেল মসজিদে বাড়ছে মুসল্লি সংখ্যা](/assets/news_photos/2023/04/09/image-31682.jpg)
গত ১৬ মার্চ সারাদেশের ৫০টি মডেল মসজিদের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন ফরিদগঞ্জ মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। উদ্বোধনের পর থেকে এ মসজিদে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত, জুমার নামাজ এবং তারাবীহ নামাজ আদায় হচ্ছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো ভবনের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে না পারায় এবং আসবাবপত্র না আসায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
মসজিদটিতে শুক্রবার (৭ এপ্রিল) জুমার নামাজে সহ¯্রাধিক পুরুষ ও আলাদা কক্ষে দুই শতাধিক নারী মুসল্লিকে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। গত ১৬ মার্চ মসজিদটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে উৎসাহী ও কৌতূহলী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মসজিদে প্রথম নামাজ, প্রথম জুমা এবং প্রথম তারাবীতে মুসল্লি ছিলো চোখে পড়ার মতো। প্রথম তারাবীহ নামাজ আদায় করে মোটরসাইকেলযোগে ফেরার পথে সজিব ও আশিক নামে দুই বন্ধু সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর মসজিদের ইমাম এভাবে দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিদের না আসার জন্যে অনুরোধ করেন।
মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইমাম ও খতিব মাওলানা মাকসুদুল আমিন জানান, গত ১৬ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মসজিদটি উদ্বোধনের পর থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে অদ্যাবধি কোনো আসবাবপত্র পাইনি। মাত্র একটি কম্পিউটারই প্রদান করা হয়েছে। বাকি যা আসবাবপত্র রয়েছে তা সবই আমার নিজের। এখনো বেশ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। ঠিকাদার এখানো ভবনটি হস্তান্তর করেননি। তাই এই ক’দিনে ২৪ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল আসায় ঠিকাদার কিছুটা অসস্তুষ্ট। মসজিদে বেশ কিছু জিনিসপত্রাদি প্রয়োজন। ইউএনও মহোদয়কে বলেছি, তিনি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পরিমাণ ও মূল্য জানতে চেয়েছেন। আমি সেমতে প্রস্তুত করছি। তিনি ছুটি থেকে আসলেই প্রদান করবো।
তিনি জানান, মসজিদটি উদ্বোধনের পর থেকেই মুসল্লিরা আসছেন। অনেক সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় না দিয়েই নামাজ আদায় করে গেছেন। প্রতিদিন মুসল্লি সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিটি জুমার নামাজের সময়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। শুক্রবারের জুমার সময়ে যানবাহনে নিচতলা ছাড়াও এআর উচ্চ বিদ্যালয়টি মাঠটি পরিপূর্ণ হয়ে যায়। উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নারীরাও মসজিদে নামাজ পড়তে আসছেন। এখন নিয়মিত গড়ে ৪০/৫০ জন নারী নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন। রাতে তারাবীহ নামাজের সময় নামাজ আদায় বাদ রেখে কিছু তরুণ সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঠে এদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, এতো সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি রক্ষার দায়িত্ব সকলের হলেও মসজিদের আলোকসজ্জার বেশ কিছু লাইট চুরি হয়েছে ও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এতে রাতের দৃশ্যমান আলোকসজ্জা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, তিনি ও একজন মোয়াজ্জিন এবং দুজন খাদেম এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত। এছাড়া ইসলামী ফাউন্ডেশনের দুজন কর্মকর্তা এখানে কর্মরত। আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রাদি চলে আসলে অবশ্যই মসজিদটি আরো সুন্দর ও ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠবে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এই ধরনের আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ পেয়ে মুসল্লিরা বেশ খুশি। নামাজ শেষে দেখা গেছে সেলফি তুলতে অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকের ফেসবুকওয়াল ভরে গেছে মসজিদের সামনে, ভেতরে তোলা নানা ছবি ও ভিডিওতে।
মসজিদের নিয়মিত নামাজের মুসল্লি মোঃ মাসুদ আলম (৪০) জানান, মসজিদটিতে প্রবেশ করলেই মসজিদের সৌন্দর্যে হৃদয় শীতল হয়ে যায় তার। পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে তিনি মক্কাতুল মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারার মসজিদের যে অবয়ব প্রত্যক্ষ করেছিলেন, ঠিক সে রকম দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে সাজানো হয়েছে মসজিদটিকে বলে দাবি করেন তিনি। এজন্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
মসজিদের নিয়মিত নারী নামাজি আমেনা বেগম (৪৫) জানান, মসজিদ উদ্বোধনের পর থেকেই নিয়মিত জুমার নামাজ এবং রমজান মাসে তারাবীহ নামাজ আদায় করে আসছেন তিনি। ইতোপূর্বে দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়েছে তার। মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পেরে তিনি বিমোহিত।
মসজিদ দেখতে আসা বেশ ক’জন মুসল্লি দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি নির্মাণে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে স্থান নির্বাচনের জন্যে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করা মসজিদটি এভাবে উপজেলা পরিষদের পেছনে নির্মাণ না করে আঞ্চলিক মহাসড়ক বা জনবহুল কোনো সড়কের পাশে নির্মাণ করা গেলে ভালো হতো। দেশের প্রায় অনেক স্থানেই সেভাবেই মডেল মসজিদ নির্মাণ হলেও ফরিদগঞ্জে কেনো ব্যতিক্রম হলো তা নিরীক্ষার বিষয় রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধির সেই সময়ে ভূমিকা কী ছিলো তা দেখার বিষয়।
প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, তার তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। মসজিদের কাজ শেষ, এবার উপরের কর্মকর্তাদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে হস্তান্তরের অপেক্ষায় তিনি। হস্তান্তর করেই তিনি প্রাণ খুলে এক পলক নজর বুলিয়ে দেখবেন মসজিদটিকে।
মসজিদের নির্মাণকারী ঠিকাদার মোঃ আব্দুল আজিজ জানান, মেসার্স আজিজ ব্রাদার্স তার মালিকানা লাইসেন্সে মসজিদটির কাজ করিয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই মসজিদটি হস্তান্তর করবেন বলে প্রস্তুতি ছিলো তার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কাছিয়াড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবিদুর রেজা পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন স্থানে রয়েছে এই অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তিনতলাবিশিষ্ট ভবন। ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ও সংস্কৃতি বিকাশে সারা দেশের ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের অংশ হিসেবে ফরিদগঞ্জে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধান করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগের সহায়তায় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজিজ ব্রাদার্স মসজিদটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রায় ৪৩ শতাংশ জায়গার ওপর ১২ হাজার ৫শ’ ৪৭ বর্গফুট আয়তনে নির্মাণ করা হয়েছে এ ভবন। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭২ লাখ ২৫ হাজার ১শ’ ৩৪ টাকা। ভবনটির নিচতলায় রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্কিং, প্রতিবন্ধীদের জন্যে সেন্টার ও নামাজের সুব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইসলামিক বুক স্টোর কার্যালয় ও মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে প্রধান নামাজ ঘর। এছাড়া সম্মেলন কক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস কক্ষ এবং উন্মুক্ত জায়গা রয়েছে, যেখানে ঈদের নামাজ পড়া হবে।
তৃতীয় তলায় রয়েছে পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধার কক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রিসার্চ সেন্টার, ইসলামিক লাইব্রেরি, খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের থাকার পৃথক ব্যবস্থা, হিফজ ও মক্তবখানা। রয়েছে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা অজুখানার ব্যবস্থা এবং পৃথক নামাজের কক্ষ। এছাড়াও অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্যে আলাদা সিঁড়ি এবং শিশুদের জন্যে শিক্ষাসুবিধা থাকছে। এই মডেল মসজিদের প্রায় ৯৫ ফুট উঁচু একটি মিনার রয়েছে।