বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে একটি আবাসিক এলাকায় চুরি অব্যাহত ॥ অপরাধী কে?
এম. কে. মানিক পাঠান ॥

ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ বাজারের সাথে একটি আবাসিক এলাকায় অব্যাহত চুরির ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ ও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধারাবাহিক চুরির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ওই এলাকা থেকে একটি নতুন মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। চুরির এ ঘটনাটি ঘটেছে প্রবাসী দুলাল মিজির পাঁচতলা ভবনের নিচতলা থেকে। ওই এলাকায় ১০-১২ বছরে অন্তত ৩০টি চুরি সংঘটিত হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা চুরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

এলাকাটি ফরিদগঞ্জ থানা (পুলিশ স্টেশন) সংলগ্ন পশ্চিম পাশে চিটু বেপারীর মিল এলাকায়। চুরির শিকারের মধ্যে পুলিশের এসআই, এএসআই, কনস্টেবলও রয়েছেন। কিন্তু কোনো একটি ঘটনায়ও অপরাধী শনাক্ত হয়নি, বরং অজ্ঞাত অপরাধীরা নিরাপদে অপরাধ অব্যাহত রেখেছে। এলাকায় অন্যান্য অপরাধও সংঘটিত হয়েছে বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ফরিদগঞ্জ (দঃ) ইউনিয়নের পাঁয়া গ্রামের শ্রী কৃষ্ণের ছেলে নারায়ণ চন্দ্র দাস (৩১) একটি ওষুধ কোম্পানীতে চাকরি করেন। অপর ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত উজ্জ্বল ভাড়া থাকেন ঘটনাস্থল প্রবাসী দুলাল মিজির পাঁচতলা ভবনে। নারায়ণ চন্দ্র দাস ডিসকভার মোটারসাইকেল চালিয়ে তার বাসায় যান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা প্রায় ৬ টায়। মোটরসাইকেলটি ভবনের নিচতলার পার্কিংয়ে রেখে প্রায় দুই ঘন্টা পর নিচে নেমে দেখেন তার মোটরসাইকেল নেই। খবর পেয়ে বাড়ির মালিকের ছেলে মাসুদ মিজি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় উপস্থিত হন। তিনি সিসি ক্যামেরা ঘেঁটে ফুটেজ বের করতে পারেন নি। তিনি বলেন, তার মনিটরে সমস্যা আছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিজ্ঞ লোক নিয়ে ঠিক করে দেখা হবে। তবে পাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরায় একজনকে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। যে ব্যক্তি নিয়ে যাচ্ছেন তার গায়ে কমলা রংয়ের টিশার্ট পরা ছিলো। মুখ দেখা যায়নি। এ ঘটনায় নারায়ণ চন্দ্র দাস ওইদিন রাতে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। চুরির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ওই এলাকায় এতো চুরি কারা করছে। তারা দাবি করেছেন, গত প্রায় ১২ বছরে ওই এলাকায় কমপক্ষে ৩০টি চুরি সংঘটিত হয়েছে। কোনো একটি ঘটনায়ও কেউ আটক ও শনাক্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, অন্যান্য অপরাধও হয়েছে। অপরাধী অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রবাসীর পাঁচতলা ওই ভবনে পূর্বে অন্তত পাঁচটি, পাশর্^বর্তী মফিজ মিজির ভবনে তিনটি, প্রবাসী মিজানুর রহমানের বাড়িতে দুটি, রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারীর বাড়িতে অন্তত ১০টি, প্রবাসী আলম খানের বাড়িতে একটি, প্রবাসী বাচ্চু মিয়ার ভবনে অন্তত ছয়টি, শাহজাহানের বাড়িতে একটি, সাঈদ বেপারীর বাড়িতে একটি, বাচ্চু বেপারীর বাড়িতে একটি চুরির ঘটনার কথা স্মরণ রয়েছে। অন্যদের নাম এখন মনে নেই। চুরির ঘটনার ২/৩টি সন্ধ্যারাতে হলেও বাকি সব হয়েছে দিনের বেলায়। এসব বাড়ির বাসিন্দাগণ বাসা থেকে বের হয়ে সন্তান নিয়ে স্কুলে, বাজারে বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার পরই দরজার তালা ভেঙ্গে চুরি হয়েছে। এলাকাটি ফরিদগঞ্জ থানার পশ্চিম পাশের বাউন্ডারির সাথে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত প্রায় ১০/১২ বছরে চুরির শিকার লোকজনের মধ্যে এসআই, এএসআই, কনস্টেবলসহ অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। সর্বশেষ দরজার তালা ভেঙ্গে চুরির শিকার হয়েছেন এসআই আবদুল কুদ্দুছ। অধিকাংশ ঘটনায় থানায় অভিযোগ বা মামলা হয়নি। পুলিশ তৎপর হয়নি, ফলে অপরাধী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী আরও জানিয়েছেন, ওই এলাকায় বাসায় নারী রেখে দেহব্যবসা করানো হয়েছে। চলেছে মদ, জুয়ার আসর। তারা দাবি করেছেন, এলাকায় ও সংশ্লিষ্ট লিংকে গোপন তদন্ত করলে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা বাহিনী। তারা বলেছেন, অপরাধীকে আইনের আওতায় নিতে ও মূলোৎপাটন করতে না পারলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী প্রশ্নের মুখে পড়বে।

এলাকায় ভাড়ায় থাকা একজন বাসিন্দা বলেছেন, চুরি থেকে সাইকেলও বাদ যায়নি।

এই এলাকার বাড়ির মালিক সাঈদ জানিয়েছেন, আমার এবং আমার ভাইয়ের বাসায় ও এলাকায় অনেক কলের উপরের অংশ চুরি হয়েছে। শুধু একজন প্রবাসীর ভাড়া বাসা থেকে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ আড়াই লাখ টাকা নিয়েছে। অপর একজন প্রবাসীর বাসা থেকে প্রায় ৭ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে ওই এলাকা থেকে এসআই নূর-এর নতুন মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেছে।

নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, মোটরসাইকেলটি আমার রুটি-রুজির বাহন ছিলো। মাত্র ১৫/১৬ দিন আগে কেনা মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। চুরির ঘটনায় আমি বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি আশা করছি পুলিশ বাহিনী চোর শনাক্ত করবে ও মোটরসাইকেলটির ফেরত পাবো।

বাড়ির মালিক প্রবাসী দুলাল বেপারীর ছেলে মাসুদ বলেছেন, আজ (শুক্রবার) পুনরায় সিসি ক্যামেরা দেখবো। তিনি মন্তব্য করে বলেছেন, এ এলাকার মতো ফরিদগঞ্জ বাজারের আশেপাশে অন্যসব এলাকায় ১০ ভাগের এক ভাগ চুৃরিও হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। এই এলাকায় এতো চুরির কারণ কী। শুনেছি বাইরে থেকে চোর এলেও এলাকার সহযোগী লাগে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কে সেই সহযোগী?

অন্য এক বড়ির মালিক বলেছেন, নিশ্চয় সর্ষের ভেতর ভূত আছে। তিনি বলেন, আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতার মাধ্যমে অপরাধী শনাক্ত করা কর্তব্য। বাসিন্দারা মন্তব্য করে বলেছেন, আমরা শান্তিতে ঘুমাতে ও বসবাস করতে চাই। অপরাধী শনাক্তের দাবি করেছেন সবাই।

এ ব্যপারে ফরিদগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ মণ্ডল বলেছেন, মোটরসাইকেল চুরি সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ বৃহস্পতিবার রাতে পেয়েছি। তদন্তের জন্য একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপরাধী শনাক্ত করতে ও মালামাল উদ্ধার করতে আমরা চেষ্টা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়