বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

হাইমচরে গ্রাহকদের অর্থ নিয়ে উধাও প্রতারক চক্র
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥

হাইমচর উপজেলা থেকে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’-এর নাম ভাঙ্গিয়ে গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেছে একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ।

‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’-এর আমানতের পাশ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী এর রেজিস্ট্রেশন নং- কুষ-৮৭/৯১। এমআরএ সনদ নং- ০৭৮০০০৬০৭০০০২৩। হেড অফিস : হাউজ নং ২২/১৩ বি, ব্লক বি, খিলজি রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। হাইমচরের অফিসের ঠিকানা ছিল আলগী বাজারের পশ্চিম মাথায়।

এদিকে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’ নামে স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ৩ অক্টোবর এ প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রীর অনুদানও পেয়েছে। প্রতারক চক্র এই প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো, হেড অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করেছে। প্রকৃত ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদপুরস্থ অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, চাঁদপুরে তাদের কোনো ব্রাঞ্চ নেই। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটেও এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রতারক চক্র ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’-এর নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করেছে।

হাইমচর থেকে জানা যায়, এখানে মাত্র তিনদিনের জন্য অফিস ভাড়া করে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’-এর নামে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে চক্রটি। সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত সকলে গ্রাহকদের টাকা আত্মাসাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। অফিসটিও এখন তালাবদ্ধ। যে ভবনে অফিস ভাড়া নিয়ে এনজিওর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, সে ভবনের মালিক গ্রাহকদেরকে জানান, অফিস ছেড়ে দিয়ে এনজিও সংশ্লিষ্টরা কখন পালিয়ে গেছে তা তিনি জানেন না।

হঠাৎ নামধারী ‘ওয়েব ফাউন্ডেশন’ উধাও হয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন গ্রাহকরা। প্রতারণার শিকার ৩নং আলগী দূর্গাপুর ইউনিয়নের গ-ামারা গ্রামের বাসিন্দা নাজমা বেগম (স্বামী মোঃ মাসুদ), হাছিনা বেগম (স্বামী বিল্লাল হোসেন), রুজিনা আক্তার (স্বামী আলমগীর হোসেন) বলেন, ঋণ পাওয়ার আশায় আমরা এ বছরের ১২ অক্টোবর ওই ফাউন্ডেশনের সদস্যভুক্ত হই। এনজিওর লোকজন আমাদেরকে বলেছে ৫০ হাজার টাকা ঋণ পেতে হলে ৫ হাজার এবং ১ লাখ টাকা ঋণের জন্যে ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মতো জমা দিয়েছি। কিন্তু ঋণ আনতে গিয়ে দেখি এনজিওটি উধাও হয়ে গেছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের অনেক ক্ষতি হলো। তারা প্রতারক চক্রকে ধরতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এনজিওর সদস্য হয়ে কেবল গ-ামারা ও চরভাঙা গ্রামের হোসনেআরা বেগম ১০ হাজার ২শ টাকা, হাছিনা বেগম ৭ হাজার ২শ টাকা, নাজমা বেগম ১০ হাজার ২শ টাকা, মরিয়ম বেগম ২ হাজার ২শ টাকা, জাহানারা বেগম ১০ হাজার ২শ টাকা, রুজিনা বেগম ৫ হাজার ২শ টাকা, ফরিদা বেগম ১০ হাজার ২শ টাকা, সুরমা বেগম ১০ হাজার ২শ টাকা, আয়েশা বেগম ১০ হাজার ২শ টাকা, রীনা আক্তার ১০ হাজার ২শ টাকা জমা দিয়েছেন। হাইমচরের বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য নিরীহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এমনভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে প্রতারক চক্রটি।

এনজিওর সদস্য হওয়া গ-ামারা গ্রামের ইমাম হোসেন ও আলমগীর হোসেন বলেন, এনজিও থেকে মোঃ হাফিজুর রহমান (মুঠোফোন : ০১৮১৮৬২৫৯৮৯) নামে এক ব্যক্তি আমাদের বাড়িতে এসে ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশনের’ পরিচয় দেন এবং সবাইকে ঋণ পাওয়ার জন্য সদস্য হতে উদ্বুদ্ধ করেন। আমরা তার কথা মতো সদস্য হয়ে টাকা জমা দিয়েছি। গত মঙ্গলবার আমাদেরকে ঋণ দেওয়ার কথা। আমরা গিয়ে দেখি অফিস তালামারা। আমাদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে এনজিওটি। আমরা ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়েছি।

ভুক্তভোগীরা জানান, আমরা প্রতারণার বিষয়টি হাইমচরের ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি। হাইমচর থানায়ও গিয়েছি। আমরা প্রতারকদের শাস্তি চাই। এ বিষয়ে আমরা যেন ন্যায় বিচার পাই।

এনজিওর কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া মোঃ হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে (০১৮১৮৬২৫৯৮৯) একাধিকবার কল দিয়ে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরী জানান, এনজিওর প্রতারণার বিষয়টি আমি ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জেনেছি। হাইমচর থানাকেও এ বিষয়ে অবহিত করেছি। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা শোনার পরে হাইমচরে যেসব এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করছে আমরা তাদের সঙ্গে বসেছি। আমরা প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করবো। এনজিওর কার্যক্রমকে আগামীতে আমরা আরো ভালোভাবে মনিটরিং করবো।

হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়টি শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়