মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

পত্রিকার ঘ্রাণ আমাকে আকর্ষণ করে
রেদওয়ান আহমেদ জাকির ॥

মতলব দক্ষিণ উপজেলার পত্রিকা বিক্রেতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন। তিনি দুর্গাপুর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৮৬ সালে ২৫কপি পত্রিকা দিয়ে তার পত্রিকা বিক্রি শুরু হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত পত্রিকা বিক্রির সাথে জড়িত আছেন। নব্বইর দশকে প্রায় সহ¯্রাধিক পত্রিকা বিক্রি হতো। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, অনলাইন পত্রিকার ছড়াছড়ির কারণে বর্তমানে ২শ’ ৫০ কপি পত্রিকা বিক্রি হয়। গৌরিপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে পত্রিকা এনে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ভাড়ার টাকা দিয়ে পত্রিকা বিক্রি করে এখন তেমন লাভ হয় না। ছোট থেকে এ ব্যবসা করে আসছি, ছাড়তে মন চায় না। পত্রিকার ঘ্রাণ আমাকে আকর্ষণ করে। সকাল বেলা পত্রিকা না দেখলে মনে হয় কী যেন হারিয়েছি।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে পত্রিকা বিক্রেতা দেলোয়ারের তাউই গিয়াসউদ্দিন তাকে মতলবে এনে পত্রিকা বিক্রির জন্যে কাজে লাগান। তিনি দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক জনতা বিক্রি শুরু করেন। হকার সমিতির মাধ্যমেই পত্রিকা আনেন। সেই সময়ে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১২ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ভবের চর থেকে পত্রিকা নিয়ে আসতেন। রাতে গিয়ে ভবেরচর এলাকায় থেকে সকাল ১০টায় পত্রিকা এনে বিক্রি করতেন। ১৯৯৪ সালে তিনি একটি সাইকেল কিনে সাইকেল দিয়ে পত্রিকা আনতে শুরু করেন।

মতলবে ১৯৮০ সাল থেকে পত্রিকা আনতেন তৎকালীন এটিইও মুখলেছুর রহমান। তিনি দিনের পত্রিকা ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় নিয়ে আসতেন। পত্রিকা বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন ওই সময় রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের দিনেও সকাল ১০টার মধ্যে পত্রিকা নিয়ে আসতেন। তাই সকলেই দেলেয়ারের পত্রিকা ক্রয় করতেন। ওই সময় এটিইও মুখলেছুর রহমান পত্রিকা বিক্রি নিয়ে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মতলব ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার রায় দেলোয়ারের পক্ষে আসলে এটিইও মুখলেছুর রহমান পত্রিকা বিক্রি বন্ধ করে দেন। দেলোয়ারের বাবার কোনো সহায়-সম্পত্তি ছিলো না। পত্রিকা বিক্রি করে চার ছেলেমেয়ে স্ত্রীসহ ৬জনের সংসার চালান। বড় মেয়েকে মাস্টার্স পাস করিয়েছেন, ছোট মেয়েকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছেন। আর বড় ছেলেকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছেন। ছোট ছেলে ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

টাকার জন্যে নয়, পত্রিকা বিক্রি এখন দেলোয়ারের মনের খোরাক। তিনি বলেন, পত্রিকা বিক্রি ভালভাবে উপভোগ করছি। পত্রিকা বিক্রিতে অনেকের গালমন্দ শুনেছি। তবে তৎকালীন বীর মুক্তিযোদ্ধা মনু চেয়ারম্যান আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত পত্রিকা বিক্রি করছি। নচেৎ কালের গর্ভে হারিয়ে যেতাম।

তিনি জানান, পত্রিকা বিক্রি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। পত্রিকার দাম বৃদ্ধি, ইন্টারনেট, অনলাইন পত্রিকার কারণে অনেকেই পত্রিকা কিনে না। রাজনৈতিক, দলীয় কোন্দল, মারামারি, গুম, হত্যা ও রহস্য উদ্ঘাটনের সংবাদ থাকলে পত্রিকা বেশি চলে।

তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতা নিয়ে পত্রিকা বিক্রি অব্যাহত রাখতে চাই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পত্রিকা বিক্রি করতে চাই। পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমেই জীবনের অবসান হোক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়