প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
মোঃ রাসেল প্রধান নারায়ণপুর পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। তাঁর মতে জনস্বার্থে রাজনীতি করার ক্ষেত্র আগের মতো নেই। মুখের কথা আর কাজের পরিবেশ এক রকম মনে হয় না তাঁর কাছে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ আয়োজন ‘রাজনৈতিক ভাবনা’ বিষয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি মতামত রাখতে গিয়ে বলেন, রাজনীতিতে আদর্শ বলতে যা বোঝায় তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলো আদর্শিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। হুমকির মুখে পড়ছে গণতন্ত্র। তার সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো :-
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার দৃষ্টিতে যে কোনো নির্বাচনে মনোনয়ন কিসের নিরিখে হয়? এজন্যে কী কী করতে হয়?
মোঃ রাসেল প্রধান : এক কথায় বলতে গেলে বর্তমানে দলীয় মনোনয়ন বেশিরভাগই টাকার বিনিময়ে হয়। এখন আর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং যাকে মনোনয়ন দেয়া হলো তার সাথে জনগণের সম্পর্ক আছে কি-না এগুলো আর বিচার করা হয় না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : স্থানীয় পর্যায়ে নিজ দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল কী কী কারণে হয় বলে আপনার ধারণা? এ কোন্দল নিরসনে জেলা পর্যায় বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতার সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণের হুঙ্কার সাধারণত দ্রুত উচ্চারিত হয় না। এটার হেতু কী?
মোঃ রাসেল প্রধান : প্রথমতঃ প্রতিটা দলেরই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকে। এই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকেই দলীয় এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরু হয়। এটার জন্যে বেশিরভাগ দলের সিনিয়র নেতারা দায়ী। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, একটা সংসদীয় আসনে সংসদ নির্বাচন করার মতো অনেক যোগ্য লোক থাকে, কিন্তু দলের মনোনয়ন পায় একজন। দলের মনোনয়ন চায় একাধিক প্রার্থী। প্রত্যেক প্রার্থীর নিজেদের কিছু কর্মী-সমর্থক থাকে। যখন একজন মনোনয়ন পায়, তখন অন্যদের কর্মী-সমর্থকরা নীরব ভূমিকা পালন করে। যিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তিনি তার নিজ সমর্থিত লোকদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন এবং সকল কমিটিতে তার নিজের লোকদেরকে প্রাধান্য দেন। এতে দলের ত্যাগী ও অভিজ্ঞ কর্মীরা বাদ পড়ে যান। এই ক্ষোভ থেকেই দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ে। আর একটা বিষয় হলো, জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রত্যেক নেতারই একটা অদৃশ্য বলয় থাকে। এজন্যে মনে হয় সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণের হুঙ্কার ধীরে উচ্চারিত হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : দলের তৃণমূলের বর্ধিত সভায় কিংবা সাধারণ বর্ধিত সভায় খোলামেলা অনেক কথা হয়। অনেক তিক্ত সত্য কথা উচ্চারিত হয়। এগুলো কি আদৌ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়?
মোঃ রাসেল প্রধান : দলের বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতারা রাজনীতির প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা বলেন, বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন। কিন্তু এই সুপারিশের আলোকে দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন তেমন একটা চোখে পড়ে না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : রাজনীতিতে আদর্শের চর্চা ও দলীয় গঠনতন্ত্র যথাযথভাবে মেনে চলার গুরুত্ব কতটুকু? আপনি কি মনে করেন, আপনার দলে উক্ত চর্চা ও মেনে চলার কাজটা যথাযথভাবে হচ্ছে?
মোঃ রাসেল প্রধান : প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিতে আদর্শ বলতে যা বোঝায় তা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলো আদর্শিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। হুমকির মুখে পড়ছে গণতন্ত্র। আমি যে দলের সমর্থক মানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, এই আওয়ামী লীগের মূলনীতি হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার। আর গঠনতন্ত্রের বিষয়টা এভাবে বলতে চাই, যদি দলে আদর্শ চর্চা হয় তবে গঠনতন্ত্র এমনিতেই মানা হয়ে যায়। দলীয় আদর্শ মানলেই গঠনতন্ত্র মেনে চলার পথ সুগম হয়। আর তখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতিমুক্ত ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
মোঃ রাসেল প্রধান মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজ গভর্নিং বডির হিতৈষী সদস্য। পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি মতলব উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। সদালাপী, হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তিনি বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।