মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

মায়ের স্বীকারোক্তিতে বসতঘরের মাটি খুঁড়ে সন্তানের লাশ উদ্ধার
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

তিন বছরের শিশু আহমেদ হোসেন বাবার অবর্তমানে থাকতো সৎ মা কোহিনুর বেগমের সাথে বাবার বাড়ি হাজীগঞ্জের জিয়ানগর এলাকায়। গত সপ্তাহে মা কোহিনুর বেগম ছেলে আহমেদকে নিয়ে বেড়াতে যান বাবার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে গত শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় আহমেদকে হত্যা করে বাবার বসতঘরে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসেন স্বামীর বাড়ি হাজীগঞ্জের জিয়ানগরে। জিয়া নগরে কোহিনুর বেগম একা ফিরেছেন এমন বিষয়টি শিশুটির বাবার পরিবার নিশ্চিত হওয়ার পরেই কোহিনুর বেগম নানা ফন্দি আঁটতে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে কোহিনুর বেগম হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সব অকপটে স্বীকার করে। আর তখনই বেরিয়ে আসে আহমেদ হত্যার মূল রহস্য।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, স্বামীর বাড়ি জিয়া নগরে এসে আহমেদকে নিয়ে নানা গল্প আঁটেন কোহিনুর বেগম। বাড়ির লোকজন নিশ্চিত হন কোহিনুর বেগম বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে একা ফিরেছেন। এমন বিষয়টি বাড়ির লোকজন নিশ্চিত হওয়ার পর চাপ বাড়ে কোহিনুরের উপর। তখনই কোহিনুর বলেন, গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় আহমেদ। কোহিনুরের কথার সূত্র ধরে গত রোববার ২৮ আগস্ট জিয়ানগরের একটি পুকুরে ডুবুরি নামে আহমেদের খোঁজে। ডুবুরি দল আহমেদের খোঁজ না পাওয়ায় শিশুটির বাড়ির লোকজনের মাধ্যমে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কোহিনুর বেগমকে প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদের জন্যে গত রোববার রাতে থানায় নিয়ে যায়। রাতভর ও সোমবার ২৯ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত পুলিশের কাছে মুখ খোলেনি কোহিনুর। সোমবার দুপুরের পরেই কোহিনুর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সৎ ছেলেকে হত্যা করে বাবার বাড়ির বসতঘরে মাটি চাপা দেয়া আছে বলে স্বীকার করেন। এরপরেই হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ রামগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় কোহিনুর বেগমকে। এ ঘটনায় রামগঞ্জ থানা পুলিশ কোহিনুর বেগমকে আটক করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে শিশুটির বাবা হাফেজ শাহ আলমসহ সৎ খালা ও সৎ নানীকে।

কোহিনুর বেগম লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের চকিদার বাড়ির মরহুম মোবারক হোসেনের মেজো মেয়ে। শাহ মিরান হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের দণি ছৈয়াল বাড়ির মরহুম জয়নাল আবেদিনের ছেলে। কোহিনুর ও শাহ মিরান দম্পতির এটি দ্বিতীয় বিয়ে। উভয়ের প্রথম ঘরে একটি করে সন্তান রয়েছে। মায়ের হাতে হত্যার শিকার আহেমেদ হোসেন হাফেজ শাহ মিরানের প্রথম স্ত্রীর সন্তান। শাহ মিরান তার সন্তান নিখোঁজের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন।

এদিকে সোমবার রামগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে আহমেদ হোসেনের লাশ উদ্ধার করতে দরবেশপুর গ্রামের চকিদার বাড়িতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ যাওয়ার পূর্বেই ঐ বাড়িতে এলাকার হাজার নারী পুরুষের ভিড় জমেছে। এরপরেই রামগঞ্জ থানা পুলিশ কোহিনুর বেগমকে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে সরাসরি ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কোহিনুর বেগমের দেখিয়ে দেয়ার ভিত্তিতে তার বাবার বসত ঘর লাগোয়া পিছনের একচালা বারান্দার ফ্লোরের মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দা শিশুটির লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত দেখে কোহিনুর বেগমকে ধিক্কার দিতে দেখা যায়।

শিশুটির বাবা শাহ মিরান জানান, কোহিনুর বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাবে সেটা আমাকে বলেছে। এর দুইদিন পর আমাকে সে ফোন করে জানায়, তোমার ছেলেকে আমি খুঁজে পাইনি। এরপরেই রোববার আমি বাড়ি এসে হাজীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। এরপরে সন্তানের কথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শাহ মিরান।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ জানান, গত রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত সন্তান নিখোঁজের বিষয়ে মুখ খোলেনি কোহিনুর নামের ওই নারী। সোমবার দুপুরের কিছু পরে সব স্বীকার করে আমাদেরকে জানান, শিশুটিকে সে তার বাবার বাড়িতে মেরে মাটি চাপা দিয়ে এসেছে। এরপরেই আমরা রামগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে নিয়ম মেনে কোহিনুর বেগমকে তুলে দেই।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী জানান, আমরা শিশুটির মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বসতঘরের ফ্লোর খুঁড়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছি। শিশুটির সৎ মা কোহিনুর বেগম হত্যার কথা স্বীকার করেছে, তাকে আমরা আটক করেছি। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করছি। তারপর শিশুটির বাবা কিংবা নানী বা খালার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়