মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

মনোনয়ন-বাণিজ্যে সংশ্লিষ্টরা এবার প্রার্থী হতে চান
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥

‘মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম অ্যাডভোকেট মকবুল আহমেদের সুযোগ্য সন্তান, চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চাঁদপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক এবং চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মোরশেদ (জুয়েল)কে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দেখতে চাই’ বলে গতকাল সোমবার সকালে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ফরিদগঞ্জ উপজেলা। আর সেটি জুয়েল শেয়ার করেছেন। অনুরূপ আরো তিনটি পোস্ট তিনি শেয়ার করেছেন রোববারের বিভিন্ন সময়ে বা তার পূর্বে।

ফেরদৌস মোরশেদ জুয়েল নিজের ফেসবুক আইডিতে তার সপক্ষের সর্বশেষ পোস্টটি শেয়ার করার প্রায় ৯ ঘন্টা পূর্বে নিজেইে একটি পোস্ট দিয়েছেন, যাতে তার বন্ধুরা লাইকের চেয়ে কমেন্ট ও শেয়ারের প্রবণতায় বেশি ভুগছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি লিখেছেন, গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা এনে দিবেন বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে যারা নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, তারা দয়া করে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করবেন না, তাহলে জবাবটা ঠিকমত পেয়ে যাবেন।

জুয়েল সত্যিকার অর্থে এমন জবাব দেবার সর্বোচ্চ কতোটুকু ক্ষমতা ধারণ করেন সেটা অনেকের আন্দাজ-অনুমানে জানা থাকলেও কিংবা না থাকলেও তিনি যে তার ফেসবুক আইডিতে অনেক নিরীহ ও আর্থিক হয়রানির শিকার হওয়া নৌকার প্রার্থীদের হৃদয়ের গহীনে লুক্কায়িত কষ্টের কথাটুকু অকপটে লিখেছেন-ফেসবুক ফ্রেন্ডদের প্রতিক্রিয়ায় ও মুখরোচক আলোচনায় সেটি প্রতীয়মান হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর আর ভোটগ্রহণ ১৭ অক্টোবর।

উল্লেখ্য, জেলা পরিষদ আইন নূতনভাবে প্রণয়ন করে ২০০০ সালে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তীতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় এসে উক্ত আইনানুযায়ী কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলেও তাদের প্রণীত আইন বাস্তবায়নে সময় নেয় দুবছর। ২০১১ সালে জেলা পরিষদে নিয়োগ দেয়া হয় প্রশাসক। পাঁচ বছর পর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তফসিল অনুযায়ী এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলায় অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ১৯টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে। কিন্তু বিদ্যমান আইন সংশোধনসহ আরো কিছু জটিলতাহেতু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। অবশেষে জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি যোগ করে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী চলতি ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল সংসদে পাস হয়, যার গেজেট প্রকাশিত হয় ১৩ এপ্রিল। আর ১৭ এপ্রিল সদ্য মেয়াদোত্তীর্ণ চেয়ারম্যানদেরকেই জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পরদিন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক পত্রে নির্বাচন কমিশনকে যতো দ্রুত সম্ভব নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্যে বলা হয়। সেমতে নির্বাচন কমিশন গত ২৩ আগস্ট উক্ত নির্বাচনের জন্যে আগামী ১৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণপূর্বক বিস্তারিত তফসিল ঘোষণা করে।

জেলা পরিষদ নির্বাচনের পূর্বের আইনানুযায়ী প্রতিটি জেলার আওতায় যতোগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর অর্থাৎ সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বাররা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য অর্থাৎ ২১ জনকে নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধিত আইনানুযায়ী জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিটি জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। যেমন : চাঁদপুর জেলায় যেহেতু ৮টি উপজেলা রয়েছে, সেহেতু চাঁদপুর জেলা পরিষদের জন্যে নির্বাচিত করতে হবে ৮ জন সদস্য। সংশোধিত আইনানুযায়ী জেলা পরিষদের জন্যে সংরক্ষিত সদস্য তথা নারী সদস্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিটি জেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। সেমতে চাঁদপুরে এ সংখ্যাটি হবে তিন, যেটি পূর্বে ছিলো পাঁচ। সংশোধিত আইনে ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য সংখ্যার সাম্যতা অর্থাৎ ২১ জন আর থাকছে না, একের জেলায় এই সংখ্যা হবে একেক রকম। চাঁদপুর জেলায় এ সংখ্যাটা দাঁড়াবে= ১ জন চেয়ার‌্যমান+৮জন সদস্য+৩জন সংরক্ষিত (নারী) সদস্য= ১২ জন। পূর্বের চেয়ে এ সংখ্যাটা নয় (৯) কম। সেজন্যে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে যে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্যে ব্যাপক লবিং, তদবির ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

চাঁদপুর জেলার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীর সংখ্যা পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ ইউপি নির্বাচন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এনে দেবার লোভ দেখিয়ে নানা ফাঁদে ও কৌশলে আগ্রহী প্রার্থীদের নিকট থেকে লক্ষ-কোটি টাকা আদায় করে মনোনয়ন-বাণিজ্য করেছেন। এরা আয়ের উৎস জানাতে পারবে না বলে ব্যাংকে না রেখে বিপুল পরিমাণ মনোনয়ন-বাণিজ্যের টাকা নিজের প্রাসাদোপম অট্টালিকার নির্দিষ্ট কক্ষে মজুদ পর্যন্ত রেখেছেন বলে কথিত রয়েছে। এ ব্যাপারে এবং আরো অনেক অবৈধ আয়ের ব্যাপারে এদের বিরুদ্ধে দুদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) অজ্ঞাত কারণে সে অভিযোগে সাড়া দিচ্ছে না বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মনোনয়ন-বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট এমন ব্যক্তিরাই আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার মনোনয়ন চাইছেন। সেজন্যে সচেতন ও ওয়াকিবহাল নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফেসবুকে সাহস করে এমন প্রতিক্রিয়াই দেখিয়েছেন চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মোরশেদ জুয়েল এবং আরো ২-৪ জন। আর অন্যরা অপেক্ষায় আছেন, এই প্রতিক্রিয়া সঞ্চারিত হতে হতে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পৌঁছে কিনা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়