প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের রাসূলপুর গ্রামে গৃহবধু রহিমা আক্তার (২০)কে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার অপরাধে মোঃ জিয়া (৩২), কামাল মিয়াজী (৩৬), মোঃ আবুল বাসার (৪৮) ও মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম (৩৮)কে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯(১)৩০ ধারার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। রায়ে বলা হয়, উভয় সাজা একই সঙ্গে চলমান থাকবে।
২৩ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী এই রায় দেন। হত্যার শিকার রহিমা আক্তার রসূলপুর গ্রামের মোঃ সফিউল্লাহ মিয়াজীর মেয়ে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ জিয়া রসুলপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হক মাস্টারের ছেলে, কামাল মিয়াজী আবুল খায়ের মেয়াজীর ছেলে, আবুল বাসার আব্দুল জলিলের ছেলে এবং মাহমুদা বেগম নজরুল ইসলামের স্ত্রী। রায় ঘোষণার সময় মাহমুদা বেগম পলাতক ছিলো। অপর ৩ আসামীর উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করা হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালে রহিমা বেগমের সাথে পাশর্^বর্তী ঘিলাতলী গ্রামের মান্না মাস্টারের ছেলে আবু জাফরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর রহিমার পিতাণ্ডমাতা জানতে পারেন আবু জাফর একাধিক মেয়ের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত। সর্বশেষ জানতে পারেন, গৌরিপুর এলাকার হালিমা নামের এক নারীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক। এই নিয়ে আবু জাফর ও রহিমার মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ২০১৩ সালের ১৯ মে রহিমা তার বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর নিকট নায়েরগাঁও স্বামীর কর্মস্থল নারায়ণপুর কোল্ড স্টোরে রওনা করেন। পিতার কাছে বলে যান রাতে আবার বাড়িতে ফিরে আসবেন। কিন্তু রাতে আর ফিরে আসেননি। পরদিন ২০ মে রহিমার পিতা জামাতা আবু জাফরকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে বলে, রহিমা তার কাছে আসেনি। এরপর ২১ মে সন্ধ্যা আনুমানিক পৌনে ৭টার দিকে জামাতা আবু জাফর কল করে জানান, এক নারীর মরদেহ রসূলপুর কদম আলীর বাড়ির পাশে আক্কাসের ভুট্টা ক্ষেতে পড়ে আছে। রহিমার পিতা মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। এরই মধ্যে জামাতা আবু জাফর ঘটনাস্থল থেকে কেটে পড়েন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে মতলব থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় রহিমার পিতা মোঃ সফিউল্লাহ মিয়াজী মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি চলমান অবস্থায় তদন্ত করে হত্যা ও ধর্ষণের সাথে জড়িত মোঃ জিয়া, কামাল মিয়াজী, মোঃ আবুল বাসার ও মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগমকে অভিযুক্ত করে মতলব দক্ষিণ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফুর রহমান ৩১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডঃ সাইয়্যেদুল ইসলাম বাবু বলেন, মামলাটি দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর চলাকালীন ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে আদালত এই রায় দেন। রায়ের সময় আসামীদের মধ্যে মাহমুদা বেগম পলাতক এবং বাকি তিনজন উপস্থিত ছিলেন।
মামলার রায় ঘোষণার সময় বাদী রহিমার পিতা মোঃ সফিউল্লাহ মিয়াজী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে নির্যাতন করে তারা হত্যা করেছে। আমার মেয়েতো আর পাবো না। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট। রায় কার্যকর হলে আমার পরিবার শান্তি পাবে।
সরকার পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন খোরশেদ আলম শাওন এবং আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডঃ মোঃ সফিকুর রহমান ভূঁইয়া।