প্রকাশ : ০৮ মে ২০২২, ০০:০০
হাজীগঞ্জে বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা : পাকা ধান যেনো কৃষকের গলার কাঁটা
কৃষি জমির জলাবদ্ধতায় হাজীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার পাকা ধান কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ক’দিনের বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠে পানি জমলেও সেই পানি ইরি-বোরো ধানের জমিতে আটকে থাকায় এমন হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন ছাড়া এ মুহূর্তে পাকা ধান রক্ষার কোনো উপায় নেই বলে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা কৃষকরা।
|আরো খবর
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকিলা ইউনিয়নের বাকিলা-দেবপুর কৃষি মাঠ, ৬নং বড়কুল ইউনিয়নের আড়ুলি, দক্ষিণ বড়কুল, রায়চোঁ, সোনাইমুড়ি কৃষি জমির মাঠ, ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের ডাকাতিয়া নদীর চরাঞ্চল, ১০নং গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন কৃষি মাঠসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ইরি-বোরো ধানের কৃষি জমিতে পানি আটকে রয়েছে। জমিগুলোতে পানি আটকে থাকার কারণে পাকা ধান কাটতে পারছে না কৃষককুল।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, স্থানীয়ভাবে পানি চলাচলের একমাত্র মাধ্যম খালগুলো ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই কৃষি জমিতে পানি আটকে থাকে। সেই পানিতে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে গলার কাঁটায় পরিণত হয়। যে কোনো মাঠের পাকা ধান আসছে ২/১ দিনের মধ্যে কাটা সম্ভব না হলে পাকা ধান জমিতে ঝরে পড়ে যাবে।
বাকিলা-দেবপুরে ইরি-বোরো ধানের জমির পরিমাণ প্রায় দেড়শ’ একর। উত্তরে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক দক্ষিণে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ। এই বিস্তীর্ণ ইরি-বোরো কৃষি জমির মাঠের ধান ইতিমধ্যে পেকে গেছে। ঈদের দিন ও তারপরের দিন সকালের বৃষ্টির কারণে উক্ত মাঠের কোনো পানি মাঠ থেকে নামতে পারে না। ফলে মাঠে পানি থাকার কারণে পাকা ধান কাটতে পারছে না কৃষকরা। ২/১ দিনের মধ্যে উক্ত মাঠের পাকা ধান না কাটলে সকল ধান জমিতে পড়ে যাবে।
উক্ত মাঠের স্কীম মালিক ও ম্যানেজার শাহআলম জানান, মাঠের পানি নামতে গেলে প্রায় ৬০-৭০ বছর আগে নির্মিত চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাকিলা গ্রামের বেপারী বাড়ির সামনে কালভার্টের বন্ধ মুখকে খুলে দিতে হবে। একই অংশে সড়কের উত্তর পাশে সড়ক বিভাগের খালে থাকা বক্স কালভার্টগুলোকে সরিয়ে দিতে হবে, তবেই গোগরায় সওজের ব্রিজের নিচ নিয়ে পানি ডাকাতিয়া নদীতে নেমে যেতে পারে। এ বিষয়ে ত্বরিৎ ব্যবস্থা না নিলে পুরো মাঠের সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
একই মাঠের কৃষক বাকিলা বেপারী বাড়ির মরহুম সামছুল হক বেপারীর ছেলে খলিলুর রহমান জানান, আমার বেশ ক’টি জমির ধান পেকে গেছে। জমিতে পানি থাকায় ধান কেটে আনতে পারছি না।
বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন জানান, বেপারীর বাড়ির পুকুরের উত্তর পাশে সড়ক বিভাগের কালভার্টের মুখ বন্ধ রয়েছে। এটি খুলে দিলে পুরো মাঠের পানি উত্তর পাশের সড়কের খাল ধরে নেমে যাওয়ার কথা। আবার উত্তর পাশের খালে মাছ চাষ ও বেশ ক’টি পরিবার সড়কের খালের নিচ লেভেলের একটু উপরে তুলে কালভার্ট তৈরি করার করার কারণে পানি নামতে পারছে না। যার কারণে কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নে অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট/দখল করার কারণে কৃষি জমির পানি নামতে পারছে না। বিশেষত আড়ুলি মাঠ, দক্ষিণ বড়কুল মাঠ, রায়চোঁ মাঠ, সোনাইমুড়ি মাঠে পানি আটকে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, উপজেলার বেশ ক’টি কৃষি জমিতে পানি আটকে থাকার কথা আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে উপজেলার সভায় আলোচনা হয়েছে। আশা করি সহসাই এটির একটি সমাধান হবে।
অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, পাকা ধানের জমি থেকে ত্বরিৎ ব্যবস্থপনায় ধান কাটার জন্যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।