প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
বৈরী আবহাওয়ার কারণে অসময়ে টানা বৃষ্টিপাতে ধান, গবাদি পশুর খাবার খড় বিনষ্ট হচ্ছে। রোপিত আলুসহ শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। বছর জুড়ে বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা সব মিলিয়ে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নি¤œচাপের কারণে গত শনিবার থেকে চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অসময়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকরা মাঠ থেকে পাকা ধান কাটার মহোৎসবে মেতে উঠবেন। সেই লক্ষ্যে কৃষকরা মাঠ থেকে প্রায় ১০% ধান কেটে বাড়িতে তুলেছেন। কেউ মাড়াই দিয়ে ধান বের করেছেন, কেউ মাড়াই দেবার অপেক্ষায় সময় গুণছেন। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সময়ে যখন কৃষকরা মাঠ থেকে ধান কাটা ও ঘরে তোলা নিয়ে আনন্দের সময় কাটাবেন, ঠিক সেই সময়ে পাকা ধান নিয়ে অসময়ের টানা বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। তাদের ধারণা, এই বৃষ্টির কারণে পাকা ধান গাছ মাটির সাথে মিশে যাবে এবং ব্যাপক হারে ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম আছে। ধান গাছের খড় নষ্ট হয়ে যাবে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও মতলব উত্তর উপজেলা বেড়িবাঁধের আওতাভুক্ত এলাকা হওয়ার কারণে এই দুই উপজেলায় শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ ব্যাপক হারে করা হয়েছে। অসময়ে অবিরাম বর্ষণের কারণে আমন ফসল ও শাক-সবজির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে বলে কৃষকরা এই প্রতিনিধিকে জানান।
ফরিদগঞ্জের উত্তর রামপুর বাজার এলাকার কৃষক ইউনুস মিয়া, সিরাজ মিয়া, গোয়ালভাওর এলাকার কৃষক মতিন, রূপসা বাজার এলাকার এক ধান চাষী মজিবর সহ আরো ক'জন বলেন, আমন ফসল ঘরে তোলার এই সময়ে বৃষ্টিপাতের ফলে জমিতে থাকা ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ছে। বৃষ্টির পানির সাথে গাছ থেকে ধান ঝরে পড়ছে। তাছাড়া নিচু জমিতে পানি জমায় ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে বালিথুবার কৃষক মহসিন, মোঃ টেলু, দেলু মিজি বলেন, টানা বৃষ্টিতে রোপিত আলুর মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এছাড়া টমেটো, সরিষা, পিঁয়াজ, করোলা, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, লাউ শাকসহ শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বার বার ফসল ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ইরি-বোরো ধানের বীজতলা তৈরি কারক কৃষকরা জানান, বৃষ্টি আরো কয়েকদিন থাকলে তাদের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবে এবং নতুন করে আবার হয়তো বীজতলা তৈরি করতে হবে। যার কারণে খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে এবং বীজ সংগ্রহ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যে গভীর নি¤œচাপটি রয়েছে, তার কারণে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারপরে আবহাওয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলেও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চতুর্দিকে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাটা ধান ও আলুসহ শাক-সবজির ক্ষতি সাধন হচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাত বন্ধ না হওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি এখনও পুরোপুরিভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ার পরে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সঠিকভাবে তথ্য দেওয়া যাবে।