প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
ভালো থেকো
ফরিদুল ইসলাম নির্জন
শাম্মী একটু ব্যালকনিতে দাঁড়াবে? এক মিনিট শুধু তোমার মুখটা দেখব। প্লিজ, একটু দাঁড়াও, তোমাকে খুব মিস করছি। তোমাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছা হচ্ছে। পিয়াসের কথা শুনে মেজাজটা অনেক বিগড়ে গেল। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। সে মাঝেমধ্যেই এমন পাগলামি করে। পাগলামির একটা সীমা থাকা দরকার। সান্ত¡না এইটুকুই, সে পাগলামিটা আমার জন্যই করে। তাই একটু ছাড় দিয়ে চলি।
কিছুটা সামলিয়ে নিয়ে বললাম, তোমার সঙ্গে তো বিকেলে দেখা হলো। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে। এখন বাসার সামনে তুমি দাঁড়ালে সবাই দেখে ফেলবে। সন্দেহ করবে। তা ছাড়া বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। প্লিজ, পাগলামি করো না।
সে তো বিকেলে দেখেছি। এখন তোমার মুখ না দেখলে আমি রাতে ঘুমাতে পারব না। তুমি কি চাও আমি নির্ঘুম রাত কাটাই?
তোমাকে বোঝানোর মতো কোনো ক্ষমতা নেই। বাবা আছে, তা ছাড়া আজ আমার বাসায় গানের আসর বসবে। আমাকে তবলা বাজাতে হবে। তোমার বাবা থাক আর যেই থাক, আমি অতশত বুঝি না। তোমাকে দেখলে আমার পৃথিবী আলোকময় হবে। তুমি ভালো করেই জানো, আমার রাতের চাঁদ তুমি। আমার বৃষ্টির ছোঁয়া তুমি। আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছু শুধু তুমি।
তুমি আছ সেই তোমার মেসে। আসতে অনেকক্ষণ লাগবে। লক্ষ্মী সোনা, চাঁদের কণা প্লিজ, আজকে পাগলামি করো না।
তুমি বোঝার চেষ্টা করছ না কেন। আমি তোমাকে আজ রাতে না দেখতে পেলে মারা যেতেও পারি। তুমি কি চাও?
পিয়াস, তোমাকে আর কিছু বোঝাব না।
তুমি সাড়ে ৮টার আগে আসতে পারবে? এখন সাড়ে ৭টা বাজে। আমি ৮টার মধ্যে আসছি। আরেকটি অনুরোধ।
আবার কী অনুরোধ?
তুমি ব্যালকনিতে আসার সময় চুড়ি পরে আসবে। তোমার সেই নীল রঙের চুড়ি। কপালে একটি টিপ দিতে ভুলবে না। প্লিজ- আর ব্যালকনিতে এসে একটু মুচকি হাসবে। আমি তোমাকে দূর থেকে দেখব। এই দৃশ্য আমার কাছে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখা মনে হবে। দেখে চলে আসব। বলেই লাইনটা কেটে দিল।
এটা ওর পুরনো অভ্যাস। ওর কথা শুনে হেসে দিলাম। এতে যে আমার ভালোবাসার ঘাটতি তা নয়। আমি ওকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আমার বেঁচে থাকা, আমার স্বপ্নের আকাশ, আমার আমার বটবৃক্ষ সব পিয়াসের জন্য। আমি তার মাঝে এক অজানা খুঁজে পেয়েছি। সে আমাকে আগলে রাখে। তবে কেন জানি মনে হয় ওর কাছে আমার ভালোবাসা নগণ্য। ওর পাগলামি আছে, আমার হয়তো একটু কম। এই শাম্মী কী চিন্তা করিস। চল, সবাই এসেছে। তোকে তবলা বাজাতে হবে। বলেই বাবা আমাকে রুমে নিয়ে গেল।
রুমে গিয়ে চোখ চড়ক গাছ। সবাই বসে আছে আমার জন্য। গান শুরু হলো। আমি অপার হয়ে বসে আছি... গানের মাঝে ঢুকে গেলাম। দু-তিনটি গানের পর আমি ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে চলে এলাম। এসেই পিয়াসকে ফোন দিলাম। সে ধরে না। অনেকবার ফোন, ধরে না।
বাবার নিষেধ, গানের আসরে যেন কেউ ফোন ব্যবহার না করে। গান চলল রাত সাড়ে ১২টার মতো। একটানা গান চলছিল। আমার শুধু পিয়াসের কথাই মনে পড়ছিল। না জানি সে কোথায় আছে। তার কোনো সমস্যা হলো না তো। গানের আসর শেষ হওয়ার আগেই রুমে চলে এলাম। ৬৯টা কল এবং মেসেজ। সব রেখে ব্যালকনিতে গেলাম। সেখানে নেই। রাস্তা ফাঁকা। আবার তাকে ফোন দিলাম। ফোন বন্ধ পেয়ে মেসেজ দেখতে লাগলাম। চোখে জল এসে গেল। মেসেজটা ছিল এই রকম, ‘বৃষ্টিভেজা রাতে কাকভেজা হয়ে এসেছিলাম শুধু তোমাকে এক পলক দেখব বলে। আমার আবেগের কোনো মূল্য নেই, ভালো থেকো তুমি!’
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা