প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৭
পাঠক ফোরামে বিভিন্ন লেখক ও কবিদের কবিতা

আবদুর রাজ্জাক জীবনানন্দ
ফসলের মাঠে-মাঠে
ঝরছে সোনালি শস্য
মেঠো পথে-পথে হেমন্তের ঘ্রাণ
ঝিলমিল রোদ্দুর পেয়েছে আকাশ।
তুমি নিষ্পলক
গাঢ় বেদনা নিয়ে
আজও শুয়ে আছো
মৃত্যুর ঘুমে
কাঁঠালগাছের তলে
নক্ষত্রের রাতে
বাংলার তৃণ লয়ে
বুকের নিচেÑ
খয়েরি অশ্বত্থ পাতা
নীরবে ঝরছে
তোমার পাশে।নির্জন অগ্রহায়ণে
গাঢ় রৌদ্রে পাখিরা আসে
হেমন্তের আলাপনে
ঘুঘু, শালিক, চিল, চড়াই
আরো কতো নামহারা পাখি
কতোদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে
তুমি তা দেখেছো!শীত রাত, শিশিরের শব্দ
শঙ্খচিল, শঙ্খমালা, বেতফল
ধানসিঁড়িÑনীলাভ ব্যথিত
তোমার দু চোখ খুঁজেছে অবিরাম।
রূপসি বাংলা, বনলতা সেন
মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির
বাংলার অপরূপে
পেয়েছি আস্বাদ।একখানা সুনীলাকাশ চাই
আমাকে একখানা আকাশ দাও
সুনীল-সুনিবিড় আকাশÑ
যে আকাশ
আমাকে ঘনপত্র পল্লবের মতো ছায়া দিবে
মেঘের ডানায় উড়াবে বিকেলগুলো
গোধূলিতে বিলাবে আলো
সন্ধ্যায় বসাবে রূপকথার গল্পের আসর।ফেরত আনিবে অভিমানীকে
যে আমাকে ভুল বুঝেছিল,
যতটুকু ভুল ছিল
তার চেয়ে বেশি ভুল বুঝেছিল।আমাকে একখানা আকাশ দাও
জোসনা রাতের শান্ত দিঘির জলের মত স্বচ্ছ
সাগরের মত গভীর
শরতের আকাশের মতো উদার
পৃথিবীর মতো প্রশস্ত
মাটির মতো নিরিবিলি
তোমার মত সহজ
শিশুর মত নিষ্পাপ
আমাকে একখানা আকাশ দাও
আমি অনন্তকাল চেয়ে থাকবো।ক্ষুদীরাম দাস যুক্তি যখন আমায় কাঁদায়
আমরা যুক্তি দিয়ে পাপকর্ম ঢাকতে চাই, ক্ষণিকের ভালোলাগা মাত্র; তখন বিবেকই হারাই।
কুঁড়ে কুঁড়ে অন্তর জ্বালায় জ্বলছি তো জ্বলছি, বেঁচেও মরে থাকা-মরছি তো মরছি।
কীসের খোঁজে মরিয়া হই, কী এমন সুখে পাপের কালিমা লেপ্টে থাকা, পড়ে রই দুঃখে।
পথ দেখাও আজি; মুক্তি মিলিবে কোন পথে প্রভু; তোমার রক্তে ধুয়ে দাও, প্রায়শ্চিত হোক-তোমাতে বাঁচি তবু!
আশরাফ চঞ্চল ভাষা-৩
শুকনো রুটি চিবচ্ছি দেখে, দোকানদার এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললÑ
টাকা দেওন লাগব না, এমনিতেই দিলাম, খান!
আমার চোখ গড়িয়ে যেন বৃষ্টি নেমে এল
বুঝলাম, একজন অভাবীই বুঝে অভাবের চিত্রনাট্য
ভেতরে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত কথামালা!কাজী শাহীদুজ্জামান মবের রাজ্যে
সমাজ এখন দুষ্ট লোকের
ভদ্র লোকের জন্য নয়,
শিক্ষা হলো মূল্যহীন পণ্য
টাকায় আজ সবকিছু হয়।নির্বোধ বলে জ্ঞানের কথা
টেবিল-টকে চর্চা তার,
দুর্নীতিবাজ লুটেরা শোনায়
নীতিকথার যত সমাচার।শিষ্যের কাছে জিম্মি গুরু
নীতি-আাদর্শ অসহায়,
কলিযুগের হিংস্র থাবায়
প্রজন্ম আজ ধ্বংসপ্রায়।মানবতা নেই মানুষের মাঝে
দানবীয়তায় তার হৃদয় ভরা,
অসত্যের জয়ে সত্য আজ তাই
হয়েছে তমসায় দিশেহারা।দিকে দিকে আজ সর্প সাবকেরা
তুলে ফণা ফেলছে বিষাক্ত নিশ্বাস,
রক্তের হলি খেলার উন্মাদ নৃত্যে
চলছে দানবের পৈশাচিক উল্লাস।আইন-আদালত গায়ের জোরে
সব জায়েজ মবের রাজ্যে,
জীবন যেন মূল্যহীন আজ
বিচারালয় নিভৃতে মাথা ঠুকে কাঁদছে।কুকুর এখন লেজ নাড়ে না
লেজে কুকুর নাড়ে,
উচিত বলার সাধ্য কার
আছে কয়টা মাথা ঘাড়ে।আকাশ হোসেন নীরব প্রস্থান
নীরবে যখন কারো প্রস্থান হবে?
তাহলে সেটা হবো আমি!
নির্মম বিষাদের এই প্রহরেÑ
যখন খোলা মাঠ হয়ে যাবে জনসমুদ্র।
গায়ের চাষা যখন বলবে, গণতন্ত্রের কথা,
যখন ঘর ছেড়ে ধেয়ে আসবে, আম-জনতা।
তাদের স্লোগানে স্লোগানে শুরু হবে গণ-মিছিল
গণ-মিছিল থেকে হবে গণ-বিপ্লব।
তখন তপ্ত দাবানল আমাকে ঘিরে ধরবে,
বন্দুকের নলে আমি হবো নতজানু।
আম-জনতার ক্ষোভ ও বিক্ষোভে,
আমার দেহ হবে নৃশংস, বিধ্বস্ত।কনক কুমার প্রামানিক ফাগুন রাঙা মন
ফুলে ফুলে ভরে উঠুক
ধারার সকল অন্তর,
ফাগুন রঙে রঙিন হবে
প্রকৃতির সব ঘর।কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে
ফাগুনের এ কালে,
গাছ গাছে লাগে আগুন
রাঙা শিমুল ডালে।মধুর সুরে কোকিলের গান
মনটা পাগল করে,
স্নিগ্ধ শোভা বেজায় লাগে
মন থাকে না ঘরে।