প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় চাঁদপুর শহরবাসী অতিষ্ঠ
‘বিতরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ কাজের ধীরগতি এবং খামখেয়ালিপনাকে দায়ী করলেন নির্বাহী প্রকৌশলী
চাঁদপুর শহরে বেশ কিছুদিন যাবৎ গ্রাহকদের সাথে লুকোচুরি খেলছে বিদ্যুৎ। দিনে ও রাতে মিলিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। তবে এটা লোডশেডিং নয়। কারণ, এখন বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। এখন যা হচ্ছে নিজেদের সৃষ্ট সমস্যা এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি। দেখা গেছে যে, বিদ্যুৎ একবার গেলে বেশিক্ষণ থাকে না, ৪/৫ মিনিটের মধ্যেই চলে আসে বেশিরভাগ সময়। দিনের মধ্যে ৮/১০ বার এভাবেই বিদ্যুৎ আসে আর যায়। তবে মাঝেমধ্যে ২০/২৫ মিনিট এমনকি এক দেড় ঘণ্টায়ও আসে না। এই দীর্ঘসময় না আসা অবশ্য তখনই হয়, যখন সাব-স্টেশনে কিংবা লাইনে কোনো সমস্যা হয়। কিন্তু দেখা গেছে যে, ঝড় নেই, বৃষ্টি নেই, অথচ হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলো। আবার ৪/৫ মিনিট কি ৮/১০ মিনিটের মধ্যে চলে আসলো। বিদ্যুতের এই সমস্যা এখন প্রতিদিনকার। প্রায় ৪/৫ মাস যাবৎ চাঁদপুর শহরে বিদ্যুতের এমন লুকোচুরি খেলা চলছে। হাসপাতালের মতো আরো কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর এলাকায়ও এভাবেই বিদ্যুৎ চলে যায়। হাসপাতাল এলাকায় যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন অক্সিজেন সাপ্লাইসহ অনেক কিছুর বিপর্যয় ঘটে। এতে বড় ধরনের সমস্যা ও দুর্ঘটনাও ঘটে।
কিন্তু কেনো এই লুকোচুরি খেলা? কেনো এই ভেল্কিবাজি? শহরবাসীর মনে এই প্রশ্ন অনেকদিনের। অথচ চাঁদপুরে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। তাহলে কেনো গ্রাহকরা এমন ভোগান্তি ভোগ করবে?
এ বিষয়ে গতকাল কথা হয় চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিক্রয় ও বিতরণ)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে। তিনি জানালেন বিদ্যুতের এই ভোগান্তির নেপথ্য কারণের কথা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো সময় ধরে চাঁদপুর শহরে রেল লাইনের উত্তর অংশে বিদ্যুৎ ছিল না। শহর থেকে একেবারে বাবুরহাট পর্যন্ত এই দীর্ঘসময় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল। কেনো এই দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকা? এর কারণ জানতে চেয়ে এই প্রতিবেদক ফোন করেন চাঁদপুর পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমানকে। তিনিই জানালেন এর প্রকৃত কারণ। যা গিয়ে বর্তায় বিদ্যুৎ বিভাগেরই উপর। আবার এ ক্ষেত্রে অনেকটা অসহায়ত্বই প্রকাশ করলেন বিদ্যুৎ বিভাগের এই কর্মকর্তা।
মিজানুর রহমান জানান, চাঁদপুরের মানুষ যে বিদ্যুতের এই ভোগান্তিতে ভুক্তভোগী তা আমি জানি। আমাকেও অনেকে ফোন করেন। কারণ অন্যটা হলেও গ্রাহকরা আমাকেই দুষছেন। তিনি জানান, চাঁদপুরে অনেকদিন যাবৎ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ‘বিতরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’র কাজ চলছে। এই কাজটি শুরু হয় আমি চাঁদপুরে যোগদান করারও আগে। কিন্তু তাদের কাজের খুবই ধীরগতির কারণে কিছু কিছু জায়গায় চলমান কাজ এলোমেলো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আবার তাদের খামখেয়ালিপনাও আছে। তারা একটা জায়গায় কাজ শেষ না করে মাঝপথে কাজ ফেলে রাখে। যার কারণে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সমস্যা হয়। উদাহরণ স্বরূপ তিনি জানান, শহরের ট্রাক রোড এলাকায় ওই প্রকল্প কাজের অধীনে রাস্তার পাশে বেশকিছু বৈদ্যুতিক পোল দাঁড় করিয়ে রেখে দেয়া হয়েছে। সেই পোলের পাশ দিয়েই আমার বিদ্যুতের মেইন লাইনের তার রয়েছে। দেখা গেছে যে, একটু বাতাস আসলেই সেই তার গিয়ে ওই পোলের সাথে আঘাত লাগে। আর তখনই শর্টসার্কিট করে বিদ্যুৎ চলে যায়। এভাবেই শহরের যত জায়গায় তারা কাজ করছে, প্রায় সব জায়গায়ই এমন অসমাপ্ত কাজ ফেলে রেখেছে। সে কারণেই একটু বৃষ্টি বা একটু বাতাস হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এছাড়া বিভিন্ন সময় সাব-স্টেশনে সমস্যা দেখা দিলে তখন ফিডারভিত্তিক লাইন অফ রেখে কাজ সারতে হয়। যেমনটি আজকে (গতকাল) সকাল থেকে সাব-স্টেশনে কাজ চলছে। তাই বাবুরহাট ফিডার বন্ধ রাখা হয়েছে। এই ফিডারের আওতায় যে সব গ্রাহক রয়েছেন তারা সকাল থেকেই বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। এছাড়া গ্রিড, সঞ্চালন লাইনে সমস্যা দেখা দেয়, ফেইজ চলে যায়, সার্কিট ব্রেকার পড়ে যায়। এ সব কারণে সময়-অসময়ে বিদ্যুৎ ট্রিপ করে।
এছাড়া তিনি বলেন, গ্রাহক একবার বিদ্যুতের যে সংযোগ নেয়, সে সংযোগ দিয়েই আজীবন চলে। অথচ তিনি বিদ্যুতের লাইন নেয়ার সময় বৈদ্যুতিক সামগ্রী যা ব্যবহার করেছিলেন, কিছুদিন পর তার সংখ্যা বেড়ে যায়। যেমন কারো ফ্রিজ একটা থাকলে পরে আরো দুইটা বাড়ে, প্রথমে এসি না থাকলেও পরবর্তীতে এসি লাগানো হয়, বা কারো এসি একটা থাকলে পরে এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু তিনি বিদ্যুতের লোড তো শুরুর দিকে যা নিয়েছেন তাই রেখেছেন। যার কারণে লোড সইতে না পেরে অটোমেটিক শাটডাউন করে বিদ্যুৎ চলে যায়। এই নানাবিধ সমস্যার কারণেই আসলে চাহিদার বেশি বিদ্যুৎ প্রাপ্তির পরও আমরা গ্রাহককে ২৪ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে পারছি না। তবে এখন পিডিবির বিতরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প কাজের সমস্যার কারণেই একেক সময় একেক এলাকায় দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়।
এ বিষয়ে করণীয় কী বা এই ভোগান্তি সমস্যার সমাধান কী জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমি ওই প্রকল্প কাজের লোকদের দ্বারা যে সমস্যা হচ্ছে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি মানুষের এই ভোগান্তি দূর করতে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে তা দূর হবে হয়তো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাঁদপুরে বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।