প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে
হাসপাতালে রোগী কমেছে, অক্সিজেনের জন্যে নেই হাহাকার
অনেকদিন পর চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এটা জেলাবাসীর জন্যে অনেক বড় স্বস্তির খবর। এই উন্নতির সুবাতাস গত কয়েকদিন যাবত ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এখন হাসপাতালে রোগীর চাপ তেমন একটা নেই, অক্সিজেনের জন্যেও হাহাকার নেই। অক্সিজেন পাওয়ার জন্যে দৌড়াদৌড়ি নেই, প্রতিযোগিতা নেই, মারামারি নেই। রোগীর চাপ কমায় যার যার চাহিদা অনুযায়ী সময় মতোই অক্সিজেন পাচ্ছে। চাঁদপুরে এখন করোনা রোগী শনাক্তের হার (বুধবারের তথ্য অনুযায়ী) ২৮ শতাংশ। তবে মৃত্যুর সংখ্যা তেমন একটা কমেনি। করোনা পজিটিভ এবং সাসপেক্টেড তথা করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলছে। এই সংখ্যাও কয়েকদিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে বলে আশাবাদী চাঁদপুরের সিভিল সার্জনসহ করোনা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণ।
|আরো খবর
ঈদুল আজহার পর চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সরকারি জেনারেল হাসপাতালেই ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ১০ জন করে রোগী মারা যেতে থাকে। এই সংখ্যা কোনো কোনোদিন ১২, ১৩ এবং সর্বোচ্চ ১৫ জন পর্যন্ত হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সরা বেসামাল হয়ে গিয়েছিলো। অক্সিজেনের জন্যে হাহাকার লেগে থাকতো। হাসপাতালের নিচতলায় আবুল খায়ের গ্রুপের অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করার রুমের সামনে থাকতো অক্সিজেনের জন্যে দীর্ঘলাইন এবং দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হতো একটি সিলিন্ডারের জন্যে। দেখা গেছে যে, অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে নিতে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি ছিলো জুলাইর শেষ সময় থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টানা প্রায় ১০ দিন। এরপর ৪ আগস্ট হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নির্মিত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টটি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চালু হয়। এর আগেরদিন ৩ আগস্ট থেকেই এই অক্সিজেন প্লান্টের পরীক্ষামূলক চালু এবং সরাসরি রোগীর বেডে অক্সিজেন সরবরাহ করা শুরু হয়। এর কয়েকদিনের মধ্যে অক্সিজেনের সকল ব্যবস্থা পূর্ণ রূপে সচল করা হয়। এই সচল থাকার পরও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছিলো না অসম্ভব রকমের রোগীর চাপ থাকায়। আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলা আইসোলেশন ইউনিটের পূর্ণ সিট (১২০) ফিলাপ হয়েও ফ্লোর, বারান্দা, ওয়ার্ডের ভেতরের হাঁটাচলার পথ সব জায়গায়ই শুধু রোগী আর রোগী। এক সপ্তাহ যাবৎ গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকতো ২শ’র উপরে। একদিন রোগী ভর্তি ছিলো ২শ’ ২২ জন। গত ৯ আগস্ট দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হিসেবে দেখা গেছে যে, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছে ৭৬ জন, মারা গেছে ৮ জন। এরপরও সেদিন ওই সময় পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিলো ১৬৮ জন। এসব রোগীর মধ্যে করোনার উপসর্গ রোগীর সংখ্যাই বেশি। অথচ তখন করোনা শনাক্তের হার ছিলো ৩০ শতাংশ। এর আগেরদিন দিন ছিলো ৩৬ শতাংশ। তারও আগে যেখানে শনাক্তের হার ছিলো ৪০ শতাংশের উপরে, সেটি ২-৩ দিনের মধ্যে ৩০ শতাংশের মধ্যে চলে আসে। ১১ আগস্ট বুধবার শনাক্তের হার এসে দাঁড়ায় ২৮ শতাংশে। এদিন সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ও করোনাবিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল নিজের ফেসবুকে স্বস্তিমূলক একটা পোস্টও দেন ‘অনেকদিন পর আজ হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১৫৫ জন।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, এদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগীর মৃত্যুজনিত বিদায় এবং সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বিদায়ের পর হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগী ছিলো ১৪৯ জন। এর মধ্যে কোভিড হচ্ছে ৫৭ জন, নন-কোভিড হচ্ছে ৯২ জন।
সব হিসেব মিলিয়ে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলে মন্তব্য করেছেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ এবং হাসপাতালের আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল। তবে মৃত্যুর সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে তাঁরা আশাবাদী। সবশেষ কথা হচ্ছে, সচেতন এবং সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। মানুষ এখনো যদি সচেতন ও সতর্ক হয়, তাহলে আক্রান্ত এবং মৃত্যু উভয় সংখ্যাই কমে আসবে।