প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
দাবি আদায়ে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন
অনশন ভাঙ্গালেন ডাঃ বদরুন নাহার চৌধুরী
সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল ২২ অক্টোবর শনিবার দেশব্যাপী গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। তারই ধারাবাহিকতায় এদিন চাঁদপুর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ (লেকের পাড় সংলগ্ন) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সকাল সন্ধ্যা গণঅনশনের আয়োজন করে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। জেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদারের সভাপ্রধানে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত কুমার রায় চৌধুরী (পিপি)-এর সঞ্চালনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত উপজেলা কমিটি ও পৌর কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মঠ, মন্দির ও প্রগতিশীল ভাবধারার শ্রেণী-পেশার মানুষ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা দাবি দাওয়া পূরণে ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি দলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন দাবি সমূহ মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তারা বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর পরও নিজেদের স্বাধিকার আদায়ের জন্য ধর্মীয় সংখ্যলঘুদেরকে কেন আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে? এই কি জাতির পিতার স্বাধীন বাংলাদেশ? জাতির পিতা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি সকলের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন, নিপীড়িত, নির্যাতিত, সুবিধা-বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাহলে আজ কেন তারই সুযোগ্য কন্যা মানবতার মা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বৈষম্যের শিকার হবে, দাবি আদায়ের জন্যে আন্দোলন সংগ্রাম করবে? আজকের এ গণঅনশন কর্মসূচিই হোক ধর্মীয় সংখ্যলঘুদের দাবি আদায়ের শেষ আন্দোলন। যাতে আর কোনোদিন রাষ্ট্রীয় অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে না হয়। তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চিরতরে বন্ধসহ সকল অপশক্তির বিনাশ কামনা করেন।
|আরো খবর
সন্ধ্যায় গণঅনশনে একাত্মতা ঘোষণা করে অনশনকারীদেরকে জুস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ বদরুন নাহার চৌধুরী। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। তার সেই স্বাধীন দেশে তিনি কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর ন্যায়সঙ্গত দাবি অপূর্ণ রাখবেন না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের এই দাবি অবশ্যই মেনে নিবেন। আমরা মনে করি ন্যায়সঙ্গত দাবি এককভাবে কারো দাবি হতে পারে না। ঐক্য পরিষদের এ দাবি আমাদের সকল প্রগতিশীল মানুষের, কোনো সম্প্রদায়ের একক নয়। আমরা সকল সময়ই সাম্প্রদায়িকতা ঘৃণা করি। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
গণঅনশনে একাত্মতা ঘোষণা করে আরো বক্তব্য রাখেন বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চাঁদপুর জেলা সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক প্রফেসর রণজিৎ কুমার বণিক, বিশিষ্ট কবি ও ছড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা, জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার, শিক্ষিকা মৃদুলা সাহা, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী রূপালী চম্পক, শারদাঞ্জলি ফোরামের সভাপতি রিপন সাহা, সহ-সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাস প্রমুখ।
আরো বক্তব্য রাখেন জেলা ঐক্য পরিষদ নেতা সুশীল সাহা, লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, সঞ্জীত কুমার পোদ্দার, সুকমল কর রামু, অভিজিৎ রায়, গৌতম কুমার রায় চৌধুরী, যুবরাজ দাস, তপতী কর প্রমুখ।
এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সদর উপজেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদার, মতলব উত্তর উপজেলা সভাপতি রাধেশ্যাম সাহা (চান্দু বাবু), সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস, মতলব দক্ষিণ উপজেলা সভাপতি গণেশ ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক বাদল নন্দী, হাজীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক স্বপন কুমার পাল, সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন, হাজীগঞ্জ পৌর কমিটির সভাপতি লিটন পাল, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ডাঃ পরেশ পাল, সাধারণ সম্পাদক তপন মজুমদার, লিটন দাস, ফরিদগঞ্জ পূজা পরিষদ সভাপতি হিতেষ শর্মা, সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস, শাহরাস্তি উপজেলা সভাপতি ডাঃ কমল চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মাধু দাস, হাইমচর উপজেলা সভাপতি অজয় কৃষ্ণ মজুমদার, চাঁদপুর পৌর ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ ভাস্কর দাস, জেলা ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি অপু বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক অতনু সাহা প্রমুখ।
গণঅনশনে গণসংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সুদীপ কর তন্ময়, মনোজ আচার্যী, স্বজল সাহা, অর্পণা রাণী দাস, পার্বতী চক্রবর্তী ও শুভজিৎ কর।
গণঅনশনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে চাঁদপুর সদরসহ উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মিছিল সহকারে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছতে শুরু করেন। তাদের দেয়া ধর্মে ধর্মে বিভেদ নাই, বিভেদ সৃষ্টিকারীদের ধ্বংস চাই, ধর্মীয় রাষ্ট্র নয় ধর্ম নিরেপক্ষ রাষ্ট্র চাইসহ বিভিন্ন শ্লোগানে শ্লোগানে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত হয়ে উঠে। গণঅনশনে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, চাঁদপুর পৌর পূজা উদযাপন পরিষদ, শারদাঞ্জলি ফোরাম, জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, চাঁদপুর মহাশ্মশানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের নেতৃবৃন্দের ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। অনশনকারীদের সুবিধার্থে অনুষ্ঠানস্থলে সুসজ্জিত প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়। অনশনকারীসহ প্রগতিশীল মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিতে সুসজ্জিত বিশাল প্যান্ডেল ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ।