প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২২, ১৪:০৬
একই ম্যাচে দুইবার জিতলো বাংলাদেশ!
ছোট গল্পের মত ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’- বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ম্যাচের শেষটা তখনও বাকি ছিল। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের চোখ তখন টিভির স্কিনে। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সহজ ম্যাচের কঠিন সমীকরণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানো জিম্বাবুয়ে দিকেই ম্যাচটা ঝুলে ছিলো। শেষ ওভারের শেষ বলে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিলো ৫ রান। একটি বাউন্ডারি নিতে পারলেই ম্যাচ ড্র৷ তারপর সুপার ওভার! আর ছক্কা হাঁকালে জিম্বাবুয়ে শুধু ম্যাচই জিতবে না ৫ পয়েন্ট নিয়ে উঠে যাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
|আরো খবর
বোলিংয়ে তখন মোসাদ্দেক হোসেন আর ব্যাটিংয়ের স্ট্রাইক প্রান্তে জিম্বাবুয়ের ৩১টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলা ব্যাটসম্যান মুজারাবানি। বাড়তি চাপ নিয়ে ইনিংসের শেষ বলটি করেন মোসাদ্দেক। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিস করলেন ব্লেসিং মুজারাবানি। হলেন স্টাম্পিং। ৪ রানে জিতে সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকে থাকল সাকিব আল হাসানের দলের। ৭ হাজার কি.মি. দূরে বসে টিভি স্কিনে খেলা দেখা বাংলাদেশের হাজারো ক্রিকেট ভক্ত তখন শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জয়ের আনন্দে নাচছে।
টেলিভিশন আম্পায়ার যখন শেষ বলে মুজারাবানির স্টাম্পিং দেখছিলেন, সেটিকে মনে হচ্ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। সাধারণ আমজনতা রিপ্লে দেখে নূরুল হাসান সোহানের ক্যাচের প্রশংসাও করছিলেন। সাধারণ চোখ যখন দেখছে একটি অনবদ্য ক্যাচ, টিভি আম্পায়ারের কাছে তখন তা মনে হলো স্পষ্ট নো বল! শেষ বলে বাংলাদেশ উইকেটকিপার বল ধরেছেন স্টাম্পের সামনে থেকে!
এমসিসিতে ক্রিকেট আইনের ২৭.৩.১ ধারায় বলা আছে, ‘স্ট্রাইক প্রান্তে স্ট্রাইকারের ব্যাট বা গায়ে লাগা, স্ট্রাইক প্রান্তের উইকেট অতিক্রম করা বা স্ট্রাইকার রান নেওয়ার চেষ্টা করার আগপর্যন্ত উইকেটকিপারকে স্টাম্পের পেছনে থাকতে হবে।’
সোহান মানেননি সে আইন। করমর্দন করতে থাকা দুই দলের খেলোয়াড়েরা নেমে আসেন আবার। স্বাভাবিকভাবেই চাপ আরও বাড়ে মোসাদ্দেক ও বাংলাদেশ দলের ওপর। এবার জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪ রান। আবারো স্ট্রাইক প্রান্তে মুজারাবানি আর নন স্ট্রাইকে ১১৬ স্ট্রাইক রেটের সেট ব্যাটসম্যান রয়ান বার্ল।
আবারো আতঙ্ক বাড়লো ক্রিকেট ভক্তদের মনে। ব্যাটে বলে টাইমিং মিললে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবনের গাবা স্টেডিয়ামে একটি বাউন্ডারি হাঁকানো ছিলো মামুলী ব্যাপার। ভয়-আতঙ্ক-শঙ্কা নিয়ে ফ্রি হিট বলটি করলেন মোসাদ্দেক। এবারো সজোরে হাঁকালেন মুজারাবানি। বল ব্যাটে লাগেনি। খানিকটা সময় নিয়ে বল তালুবন্ধি করলেন সোহান৷ ভাঙ্গলেন স্ট্যাম্প। নিশ্চিত জয় জেনেও সাকিব আম্পায়ারকে প্রশ্ন করলেন এবার কী? আম্পায়ার জানালেন, দিস ইজ বল। বাংলাদেশ জয়ী হলো ৩ রানে।
ম্যাচ হেরে বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি জিম্বাবুয়ে। ব্যাট হাতে ব্যাক্তিগত ৬৪ রান করা জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক শন উইলিয়ামস এমন ঘটনাকে বলেছেন, ‘অদ্ভুত’! যদিও সাকিব আল হাসান বলেছেন, রিচার্ড এনগারাভা আগের বলে স্টাম্পিং হওয়ার পরই নুরুলকে সতর্ক করেছিলেন তিনি, ‘তুমি স্টাম্পের বেশ কাছে চলে গেছ! সতর্ক থেকো।'
উইকেট কিপার নুরুল হাসান সোহন সাকিবের সতর্কতা মনে রাখেননি বলেই ৪ রানে জেতা ম্যাচ আনন্দ উৎসব শেষে দ্বিতীয়বার জিততে হলো ৩ রানে। ম্যাচ শেষে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হলেন ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেয়া বোলার তাসকিন আহমেদ। এবারের বিশ্বকাপে দল হিসেবে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যাই হোক, ব্যক্তি হিসেবে তাসকিন আহমেদ দুর্দান্ত। এখনও পর্যন্ত খেলা তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই প্রথম ওভারে উইকেট নেয়ার নজির গড়লেন তিনি।
বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ ২ নভেম্বর ভারতের সাথে।