প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ঈদের নতুন টুপি
২ দিন পরেই ঈদ। মনে অনেক আনন্দ বিরাজ করছে। বাবাকে বললাম ঈদে আমার নতুন টুপি লাগবে। বাবা বলল কাল কচুয়া বাজার থেকে টুপি কিনে দেবে। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। রোজা মোটামুটি সবগুলোই রেখেছি। মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে সবার আগে চলে যেতাম। কখনো কখনো সবার আগে গিয়ে এশার আজানও দিতাম। সামনের কাতারে বসলে মুরব্বিরা পিছে দিয়ে দিত। তখন মনটা খুব খারাপ হত। তারপরেও নামাজ শেষ করে ফিরে যেতাম। কাল বাবা আমাকে নতুন টুপি কিনে দিবে কি আনন্দ লাগছে। আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ চট্টগ্রামে থাকে। ঈদের আগের ২/৩টি বাস রিজার্ভ করে সবাই একসাথে চলে আসে। যাদের আত্মীয় স্বজন আছে তারা বাঁচাইয়া ব্রিকফিল্ড এসে অপেক্ষা করে। আমার কিন্তু কোনো আত্মীয় চট্টগ্রাম থেকে আসছে না। তবুও আমি অন্যান্য ছেলেদের সাথে ব্রিকফিল্ড গিয়ে বাসের অপেক্ষা করছি। ততক্ষণে বাড়িতে আমাকে খোঁজাখুজি শুরু হল। বাবা বলেছিল আমাকে নিয়ে কচুয়া বাজারে যাওয়ার জন্য। সবাই ভেবেছে আমি ব্রিকফিল্ড আছি। ঠিক তাই আমি সেখানেই আছি। আমার দুই বড় ভাই গাড়ি নিয়ে ব্রিকফিল্ড আসল। আমাকে ডাক দিয়ে গাড়িতে তুলবে ততক্ষণে এক মহিলা ঢাকা যাবে। বাস আসল মহিলা বাসে উঠে গেল, আর বাসের হেলপার আমাকে মহিলার ছেলে ভেবে কুলে করে বাসে তুলে ফেলল। আমি তখন কান্নাকাটি শুরু করলাম। বড় ভাইয়া গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে বাস থামিয়ে আমাকে বাস থেকে নামিয়ে নিল। পরে গাড়ি করে গেলাম কচুয়া বাজার। বাবা ব্যবসার সুবাধে বেশিরভাগ সময়ই কচুয়া বাজারে থাকতেন। বাবা আমাকে নিয়ে শপিংমলে গেলেন। আমি গিয়েই বলি বাবা আগে আমাকে টুপি কিনে দাও। আমার অন্য কোনো পোশাকের প্রতি এত আকর্ষণ ছিল না। শুধু টুপি। বাবা আমাকে পাঞ্জাবি, পা-জামা, টুপি ও জুতা কিনে দিলেন। আমি তো মহাখুশি। বাবা আমাকে এগুলো কিনে দেয়ার পর বাবার দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম বাবাও অনেক খুশি। বাড়ি এসে আমার ঈদের পোশাকগুলো মাকে দেখালাম। মা নতুন পোশাকগুলো অনেক পছন্দ করেছে। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে তড়িঘড়ি করে গোসল করে ঈদের নতুন পোশাক পরে নিলাম। টুপিটা মাথায় দিয়ে প্রথমে দাদার কাছে গেলাম। দাদাতো আমাকে খুশিতে ঈদ সালামি দিলেন পাঁচ টাকা। দাদার দেয়া পাঁচ টাকা যে আনন্দ দিয়েছে এখন আমাকে ৫ হাজার টাকাও সে আনন্দ দেয় না। ঈদগাহে যাওয়ার সময় কিছুক্ষণ পর পর মাথা থেকে টুপি খুলে দেখি। টুপিটা আমার কী পরিমাণ পছন্দ হয়েছে বুঝাতে পারব না। আজ কত পোশাকাদি আছে। কিন্তু সেই ঈদের নতুন পোশাক আর টুপি যে আনন্দ দিয়েছে এখন আর সে আনন্দ নেই। ঈদের আনন্দে মেতে উঠুক সবাই। খুশির জোয়ার ভেসে যাক সবখানে সেই প্রত্যাশা।
সাইফুল ইসলাম সুমন, প্রচার সম্পাদক, কচুয়া প্রেসক্লাব ও সভাপতি, প্রাণের টানে রক্তদান।