বিশুদ্ধ প্রেম ও কিছু কথা

বর্তমান যুগে বিশুদ্ধ প্রেম খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। আমরা যে প্রেমগুলো সচরাচর দেখি সেগুলো বিশুদ্ধ প্রেম না। আসলে সেগুলো অবিশুদ্ধ প্রেম। আর এই প্রেমগুলো টিকে আছে দৈহিক সম্পর্কের জন্যে। ইদানীং অনেকেই বলছেন ভার্চুয়ালি বিশুদ্ধ প্রেম হচ্ছে। সত্যি বলতে ভার্চুয়ালি কোনো বিশুদ্ধ প্রেম নেই, এমনকি বিশুদ্ধ প্রেমিকাও না। ইনবক্সে প্লেবয়দের ব্রা’র হুক আর শার্টের বোতাম খোলার ভিড়ে বিশুদ্ধ প্রেমিকরা রাজনীতিবিদদের মতো অসহায় হয়ে পড়ে আছে, তাদের কলমে এখন আর কবিতা আসে না! আগে একেকটা প্রেমিক ছিলো একেকটা কবি। এই বিশুদ্ধ প্রেমিকরা রাত জেগে জেগে ভুল বানানে চিঠি লিখতো। এই চিঠির মাঝে পংক্তি মিলিয়ে মিলিয়ে কবিতাও লিখতো। তারপর সেই চিঠি প্রেমিকাকে ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে দিয়ে পৌঁছে দিতো। এভাবেই চলতো বছরের পর বছর। এভাবে চলতে চলতে একদিন তারা দেখা করার জন্যে বায়না ধরতো। দেখা হলে বড়োজোর একটা গোলাপ দিতো, বসে বসে কথা হতো। আর যদি কোনোমতে প্রেমিকাকে একটা চুমু খাওয়া যেতো, সেই চুমু ইতিহাস হয়ে থাকতো প্রেমের। তারপর একদিন সেই প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যায়, তখন প্রেমিক রাস্তার পাশে বসে বিরহের গান শুনতো--

‘বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়ে হাইট্টা যায়,

ফাইট্টা যায়,

বুকটা ফাইট্টা যায়’

প্রেমিক চলে যাবার অনেকদিন পরও ডায়েরীর ভাঁজে রাখা শুকনো গোলাপের পাপড়ি, পুরানো চিঠি আর পুরানো চুমুর স্পর্শের কথা ভেবে কেঁদেকেটে অস্থির হতো প্রেমিক মন এবং হতে থাকতো অবিরত।

আর এখন প্রথম দেখা হলেই বলে, হায়.,হ্যালো, তোমার ফোন নাম্বার দাও। পরেরদিন দেখা করে বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসি? তারপর শুরু হয় ভিডিও কলে আবদার : একটা বুকের ছবি দাও। এভাবে না... খুলে দাও। দুদিন পরে কাছে আসা। রুমে চলো। ভিডিও চলছে...। কিছুদিন যাবার পর, একজন আরেকজনের প্রতি অভিযোগ শুরু হয়ে যায়। একপর্যায়ে একজন প্রেম থেকে বেরিয়ে শুধু বন্ধু হিসেবে থাকতে চায়। অন্যজন তাদের সেই ভার্চুয়াল বিশুদ্ধ প্রেমের পর্ণছবি, কল রেকর্ড, ইমো রেকর্ড, ফেসবুক চ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট করা স্কীনশর্ট দিয়ে প্রমাণ করে তার অনেক দিনের প্রেম ছিলো। এই হলো বর্তমান যুগের ভার্চুয়াল প্রেম।

পরিশেষে বলতে হয়, এতো বিষাদে ভরা, হিংসায় ভরা, যুদ্ধে ভরা, ধ্বংসে ভরা, ছিন্নভিন্ন মানসিকতায় ভরা মনুষ্য সমাজে কেউ যদি একটু সুখ খুঁজে নেয়, তাই বলে ভাববে না বিশুদ্ধ প্রেম নেই? বিশুদ্ধ প্রেম যুগে যুগে, কালে কালে, প্রহরে প্রহরে বিশুদ্ধ ছিলো, বিশুদ্ধ আছে আর বিশুদ্ধই থাকবে সবসময়।