সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

অনেক নীরবে চলে গেলেন তিনি !

অনেক নীরবে চলে গেলেন তিনি !
অনলাইন ডেস্ক

লাক মুখে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে জানা যায়নি তিনি অসুস্থতার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। গত ক’টি বছর ধরে তিনি কেনো যেন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তাঁকে খুব একটা মুখর দেখা যায়নি। চাঁদপুর শহরের বাসা থেকে তিনি মসজিদে যেতেন নামাজ পড়তে একেবারে নিরিবিলিভাবে। সত্তরোর্ধ্ব ছিলেন বলে বার্ধক্য তাঁকে শারীরিকভাবে কাবু করেছিলো ঠিকই, সেজন্যে কি তিনি মানসিকভাবেও কাবু ছিলেন?

চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন একটি বহুল আলোচিত ইউনিয়ন হচ্ছে মৈশাদী। এটি শহরতলীতে অবস্থিত। চাঁদপুর পৌর এলাকার পূর্ব দিকে সম্প্রসারিত হয়েছে এই ইউনিয়নের বিরাট অংশ কেটে নিয়ে। এই ইউনিয়নেরই নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন মোখলেসুর রহমান মিজি, যখন এ ইউনিয়নটি সাবেক সামগ্রিকতায় ঋদ্ধ ছিলো। তিনি প্রথম মেয়াদে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুনামের সাথে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শুধু জনপ্রতিনিধিই ছিলেন না, ছিলেন একজন বিদ্যোৎসাহী। ১৯৭৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪০ বছর যাবৎ তিনি জেলার অন্যতম প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাবুরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি/গভর্নিং বডির সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তন্মধ্যে দু মেয়াদে ৮ বছর সভাপতির দায়িত্বপালন করেন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করতে নিরলস প্রয়াস চালান। তিনি ছিলেন এককালের খ্যাতিমান ফুটবল খেলোয়াড়। স্কুল পর্যায়, থানা/উপজেলা পর্যায়, বিভাগীয় পর্যায় এবং জাতীয় পর্যায়ে তিনি নৈপুণ্যের সাথে ফুটবল খেলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। সবচে’ বড় কথা, তিনি ছিলেন ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে তিনি সরে দাঁড়াননি এক মুহূর্তের জন্যেও। তিনি সদালাপী, পরোপকারী, মিষ্টভাষী ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন।

গত ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডস্থ বাসায় মোখলেসুর রহমান মিজি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী (চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র শাহনাজ রহমান), ১ ছেলে ও ১ মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ বহু আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে তথা রোগের তীব্রতায় ভুগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার খবর কেউ জানতো না। এমনকি তিনি শয্যাশায়ী হয়ে বাসায় রোগযন্ত্রণা ভোগার খবরও সাধারণ্যে জানা ছিলো না। যে কারণে তাঁর মৃত্যু সংবাদে তাঁর নিজ ইউনিয়ন মৈশাদীর লোকজনসহ পরিচিত মহল যেনো একটা আকস্মিক ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে। মৃত্যুর পূর্বে তিনিও খুব বেশি কাউকে শেষ দেখা দেখতে চান নি, আর খুব বেশি লোকও জীবদ্দশায় তাঁকে শেষ দেখা দেখতে পারেন নি। সেজন্যে মোটামুটি পরিণত বয়সে মোখলেসুর রহমান মিজির মৃত্যুকে কেউ কেউ আকস্মিক মৃত্যুও বলেছেন। কেননা অনেকটা নীরবেই তিনি চলে গেলেন।

মঙ্গলবার রাতে মোখলেসুর রহমান মিজিকে দাফনের পূর্বে বাবুরহাট হাই স্কুল মাঠে আয়োজিত বিরাট জানাজার প্রাক্কালে দলমত নির্বিশেষে সকল স্তরের সুধীবৃন্দ স্মরণের আভরণে যেভাবে তাঁকে আভরিত করেছেন, এমন সম্মান অনেক বড় সৌভাগ্যবান ও ভালো মানুষ না হলে সাধারণত কেউ পায় না। আমরা মৈশাদী ইউপির জনপ্রিয় চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমান মিজির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়