রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

গণতন্ত্রের সৌন্দর্য নির্বাচন স্বরূপেই থাকুক

অনলাইন ডেস্ক
গণতন্ত্রের সৌন্দর্য নির্বাচন স্বরূপেই থাকুক

গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো বহুমতের সমন্বয়। সবার মত প্রকাশের সমান স্বাধীনতা আছে। আবার কারো মত না প্রকাশ করারও স্বাধীনতা আছে। মত যে প্রকাশ করতেই হবে তা যেমন নয় তেমনি মত প্রকাশ করলেই তা বাস্তবায়িত হবে তা নয়। এখানে সংখ্যাগরীষ্ঠতার একটা ব্যাপার রয়েছে। গণতন্ত্রকে সফল করার এক অনন্য উপায় হলো সময়মত নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রে সরকার গঠিত হয়। কাজেই নির্বাচনে দলমত নির্বিশেষে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দমত যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। এই একটি ভোটের মাধ্যমে পাঁচ বছরের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে যারা সরাসরি দেশ পরিচালনায় অংশ নিবে। কাজেই কোনো অজুহাতেই একজন আদর্শ নাগরিকের ভোট বর্জনের সুযোগ নেই যদি তা যথাযথ শর্তাবলি পূরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কা ও প্রার্থী দিয়ে ভোটারদের কাছে সরাসরি ভোট চেয়ে যেমন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হয় তেমনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানানোও একরকম নির্বাচনে অংশ নেওয়া। অর্থাৎ শেষ মুহূর্তে এসে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রকৃতি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনেই পর্যবসিত হলো বলে প্রতীয়মান হয়। এখন দেখবার বিষয় হলো ভোটাররা কি ভোট কেন্দ্র গিয়ে ভোট দিয়ে নিজেদের রায় দিবে, নাকি ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে ভোটের বিপক্ষে রায় দিবে। যাই হোক না কেন, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয় এবং যার ভোট সে যাতে দিতে পারে এবং নির্বাচনোত্তর সহিংসতা যাতে না হয় সেটাই আমজনতা হিসেবে আমাদের কাম্য।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কার কেমন প্রত্যাশা তা আজ মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। তবে দুঃখের সাথে বলতে হয়, কবি কাজী নজরুল শতবর্ষ আগেই ঔপেবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে 'বিদ্রোহী' কবিতা রচনা করে বিশ্বে সাড়া ফেলে দিলেও আজও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও নেতারা বিদেশিদের প্রভুর চোখে দেখেন। তারা কথায় কথায় দেশের ব্যাপারে বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেন এবং তাদের বন্ধু না বানিয়ে প্রভুর মর্যাদায় আসীন রাখেন। রবার্ট ক্লাইভকে দিয়ে যে বেনিয়ারা এদেশের মসনদে বসেছিলো কেবলমাত্র আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতার জন্যে, সেই বেনিয়া বা তাদের দোসর ও সিন্ডিকেট আজ তাদের রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে আমাদের স্বাধীনতা ও সামর্থ্যকে খর্ব করতে চাইছে। আজ বিশ্ব মোড়লেরা আমাদের স্যাংশনের জুজুর ভয় দেখালে একপক্ষ খুশি হয়। আবার একপক্ষ শান্তিপূর্ণ সমঝোতার চেষ্টাতে রাজনীতি ঢুকিয়ে একটা টানাপোড়েন জিইয়ে রেখেছে। এমতাবস্থায় নির্বাচন হয়ে গেলেও আদৌ উৎসবমুখর ও স্বতঃস্ফূর্ত হবে কি না সে বিষয়ে সংশয় রয়ে যায়। আমরা যারা আমজনতা আছি, আমরা চাই, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জনগণের প্রদেয় করের মূল্যবান অর্থের যাতে অপচয় না হয়। যে কোনো অজুহাতে যাতে নির্বাচন বারে বারে অনুষ্ঠান করতে না হয়। আমাদের মতো অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে মিতব্যয়ী ও বিচক্ষণ হওয়া জরুরি। কষ্টার্জিত অর্থে বারে বারে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা বোকামোর নামান্তর। অনেকটাই নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারার মতো।

একটা সময় ছিলো যখন একটা ঠাণ্ডা পানীয় পান করানো কিংবা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার রিকশা ভাড়া দিলেই ভোট বিক্রয় হয়ে যেত। এখন সেই চিত্র পাল্টেছে। এখন হয়তোবা নগদে-বিকাশে এসে তা ঠেকেছে এবং এজন্যে পাঁচশ থেকে হাজার টাকা বরাদ্দ থাকে ভোটপ্রতি। আজকাল সেই সমস্যা কিছুটা কমে এলেও এখন আবার রাতের ভোটের একটা অপবাদ এসে জুটেছে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা অত্যুৎসাহী হয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চায়। এতে একটি সর্বাত্মক সুষ্ঠু নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। আমরা চাই, এ ধরনের অতি উৎসাহীরা যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলেন তা যেন নিশ্চিত করা হয়। আগে আশেপাশের জংলায় বা ডোবায় কিছু কিছু ব্যালটবক্স লুকিয়ে রাখা হতো। এবার আশা করবো, তেমন কিছু যাতে না হয়। গৃহকর্ত্রী ও গৃহকর্মীরা যাতে সকল কাজ সেরে দুপুর তিনটের সময়ও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজের হাতে দিতে পারে সেটা যেনো কঠোরভাবে নিশ্চিত করা যায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক বিশ্বজুড়ে রোল মডেল। মত ও পথের স্বাধীনতা যাতে বজায় থাকে। ভোটাররা যেনো প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। কাকে সংসদে পাঠাবেন তা যেনো তারা জেনে বুঝে পাঠান। শিক্ষিত, দেশপ্রেমী, সৎ ও জনদরদী মানুষই হওয়া উচিত আদর্শ জনপ্রতিনিধি। কোনো প্রলোভনে নয়, প্রার্থী বাছাই হোক যোগ্যতায় ও আদর্শে। জনপ্রিয় প্রার্থীর চেয়ে জনকল্যাণমুখী প্রার্থীকে সংসদে পাঠানো অধিক যুক্তিসংগত। যে বা যারাই আসুক ক্ষমতায়, উন্নয়নের চলমান ধারা যাতে অব্যাহত রাখা যায় সেদিকেই মনোনিবেশ করা উচিত। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রত্যাশা, আদর্শের যেন জয় হয়, সততা ও দেশপ্রেমের যেন জয় হয়। সর্বোপরি বাংলাদেশ যেন বিশ্ব মোড়লদের কূটচালকে জয় করে নির্দিষ্ট অভীষ্টে এগিয়ে যেতে পারে। নির্বাচনোত্তর সহিংসতা যাতে না হয়, সংখ্যালঘুরা যাতে আর দুহাজার এক সালের পরিণতি বরণ না করে। একটি সুস্থির রাজনৈতিক সংস্কৃতি যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়, আমরা সেই আকাঙ্ক্ষায় জানুয়ারি সাত তারিখের তথা আজকের পথ চেয়ে বসে আছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়