প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৯
কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে চ্যালেঞ্জ : আলুর বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব

চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা যখন কেজি প্রতি মাত্র ৫ থেকে ৭ টাকা দরে আলু বিক্রি করেছেন, তখন বাজারে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এই ব্যবধান ইঙ্গিত করে যে, মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রতি কেজিতে ১৩ বা ১৫ টাকা লাভ করেছেন। যেখানে প্রকৃত উৎপাদকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গত বছর আলুর বাজার দর বাড়তি থাকায় এ বছর চাঁদপুর জেলায় আলু আবাদে আগ্রহ বাড়ে কৃষকদের। একই সঙ্গে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়
আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির পরও কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত কয়েক বছর চাঁদপুরে আলু আবাদে কৃষকদের লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে এবার আলুর ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। উত্তোলনের পর শুরু হয়েছে বিক্রি।
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় আলু চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিকাজ হলেও উৎপাদক কৃষকরা এখনও তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব এবং সরাসরি বিক্রির সুযোগের অভাব কৃষকদের এই সংকটে ফেলছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, এই বছর আমি ৫০ মণ আলু বিক্রি করেছি। প্রতি কেজিতে মাত্র ১২ টাকা পেয়েছি, অথচ উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ১৪ টাকা। লোকসান গুণে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বাজারে সরাসরি বিক্রির সুযোগ নেই, আড়তদার বা দালালের মাধ্যমেই সব কিছু করতে হয়।
অন্যদিকে স্থানীয় এক আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরাও বাজারে দাম অনুযায়ী কিনি। কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনে আমাদেরও পরিবহণ, সংরক্ষণসহ নানা খরচ হয়। লাভ তো সবাই করতে চায়।
এই অবস্থায় সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, আমরা কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করছি। তবে বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনতে স্থানীয় প্রশাসন ও বাজার কমিটির যৌথ উদ্যোগ দরকার।
বিভিন্ন বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, কৃষকদের সরাসরি বিক্রির জন্যে আলাদা স্থান নির্ধারণের চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এতে সময় লাগবে।
অর্থনীতিবিদ ড. শামীম হোসেন বলেন, কৃষিপণ্যের বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষক-বাজার সংযোগ বৃদ্ধির জন্যে ডিজিটাল বিপণন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। সরকার চাইলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব।
কৃষকদেরকে বলা হয় দেশের উৎপাদনের মূল কারিগর। কিন্তু সে কারিগর যদি লোকসানের বোঝায় ভারাক্রান্ত হয়, তাহলে চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে অনেকেই—এমনটাই শঙ্কা জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে, চাঁদপুরের কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানোর জন্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।