প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৬
চাঁদপুরে মরিচ চাষ লাভজনক হবার সম্ভাবনা

মরিচ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ও মসলা ফসল। রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক মূল্যও অত্যন্ত বেশি। চাঁদপুর জেলার কৃষি খাতে মরিচ চাষ একটি উল্লেখযোগ্য দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতি বছর এই জেলায় মরিচের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জন ভিন্ন হয়ে থাকে। আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ এবং সঠিক জাতের ব্যবহারে এ খাতে আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
মরিচ চাষের বর্তমান অবস্থা (চাঁদপুর) :
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী মোট মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১,৯০০ হেক্টর, সম্ভাব্য উৎপাদন ৩,৪২০ মেট্রিক টন।
উপজেলাভিত্তিক চাষ ও উৎপাদন
চাঁদপুর সদর : ২১০ হেক্টর, ৩৭৮ মেট্রিক টন;
মতলব উত্তর : ৫২০ হেক্টর, ৯৩৬ মেট্রিক টন;
মতলব দক্ষিণ : ৭০ হেক্টর, ১৬২ মেট্রিক টন;
হাজীগঞ্জ : ৯০ হেক্টর, ১৬২ মেট্রিক টন;
শাহরাস্তি : ২০ হেক্টর, ৩৬ মেট্রিক টন; কচুয়া : ৬৫ হেক্টর, ১৮৭ মেট্রিক টন;
ফরিদগঞ্জ : ৪৫ হেক্টর, ৮১ মেট্রিক টন;
হাইমচর : ৭৮০ হেক্টর, ১,৫৮৪ মেট্রিক টন।
চাষের উপযুক্ত পরিবেশ : মরিচ চাষের জন্যে দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটি উপযোগী। পর্যাপ্ত রোদ, পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা এবং ২৫-৩৫ক্কসে. তাপমাত্রা সবচেয়ে উপযোগী।
দাম বিশ্লেষণ : মরিচের বাজারমূল্য মৌসুমভেদে পরিবর্তিত হয়। চাষ মৌসুমের শুরুতে দাম কম থাকলেও গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে দাম বাড়ে। প্রতি কেজি শুকনা মরিচের দাম ১৫০-২২০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করে।
কৃষকের অভিজ্ঞতা : মতলব উত্তর, হাইমচর ও হাজীগঞ্জের কৃষকরা জানিয়েছেন, উন্নত জাত ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে ফলন অনেক বেড়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে আগাছা ও রোগ কম হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কমেছে। তবে অনেক সময় কীটনাশক ও সারের দাম বৃদ্ধির কারণে লাভের পরিমাণ কমে যায়। কৃষকরা বাজারের স্থিতিশীলতা ও সরকারি সহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানান।
সরকারি সহায়তা : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাষিদের প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছে। কিছু এলাকায় মরিচ চাষে প্রণোদনা দেওয়া হয়। তবে অধিক সহায়তা ও বাজার সংযোগের উন্নয়ন প্রয়োজন।
রোগবালাই ও প্রতিকার :
ঢলে পড়া রোগ : রিডোমিল স্প্রে করা;
ফল পচা, পোকার আক্রমণ : বালাই ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে জৈব পদ্ধতিতে দমন সম্ভব।
সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ : শুকিয়ে গুঁড়ো বা সম্পূর্ণ মরিচ সংরক্ষণ করা হয়। স্থানীয় ও জাতীয় বাজার ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা রয়েছে।
উন্নত জাত ও প্রযুক্তি :
বারি মরিচ-১, বারি মরিচ-২, বারি মরিচ-৩
হাইব্রিড জাত।
মালচিং পদ্ধতি
ড্রিপ সেচ পদ্ধতি
রঙিন স্টিকি ট্র্যাপ দ্বারা পোকা দমন।
অর্থনৈতিক দিক : প্রতি হেক্টরে খরচ ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। ফলন গড়ে ২.৫ থেকে ৪.৫ টন। বাজার দর অনুযায়ী লাভ ৫০% পর্যন্ত হতে পারে।
চাঁদপুরে মরিচ চাষ একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় খাত। প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে এ খাত আরও সম্প্রসারিত হতে পারে।