প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
টিআইবির সাথে আমরাও একমত

রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোর অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ১৯ ডিসেম্বর সংস্থাটির দেওয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়েছে। গণপরিবহনে আগুন, ট্রেন লাইন কাটা ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক ঘটনা থেকে বের হয়ে আসার জন্য রাজনৈতিক মহলকে আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ট্রেনের একটি বগি থেকে মা, শিশু সন্তানসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মানুষ পুড়িয়ে কীসের রাজনীতি? ক্ষমতা কি মানুষের জীবনের থেকে বেশি মূল্যবান? মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতির অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের মূল উদ্দেশ্য যে প্রক্রিয়ায় জনকল্যাণ থেকে সরে ক্ষমতায় স্থির হয়, ঠিক সেই প্রক্রিয়ায়ই রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা প্রকটতর হতে থাকে। মানবতাকে জিম্মি করে, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের লাশকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা বা দলীয় এজেন্ডা হাসিলের জন্যে ব্যবহারের ঘটনাই সময়ের পরিক্রমায় আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। বিবদমান দুই রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের সকল মহলের কাছে আমাদের দাবি, নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গরম আর মাঠ দখলের নামে সকল প্রকার বলপ্রয়োগসহ মানুষের জীবননাশের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসুন।অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশের পথ থেকে সরে আসুন।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘চলমান আন্দোলনের মাঝে এসব ধারাবাহিক নৃশংসতার দায় আন্দোলনরত দলগুলো এড়াতে পারে না। আবার, এর পেছনে সরকারি মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ মিথ্যা হলে, তা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের। আমরা সত্যিকারের অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। নৃশংসতার সুযোগসন্ধানী রাজনীতি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের পথ হতে পারে না। অন্যদিকে সহিংসতা প্রতিরোধের নামে বলপ্রয়োগ, সংগঠনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা হবে, ঢালাও ধরপাকড় হবে, বিনা বিচারে মানুষ জেল খাটবে, তা-ও কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলেও মনে করে টিআইবি।
টিআইবির উপরোল্লিখিত বিবৃতির উপজীব্য বিষয় নিয়ে আমাদের দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই। আমরা কেন, সজাগ সচেতন বিবেকবান মানুষমাত্রই এমন বিষয়ে ঐকমত্য পোষণের বিকল্প নেই। টিআইবি নিয়ে সরকারি মহলে বিদ্যমান ভুল ধারণা অপনোদনে এই বিবৃতিটি কিছুটা হলেও কাজ দেবে বলে আমরা মনে করি। স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন ছাড়া কাগজে কলমে ও বাস্তবে যতোবড় সরকারবিরোধী শক্তিই হোক না কেন, নিতান্তই গতানুগতিক কর্মসূচিতে এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দ্বারা সরকারের ভিত নাড়াতে পারে না। রাজপথে সরব, শক্তিশালী, দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করা এবং কোনো অবস্থাতেই পালিয়ে না থাকাতেই সরকারকে ভাবিয়ে তোলা যায়, নড়বড়ে করা যায়। এর বাইরে চোরাগোপ্তা হামলা, জঙ্গিবাদী তৎপরতা, নাশকতা ইত্যাদি জনমনে আতঙ্ক ছড়ালেও সরকারকে ক্ষমতা ছাড়ার জন্যে ভাবিয়ে তোলে বলে মনে হয় না।