প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
পুরাণবাজারে ট্রলার/জাহাজ কাটা শিল্প?

‘ডাকাতিয়ার পাড়েই কাটা হচ্ছে’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে একটি সংক্ষিপ্ত সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে খুবই গুরুত্বের সাথে। প্রতিবেদনটিতে চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম লিখেছেন, চাঁদপুর শহরের ডাকাতিয়া নদীর পাড় লাগোয়া পুরানো লঞ্চঘাট সংলগ্ন পুরাণবাজার এলাকায় দিনের পর দিন চলছে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের ট্রলার, স্টিল বডি ও মিনি সাইজের জাহাজ কাটার কাজ। এর মধ্যে অনেক ট্রলারের কাগজপত্র ঠিক না থাকলেও স্থানীয় পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে বিভিন্ন ভাঙ্গারি দোকানের মালিক পরিবেশ দূষণ করে ট্রলার কেটেই যাচ্ছেন। সরকার দলের আত্মীয়-স্বজন পরিচয় দিয়ে তারা অবৈধভাবে এ কাজ করছেন বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানান। এ ব্যাপারে প্রশাসনের যেসব লোক পরোক্ষভাবে এ কাজের সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
এ প্রতিবেদনটি পড়ে সচেতন প্রতিজন পাঠক উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন নি। কেননা আমাদের দেশের যেখানেই জাহাজসহ বিভিন্ন নৌযান কাটা বা ভাঙ্গার কাজ হয়, সেখানকার ও সংলগ্ন চারপাশের পরিবেশ বিপন্নতায় আক্রান্ত হয়। চট্টগ্রাম নগরীর ঠিক উত্তরে সীতাকুণ্ডে (ফৌজদারহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায়) বঙ্গোপসাগরের সৈকতে জাহাজসহ বিভিন্ন নৌযান ভাঙ্গা ও কাটার ফলে সৃষ্ট পরিবেশের দিকে তাকালে বোঝা যায় নানা ধরনের বিপন্নতা। কিন্তু ওখানে জাহাজ কাটার কাজটি শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় কিংবা এর কদর থাকায় এই বিপন্নতা নিয়ে পরিবেশবাদীদের নেতিবাচক উচ্চারণ খুব একটা করতে দেখা যায় না।
চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার এলাকায় ডাকাতিয়ার পাড়ে যে স্থানটিতে ট্রলার কাটা হচ্ছে, তার অনতিদূরে চাঁদপুরের প্রাকৃতিক পর্যটনস্থল বড় স্টেশন মোলহেডের অবস্থান। যেখানটা ডাকাতিয়া, মেঘনা ও পদ্মা নদীর মিলনস্থল। এখানে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল পার্ক করার অনুমোদন দিয়েছে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সেমতে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে, চট্টগ্রাম-এর পক্ষ থেকে রিভার ভিউ পয়েন্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এর প্রাথমিক কাজ চলছে। এমতাবস্থায় নিকটবর্তী ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে যদি ট্রলার কাটার কাজ চলতে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়বে, যেটি পরিবেশকে বিপন্ন না করে পারবে না। বিশেষ করে পুরাণবাজার এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, এমনকি পানি দূষণের কবলেও পড়তে পারেন। সেজন্যে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দ সহ অন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে নিজেদের স্বার্থে সোচ্চার হতে হবে। ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা ও সরকার দলীয় লোকজনের আশ্রয়-প্রশ্রয়জনিত বিষয়টিকে যদি ন্যূনতম গুরুত্বের সাথে ভাবা হয়, তাহলে সেটি আত্মঘাতী হতে পারে বলে আমরা মনে করি।