রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

‘বঙ্গবন্ধু পার্কে’ শুধু রিভার ভিউ পয়েন্ট নয়, আরো কিছু হোক
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর শহরের পশ্চিম-উত্তর দিকে বড় স্টেশনের প্রান্তিক এলাকাটি একসময় ‘ঠোঁডা’ নামেই বহুল পরিচিত ছিলো। পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের কাজ করতে গিয়ে ‘ঠোঁডা’র শোভন নাম দেয় ‘মোলহেড’। মেঘনা, ডাকাতিয়া ও পদ্মার মিলনস্থল হিসেবে এই মোলহেড কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই নৌপর্যটন সম্ভাবনার আলোকে উদ্ভাসিত হয়। প্রতিদিন শত শত হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমীর স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখে চাঁদপুর পৌরসভা মোলহেডে পর্যটকদের বসা ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর সুবিধা নিশ্চিত করে এটিকে কিছুটা আকর্ষণীয় করে তোলে। চাঁদপুরের ১৬তম জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহার উদ্যোগে ও চাঁদপুর পৌরসভার অর্থায়নে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার স্মৃতিতে এখানে নির্মিত হয় স্মারক ভাস্কর্য ‘রক্তধারা’। এতে মোলহেডের রূপ কিছুটা হলেও দৃষ্টিনন্দন হয়। ১৮তম জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মণ্ডল যখন চাঁদপুরকে ব্র্যান্ডিং কনসেপ্টে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে’র কার্যক্রম নিয়ে এগুচ্ছিলেন, তখন তাঁর তাগিদে জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটির চাহিদায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ইলিশ ভাস্কর্য করে দিলে মোলহেডের সৌন্দর্য আরেক ধাপ বৃদ্ধি পায়। তিনি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এখানে কিছু অবকাঠামোগত সুবিধাদি নিশ্চিত করতে অনেকদূর অগ্রসর হয়েও রেল কর্তৃপক্ষ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হন। তারপর ১৯তম জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান এখানে স্থানীয় উৎস থেকে অর্থের সংস্থান করে ছোটখাট ওয়াক ওয়ে নির্মাণ করে দেন। চাঁদপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল চাঁদপুর শহরকে নান্দনিক করার ক্ষেত্রে তাঁর নির্বাচনপূর্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পৌরসভার সীমিত সামর্থ্যে মোলহেডে পর্যটকদের সুবিধা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হন। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি মোলহেডে যাতায়াতে বিদ্যমান রাস্তার বিপরীতে বিকল্প রাস্তা করে দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এ সময় স্থানীয় এমপি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সহযোগিতায় ও সর্বাত্মক সমর্থনে জেলা প্রশাসন মোলহেডে প্রবেশের গেটের সংস্কার করে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল পার্ক করার জোরালো উদ্যোগ নেয়, পাশে তো পৌরসভা ছিলোই। কিন্তু তখন এ সংক্রান্ত অনুমোদনের প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়।

তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ৯/৬/২০২১ তারিখে পত্র লিখেন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মু্জবিুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ বরাবর। সেমতে ২৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত ট্রাস্টের সভায় চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডকে ‘বঙ্গবন্ধু পার্ক’ করার বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। এ বিষয়ে ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন কর্তৃক ২৫ নভেম্বর ২০২১ তারিখে স্বাক্ষরিত পত্রে চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তিনি ২ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে অবহিতকরণ পত্রটি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে যোগাযোগ করা হয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর সাথে। তিনি অচিরেই তাঁর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু পার্ক’ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেও বাধ সাধেন রেলমন্ত্রী। তিনি রেলওয়ের অর্থায়নে পার্ক করার ব্যাপারে চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন। তারপর রেল প্রকৌশলীরা তাঁর নির্দেশে পরিকল্পনা গ্রহণ করে মোলহেডে ‘বঙ্গবন্ধু রিভার ভিউ পয়েন্ট’ করছেন বলে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে।

‘বদলে যাচ্ছে বড়স্টেশন মোলহেড ॥ অচিরেই শুরু হবে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ের কাজ’ শিরোনামের সংবাদে মিজানুর রহমান লিখেছেন, চাঁদপুর রেলওয়ে বড় স্টেশন মোলহেড এলাকাটিকে দৃষ্টিনন্দন করার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে। মাঠে বসানো অস্থায়ী দোকানপাট সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভেকু দিয়ে বেদখল জায়গা ও টংঘর উচ্ছেদসহ রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজে হাত দিয়েছে চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে ছোট আকারে বঙ্গবন্ধু রিভারভিউ পয়েন্টে প্রস্তাবিত ওয়াকওয়ের স্থান পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কুমিল্লার সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোরসালিন রহমানসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীগণ এবং কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াছ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোরসালিন রহমান জানান, চাঁদপুর মোলহেডের জায়গাটি যেহেতু রেলওয়ের, তাই রেলবিভাগ এটিকে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্যে উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানকার একটি নকশাও চূড়ান্ত করেছে। শহর রক্ষা বাঁধবেষ্টিত বঙ্গবন্ধু রিভার ভিউ পয়েন্টের এই জায়গায় অচিরেই দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে করা হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছে। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে। চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াছ জানান, চাঁদপুর শহরকে নান্দনিক শহরে পরিণত করতে পৌর মেয়র পরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ করছে। বড় স্টেশন পর্যটন কেন্দ্রের এই জায়গার সৌন্দর্য বাড়াতে চারদিকের রাস্তা প্রশস্ত ও পাকা করা হচ্ছে। মাছঘাট থেকে পার্ক গেইটসহ আশেপাশে অন্যরকম রাস্তা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বড়স্টেশনের সাবেক রিকশাস্ট্যান্ডে হবে অটোবাইক, রিকশাসহ অন্যান্য গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান। রেলওয়ের সাথে সমন্বয় করে আমরা রাস্তা বড় করার উদ্যোগ নিয়েছি।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে ‘বঙ্গবন্ধু পার্কে’র স্থলে ‘বঙ্গবন্ধু রিভার ভিউ পয়েন্ট’ করে দিচ্ছেন বলে তাঁকে চাঁদপুর জেলাবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারপরও পরিপূর্ণ পার্ক করার ব্যাপারে জেলাবাসীর দাবি কিন্তু থেমে যাবে না। আমরা মনে করি, রেল কর্তৃপক্ষ অর্থ সঙ্কটে ভুগলে পর্যটন মন্ত্রণালয়, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন ও পৌরসভাকে সাথে রেখে হলেও মোলহেডে ‘বঙ্গবন্ধু পার্ক’ শেষ পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে করাটাই বাঞ্ছনীয়। এজন্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার প্রয়োজনীয়তা বা অনিবার্যতা দেখা দিলে সেটিও গড়িমসি বা কালবিলম্ব না করে করা উচিত হবে আমরা মনে করি। দেশের জাতির পিতার নামে ‘বঙ্গবন্ধু পার্ক’ করার ব্যাপারে কারো কোনোরূপ গড়িমসি, গোঁয়ার্তুমি কিংবা শ্লথ গতি গ্রহণযোগ্য হবে না বা হতে পারে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়