প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ভূমিখাতে অনিয়ম কি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা?

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃতী সন্তান, সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব, বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর অন্যতম সদস্য মোঃ মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী ভূমিখাতে ব্যাপক সংস্কার করে বহুল আলোচিত ও পুরস্কৃত হয়েছেন। এর সুফল কিন্তু দেশবাসী ভোগ করছে। কিন্তু ভূমিখাতের অনিয়মটা যে অন্যান্য খাতের অনিয়মের মতো নয়। এই অনিয়ম যে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা, যা পুরোপুরি দূর হতে লাগবে যে অনেক সময়। সে কারণে প্রায়শই ভূমিখাতের অনিয়ম গণমাধ্যমের সংবাদের উপজীব্য হয়। যেমনটি গত বুধবার হয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠে।
'চাঁদপুরে বিএস খতিয়ানে করণিক ভুল সংশোধনে বিড়ম্বনা' শিরোনামের সংবাদে চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
মির্জা জাকির লিখেছেন বিস্তারিত। এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ হচ্ছে : চাঁদপুরে বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) খতিয়ানে করণিক ভুল সংশোধনের জন্যে ভুক্তভোগীদের বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কিংবা সঠিক পরামর্শ না পেয়ে মাসের পর মাস ভূমি অফিসগুলোতে ঘুরতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। আর এমন অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছেন ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারী। তারা ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। অথচ ২০১৫ সালে সরকার গেজেট আকারে স্থানীয় বা স্ব স্ব ভূমি অফিসকে করণিক ভুল সংশোধন করার ক্ষমতা প্রদান করেছে।
জানা গেছে, ’৯০ দশকে দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে বিএস সার্ভে হয়। এ সময় অনেক খতিয়ানে বেশ কিছু করণিক ভুল থেকে যায়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখা ১ হতে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে জারিকৃত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, করণিক ভুলগুলো বহুলভাবে পরিলক্ষিত হয় চূড়ান্ত বা প্রিন্ট খতিয়ানে। যার কারণে সাধারণ মানুষ তার নিজ সম্পত্তি হস্তান্তর কিংবা বিক্রয় বন্ধকসহ কোনো চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না। যা অল্প বা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্ব স্ব উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা সংশোধন করে সর্বসাধারণের সমস্যা লাঘবে সহায়তা করবেন। কিন্তু জেলার ভূমি অফিসগুলোতে মাসের পর মাস ঘুরলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা--এমন অভিযোগ সেবাপ্রার্থী অনেকের। ফরিদগঞ্জ উপজেলার জনৈক ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন জানান, তার খতিয়ানে মূল নামের স্থলে ডাক নাম চলে আসায় তা সংশোধনের জন্যে গত এপ্রিল মাস হতে প্রতি সপ্তাহে উপজেলা ভূমি অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করেও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কোনো সেবা পাচ্ছেন না। বরং দিন দিন হয়রানি বাড়ছে বলে জানা যায়। তার দাবি, আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় তহশীল অফিসের প্রতিবেদন চায় উপজেলা অফিস। স্থানীয় তহশীল অফিস সরজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তাদের প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু তারপরও অধিকতর নিশ্চয়তার জন্যে কুমিল্লা জোনাল স্যাটেলমেন্ট অফিসে প্রেরণ করেন। জোনাল স্যাটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করলে তারা জানান, মূল নামের স্থলে ডাক নাম চলে আসলে তা ভূমি মন্ত্রণালয়ের গেজেট মূলে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা স্বল্প সময়ের মধ্যে সংশোধন করে দিবেন। কিন্তু বিষয়টি উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে অবগত করলে তিনি তা আরো অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করেন। দেলোয়ার হোসেনের দাবি, ১৯৯২ সালে তিনি সরেজমিনে উপস্থিত না থাকায় স্থানীয়রা আমার ডাক নামে জরিপ কর্মকর্তাদের কাছে আমার জমিটি তালিকা করায়। ১৯৯৪ সালে আমি সাফকবালা মূলে স্থানীয় ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করি। বর্তমানে ক্রেতার ওয়ারিশগণ নামের করণিক ভুলের জন্যে তা খারিজ বা নামজারি করতে পারছেন না বলে জানান।
জানা গেছে, চাঁদপুর জেলার আটটি উপজেলায় প্রতি সপ্তাহে এমন সংশোধনী কেইস নিয়ে আসছেন অনেকে। কিন্তু করণিক ভুলের পরবর্তী গ্যাঁড়াকল থেকে ভুক্তভোগীদের বের হতে কষ্ট পেতে হচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা শুনানি করে নিষ্পত্তি করতে পারেন বলে ভুক্তভোগীরা মনে করেন। এ ব্যাপারে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার জানান, এসব করণিক ভুল যা সংশোধনযোগ্য তা করা হচ্ছে। হয়রানি অর্থাৎ মাসের পর মাস কোনো বিষয় ঝুলে থাকার কথা নয়, তারপরও কারো কোনো জটিলতা যা জেলা প্রশাসনের নিয়মের মাঝে থাকে, সেটি নিয়ে আসলে তা অবশ্যই সমাধান করে দেয়া হয় বলে জানান।
আমরা চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)-এর বক্তব্যে সরাসরি ঋজুভাব না দেখলেও ইতিবাচকতা ও সদিচ্ছা অনুধাবন করছি। আশা করি, তিনি চাঁদপুর জেলায় ভূমিখাতের এই অনিয়মটি দ্রুত নিরসনের ব্যাপারে কঠোর হবেন এবং একেবারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেবেন, যেখানে তাঁর অধীনস্থরা ন্যূনতম ফাঁকফোকর অনুসন্ধান না করে। আমরা ভূমিখাতে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা অনিয়ম দূরীকরণে ভুক্তভোগী জনগণের সচেতনতা ও সক্রিয়তাও প্রত্যাশা করছি।