বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ২৩:২২

সাত সেকেন্ডেই স্বপ্ন-সম্ভাবনা ছাই

অনলাইন ডেস্ক
সাত সেকেন্ডেই স্বপ্ন-সম্ভাবনা ছাই

‘ক্লাস শেষে আমি ক্যান্টিনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হই। তখন সময় আনুমানিক দুপুর একটা ১৮ মিনিট, বিমানের শব্দ শুনে আকাশের দিকে তাকাই, মনে হচ্ছিল বিমানটি দূরে কোথাও চলে যাবে। কিন্তু দুই সেকেন্ডের মধ্যেই এটি স্কুলের দিকে আসে এবং স্কুলের ভবনে আছড়ে পড়ে।’

এর ঠিক পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ডের মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। সর্বত্র আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা জাগো নিউজকে এভাবেই বর্ণনা করছিলেন স্কুল শাখার সিনিয়র শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘শব্দ শুনে আমি কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। একজন ছাত্র বলছিল স্যার আমাকে বাঁচান আমাকে পানি খাওয়ান। সবদিকে আগুন, আগুনের মধ্যে থেকে আমাদের এক মিস বললেন, আমাকে বাঁচান পানির ব্যবস্থা করেন।’ নিজে দগ্ধ হয়েও অনেক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা শিক্ষিকা মাহেরীনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওই ভবনের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন মাহেরীন ম্যাডাম। তিনি ছাত্রদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। উনি ১০ থেকে ১৫ জনকে বাঁচানোর জন্য বের করতে পেরেছিলেন। তারপর একটা সময়ে সেন্সলেস হয়ে যান। পরে উনি মারা গেছেন। বাকিদের আর বের করা যায়নি। যারা ছিল তারা সম্ভবত মারা গেছে অথবা পরবর্তীসময়ে উদ্ধারকারী বাহিনী বের করছে।’

কলেজ ছাড়া স্কুলের সবারই ছুটি হয়ে গিয়েছিল জানিয়ে বলেন, ‘বিমানটা যখন মাটিতে আছড়ে পড়ে, তখন কয়েকজন ছাত্র খেলছিল। অন্যদিকে দু-একজন অভিভাবক এসেছিলেন পানি বা খাবার খাওয়ানোর জন্য।’

‘আল্লাহ রহম করেছেন। আর মাত্র ১০ মিনিট আগে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে আমাদের আর রক্ষা ছিল না। কারণ তখন স্কুলে ক্লাস হচ্ছিল। এই ভবনে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থী ক্লাস করছিল। মাঠেও অনেক ছাত্র-ছাত্রী খেলছিল।’ বিমানটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুটি আওয়াজ হয় জানিয়ে বলেন, পড়ার ছয় থেকে সাত সেকেন্ডের মধ্যে দ্বিতীয় আওয়াজটা হয়। সারা জায়গায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

এর পরের ঘটনা জানিয়ে এই শিক্ষক বলেন, ‘ছাত্রদের মধ্যে যারা একপাশে অর্থাৎ স্কাই সেকশনে ছিল তারা বের হতে পেরেছিল। দ্বিতীয় তলা থেকে একটা ছেলে পানি খাওয়ার জন্য নিচে নেমে এসেছিল। সে বিমানের বিকট শব্দ শুনে পড়ে যায় ওখানেই।’ দুর্ঘটনায় ক্ষতির শিকার হায়দার আলী ভবনে এসময় কাদের ক্লাস চলছিল জানতে চাইলে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পরীক্ষা হয়েছিল। এ পরীক্ষায় যাদের ফলাফল খারাপ হয়েছে তাদের শিক্ষকরা পরামর্শ ও সাজেশন দিচ্ছিলেন হায়দার আলী ভবনে। কিছু দুর্বল ছাত্র ছিল, তাদের কিছুক্ষণ পরে ক্লাস শুরু করার কথা ছিল। তাদের খাওয়ানোর জন্য কয়েকজন অভিভাবক এসেছিলেন। তারা ভবনটির সামনে ছিলেন সন্তানদের সঙ্গে।’

শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনায় আরও উন্নতি করার। স্বপ্ন পূরণ করে সফলতার শিখরে পৌঁছানোর। কিন্তু মাত্র সাত সেকেন্ডেই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অসংখ্য স্বপ্ন আর সম্ভাবনা ছাই হয়ে গেছে। বলছিলেন শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত এবং ১৬৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু, যাদের বয়স ১২ বছরের নিচে। আহতদের মধ্যে ৫০ জনের বেশি দগ্ধ অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

সূত্র: জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়