প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
এমন আন্দোলনে কেমন যেনো গন্ধ আছে

চাঁদপুর জেলায় চাঁদপুর পৌরসভা সোয়াশ’ বছরের পুরানো পৌরসভা। এ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার আশি বছরেরও অধিক সময় পর এই জেলার দ্বিতীয় পৌরসভা হিসেবে ১৯৮৫ সালে হাজীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসে। নিয়োগ দেয়া হয় প্রশাসক। কিন্তু পৌরসভা ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা ঠুকে দেয় কিছু বিক্ষুব্ধ নাগরিক। আদালত এ মামলা খারিজ করলেও পৌরসভা গঠনের প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের কৌশল ও আচরণগত বিষয়ে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ দেন। তারপর হাজীগঞ্জ পৌরসভার কার্যক্রম জোরেশোরে শুরু হয়। বর্তমানে এ পৌরসভার অবস্থান জেলার মধ্যে দ্বিতীয় ও দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। এই পৌরসভা গঠনের বিরুদ্ধে নাগরিকরা মামলা করে নিম্ন আদালতে হেরে যাবার পর উচ্চ আদালতে আপিল করা নিয়ে সরব হয়নি নাগরিক বা জনপ্রতিনিধি কেউ। কিন্তু চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণের নারায়ণপুর পৌরসভার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিক্ষুব্ধ নাগরিকরা নয়, ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার নিজেই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। সেজন্যে ২০১০ সাল থেকে ঝুলে আছে নারায়ণপুর পৌরসভা, আর নারায়ণপুর ইউনিয়নে হচ্ছে না নির্বাচন। অবস্থা এমন, না ঘরকা না ঘটকা।
|আরো খবর
অতি সম্প্রতি নারায়ণপুর পৌরসভা বহাল রাখার পক্ষে নাগরিকদের একটি রিটের ফলাফল ইতিবাচক হওয়ায় আপিলের সুযোগ খুঁজতে নারায়ণপুরে দেখা যাচ্ছে বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের কর্মসূচি। এ ব্যাপারে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে একটি সংবাদ। শিরোনাম হয়েছে ‘নারায়ণপুরে পৌরসভা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল’। সংবাদটিতে চাঁদপুর কণ্ঠের মতলব দক্ষিণ ব্যুরো ইনচার্জ রেদওয়ান আহমেদ জাকির লিখেছেন, মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুরে পৌরসভা বাতিলের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্থানীয় পয়ালী এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। জানা যায়, ওই দিন পয়ালী এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি জোড়পুল এলাকা ও চরপয়ালী এলাকা প্রদক্ষিণ করে পয়ালী এলাকায় এসে সমাপ্ত হয়। বিক্ষোভ মিছিলের পূর্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এলাকাবাসী জানায়, নারায়ণপুর ইউনিয়নে ৯০ ভাগ কৃষক। এ ইউনিয়নে আবাদী কৃষি জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৮ হেক্টর। ৫% ব্যবসায়ী, ৫% চাকুরিজীবী ও প্রবাসী রয়েছে। যেহেতু এ ইউনিয়নে কৃষি জমির পরিমাণ বেশি, তাই এখানে পৌরসভা নয়, ইউনিয়ন থাকা আবশ্যক। নারায়ণপুর ইউনিয়নের মনিগাঁও এলাকার হাসান গাজী ও মোঃ আলাউদ্দিন জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকা, ৯০% লোক কৃষক ও শ্রমিক এবং পৌরসভার ট্যাক্স, ভ্যাট থেকে অব্যাহতির জন্যেই আমরা পৌরসভা চাই না।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার বলেন, ইউনিয়ন বা পৌরসভায় সরকারের বিপক্ষে আমি নই। এ ইউনিয়নে কৃষক ও শ্রমিক বেশি। পৌরসভার ট্যাক্স, ভ্যাট থেকে ইউনিয়নবাসীকে মুক্ত রাখতে চাই।
প্রকৃতপক্ষে নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান নারায়ণপুর পৌরসভা বাতিল হলেও কোনো নাগরিককে ট্যাক্স ও ভ্যাট থেকে মুক্তি দিতে পারবেন না। তবে বর্ধিত হার থেকে মুক্তি দিতে পারবেন। কেননা গরিব-ধনী নির্বিশেষে সকল নাগরিককে কম-বেশি ট্যাক্স বা খাজনা দিতেই হয়। কিন্তু ভ্যাট কেউ দিতে না চাইলেও প্রত্যক্ষ/ পরোক্ষভাবে সেটি পরিশোধিত হয়েই যায়। কেননা ভ্যাট হচ্ছে ভ্যালু এডেড ট্যাক্স অর্থাৎ মূল্যের সাথে সংযোজিত কর তথা খাজনা। আমরা চাই, সাধারণ নাগরিককে কেউ ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত না করুক, উত্তেজিত না করুক, নারায়ণপুর পৌরসভার বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে না থাকুক, ইতিবাচক/নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দ্রুত আসুক।