রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

এটা কি প্রাথমিক শিক্ষার নামে প্রহসন?
অনলাইন ডেস্ক

গতকাল দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ হয়েছে হাজীগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নিয়ে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘২০৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর স্কুলে ৭ জোড়া টেবিল-বেঞ্চ ॥ পাঠগ্রহণ করতে হয় ফ্লোরে বসে’। সংবাদটিতে প্রতিবেদক আলমগীর কবির লিখেছেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার ১নং রাজারগাঁও ইউনিয়নের ১৩নং আহমদাবাদ (রামরা) লুৎফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর স্কুলে মাত্র ৭ জোড়া টেবিল-বেঞ্চ রয়েছে। এগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্লাস চলছে। অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস করছে ফ্লোরে (মেঝেতে) বসে। রুম সঙ্কট, শিক্ষক সঙ্কট, টেবিল-বেঞ্চ সঙ্কটে দীর্ঘদিন যাবৎ ভুগছে বিদ্যালয়টি। সরজমিনে গেলে এলাকাবাসী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রয়োজন ভেবে ১৯৮০ সালে স্থানীয় আখন্দ বাড়ির মরহুম হাসেম আলী আখন্দের ছেলেরা বিদ্যালয়টির জন্যে জমি দান করেন। সেই দানকৃত জমির ওপর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৩২নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও বলাখাল মুকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মুকবুল আহমেদ আখন্দ তার মায়ের নামে বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। গত ২০২২ সনের ২৮ মে বিদ্যালয়ের চারকক্ষ বিশিষ্ট নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের সময় নতুন ভবনের জন্যে ছাত্র-ছাত্রী অনুপাতে টেবিল-বেঞ্চ আসার কথা থাকলেও দীর্ঘ দেড় বছরেও তা আসেনি। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকগণ বলেন, গত প্রায় দুবছর হয়েছে ভবন নির্মাণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বসার মতো টেবিল-বেঞ্চ আসেনি। আমাদের সন্তানেরা নিচে বসে ক্লাস করতে হয়। তারা আরো বলেন, গত শীত মৌসুমে নিচে ফ্লোরে বসে ক্লাস করে ঠাণ্ডা লাগায় সন্তানদের চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে আমাদের। আগামী ক’দিন পর আসছে শীত। তারা দুঃখ করে বলেন, আমরা জানি বিদ্যালয় তদারকি করার জন্যে শিক্ষা কর্মকর্তা থাকেন এবং পরিদর্শন করেন। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত বিদ্যালয়ের জন্যে কী ভূমিকা রেখেছেন এবং তিনি কি বিদ্যালয়ে একবারের জন্যেও এসেছেন? আসলেও তিনি কী ভূমিকা রেখেছেন? আমাদের ছেলে-মেয়েরা ফ্লোরে (মেঝেতে) বসে ক্লাস করে। প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি অনেক বার বিদ্যালয়ের টেবিল-বেঞ্চ চেয়ে মৌখিক ও লিখিত আবেদন করেছি, কিন্তু পাইনি। আমার বিদ্যালয়ে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট। ২০২২ সালে নির্মিত ভবনের কক্ষ চারটি। তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করছি। কিন্তু প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি হওয়ায় শ্রেণিকক্ষ দরকার চারটি, অফিস কক্ষ একটিসহ মোট পাঁচটি। ছাত্র-ছাত্রী অনুপাতে শিক্ষক দরকার ছয়জন, আছে তিন জন। প্রতি বছর শতভাগ পাস করলেও ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকগণ অনেক কষ্ট করতে হয়। ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারিত হলে শ্রেণিকক্ষ সমস্যার সমাধান হবে বলে প্রধান শিক্ষক আশাবাদী। সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান বলেন, পূর্বে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ও একই সাথে ফার্নিচারের বরাদ্দ দিতো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু বর্তমানে নতুন ভবন নির্মাণে আলাদা ও ফার্নিচার আলাদাভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। পূর্বের মতো বরাদ্দ না দেয়ায় ভবন নির্মাণের সাথে ফার্নিচার বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আশা করি চলতি অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের ফার্নিচারের বরাদ্দ হবে।

হাজীগঞ্জের খুবই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত লুৎফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে করুণ চিত্র প্রতিবেদক আলমগীর কবির চাঁদপুর কণ্ঠে তুলে ধরেছেন, সেজন্যে পাঠকবৃন্দ তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারে না। আমরা মনে করি, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সাথে নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের যতো দ্রুত সম্ভব উল্লেখিত বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাওয়া দরকার। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় এমপি মহোদয়, এমনকি জেলা প্রশাসনেরও উচিত বিদ্যালয়টি সম্পর্কে জানা, খোঁজ নেয়া এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা। শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট মিটানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, কিন্তু শিক্ষক সঙ্কট ও টেবিল-বেঞ্চ সঙ্কট মিটানোর বিষয়টিতে সমন্বয় করা যায় অনায়াসে। উপজেলার কোনো না কোনো বিদ্যালয়ে উদ্বৃত্ত টেবিল-বেঞ্চ রয়েছে, সেখান থেকে সেগুলো লুৎফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো এবং বিশেষ ব্যবস্থায় ২-১ জন শিক্ষককে বদলি বা ডেপুটেশন প্রক্রিয়ায় বিদ্যালয়টিতে আনয়ন অসাধ্য কাজ নয়। যদি এটি অসাধ্য হয়েই যায়, তাহলে বলতে হবে, লুৎফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে বস্তুত প্রাথমিক শিক্ষার নামে প্রহসন হয়, শিশুদের প্রতি চরম অবহেলা-অবজ্ঞাই প্রদর্শন করা হয়, যেটি ডিজিটাল যুগে অবস্থান করে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রী সরকার-জনগণের জন্যে ঘোর অপমান ছাড়া অন্য কিছু নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়