রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

এই যুগল মরণের দায়দায়িত্ব আসলে কার?

এই যুগল মরণের দায়দায়িত্ব আসলে কার?
অনলাইন ডেস্ক

ফরিদগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে প্রাণ গেলো মৃৎশিল্পী স্বামী-স্ত্রীর। পুকুরের পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারালেন মৃৎশিল্পী অর্জুন পাল (৭০) ও তার তার স্ত্রী অঞ্জলী পাল (৫৫)। ঘটনাটি ঘটে সোমবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের আনন্দ পালের বাড়িতে। সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ পানি থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। বৃষ্টিজনিত কারণে সোমবার রাতে গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের আনন্দ পালের বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ হয়ে যায়। ১৪ আগস্ট সোমবার সকালে তারা দেখতে পায় পুকুরের ওপর বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে আছে। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীবাস পালের মুঠোফোন থেকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক তারা আসেনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুকুরের পানিতে মাছ মরে ভাসতে দেখে মৃৎশিল্পী অর্জুন পাল পুকুরের পানিতে নামেন। বেশ কিছুক্ষণ তিনি ফিরে না আসায় বাড়ির লোকজন পুকুরের পাড় গিয়ে তাকে পুুকুরের পানিতে পড়ে থাকতে দেখেন। তাকে উদ্ধার করতে তার স্ত্রী অঞ্জলী পাল পুকুরের পানিতে নামলে তিনিও পানিতে তলিয়ে যান। এ সময় তারা নিশ্চিত হন বিদ্যুতের তারের কারণে পানি বিদ্যুতায়িত হওয়ায় উভয়ই মারা গেছেন। ফলে আর কাউকেই তারা পুকুরে নামতে দেননি।

নিহত অর্জুন পালের ভাইপোসহ স্থানীয়রা জানান, সকালে নিহত অর্জুন পালের ভাইয়ের মুঠোফোন থেকে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে ছেঁড়া তারের বিষয়ে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের গাফলতির কারণে দুজনের করুণ মৃত্যু হলো। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আনন্দ পালের বাড়ির দক্ষিণ দিকের পুকুরের দক্ষিণ কোণে বিদ্যুতের পিলার থেকে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পুকুরের পানিতে পড়ে রয়েছে। পুকুর পাড়ে ছোট মাছ এবং কয়েকটি বড় মাছ মরে ভাসছে। স্থানীয়রা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফোন দিয়ে পুকুরের পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে থাকার বিষয়টি জানানো হয়। অর্জুন পাল পুকুরের পানিতে মাছ ভেসে থাকতে দেখেন। বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করা হয়েছে এমনটি ভেবে তিনি পানিতে নামলে বিদ্যুতায়িত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপরই তার স্ত্রী তাকে খুঁজতে গিয়ে পানি থেকে উদ্ধারের জন্যে নামলে তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন। উভয়ই ঘটনাস্থলেই মত্যুবরণ করেন।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ফরিদগঞ্জে স্বামী-স্ত্রীর যুগল মৃত্যুর জন্যে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষই দায়ী। এক্ষেত্রে মৃত দুজনের উদাসীনতাকে বলতে হবে একেবারে মৃদু। ঝড়-বৃষ্টি হলে পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্বে অবহেলা, উদাসীনতা ও জনবল সঙ্কটের বিষয়টি প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়। ঝড়-বৃষ্টির সময় বা পরে কী কী করলে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বিপদগ্রস্ত হতে পারেন, এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) কর্তৃপক্ষ বা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)-এর পক্ষ থেকে যেভাবে প্রচারণা চালিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সচেতন করতে হয়, সেটা সাধারণত দেখা যায় না বললেই চলে। ফলে বিপদ যা ঘটার তা ঘটেই থাকে। যেমনটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জে। আমরা ফরিদগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্বামী-স্ত্রীর যুগল মৃত্যুর জন্যে পল্লী বিদ্যুৎকে দায়ী করছি এবং এজন্যে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। আশা করি এ দাবির অনুকূলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়