রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

মৃত্যুজনিত ক্ষতি কতটি পরিবার কাটিয়ে উঠতে পারে?

মৃত্যুজনিত ক্ষতি কতটি পরিবার কাটিয়ে উঠতে পারে?
অনলাইন ডেস্ক

ঝালকাঠিতে তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে চাঁদপুরের মাসুদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে খবর বেরিয়েছে। এই খবরে যা লিখা হয়েছে, তা হচ্ছে : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ‘এমভি সাগর নন্দিনী-২’ নামে তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত চাঁদপুরের মাসুদুর রহমান বেলালের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে বেলালের মরদহ চাঁদপুর এসে পৌঁছায়। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মাসুদুর রহমান ওই জাহাজের ইঞ্জিন ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর থেকে জাহাজের ৪ জনের সাথে তিনিও নিখোঁজ ছিলেন। ৩ জুলাই সোমবার সকালে মাসুদুর রহমান বেলালসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বেলালের গ্রামে বাড়ি থাকলেও পরিবার নিয়ে চাঁদপুর শহরের ছৈয়াল বাড়ি রোডে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। বড় মেয়ে একটি প্রাইভেট মেডিকেলে শেষ বর্ষে এবং ছোট মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। গত ১ জুলাই শনিবার দুপুর ২টার দিকে সুগন্ধা নদীতে ঝালকাঠি পৌর খেয়াঘাটের বিপরীত পাশে নোঙ্গর করা অবস্থায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির তেল বোঝাই ‘এমভি সাগর নন্দিনী-২’ জাহাজে হঠাৎ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ওই জাহাজের ইঞ্জিন কক্ষের ওপরে থাকা মাস্টার ব্রিজটি পুরোপুরি ছিটকে নদীতে পড়ে যায়। ওই ঘটনায় মাসুদুর রহমান বেলালসহ ৪ জন নিখোঁজ হন। সোমবার (৩ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এভাবে প্রায়শই নানান ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর আমরা কোনো না কোনো গণমাধ্যমে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেয়ে থাকি। এসব প্রাণহানিতে যে বা যারা পরিবারের কর্তাব্যক্তি কিংবা একমাত্র উপার্জনক্ষম হিসেবে চিরবিদায় নেন এবং কোনো ধরনের সঞ্চয় বা মূল্যবান সম্পদ না রেখে যান, তাহলে তার বা তাদের পরিবার অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিদ্যমান সুখের মাঝে নিমিষেই নেমে আসে দুঃখের যতো জঞ্জাল। আলোর প্রদীপ নিভে যায় তীব্র বেগে ছুটে আসা ঝড়ে। অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিপতিত হয় পুরো পরিবার। মৌখিক সমবেদনা, আত্মীয়স্বজন, সদাশয় প্রতিবেশী ও শুভাকাক্সক্ষীদের ছিটেফোঁটা সাহায্যে ক'দিন মোটামুটি কাটে। তারপর নির্মম বাস্তবতা মোকাবেলায় শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত করতে হয় কষ্টকর সংগ্রাম। না খেয়ে কতো যে থাকতে হয়, নানা প্রয়োজন না মিটাবার কষ্টে যে নীরবে কতোটা অশ্রু বিসর্জন দিতে হয়, সেটার খবর কোনো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে না। এমনকি নিকটজনও জানতে চান না। আর শোকাহত পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশই বুক ফাটলেও মুখ ফাটাতে চান না।

ঝালকাঠিতে তেলবাহী জাহাজে সংঘটিত বিস্ফোরণে ইঞ্জিন ড্রাইভার চাঁদপুরের মাসুদুর রহমান বেলাল নামে যে ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি তার যে দুটি কন্যা সন্তান রেখে গেছেন, তারা যে নানাভাবে বিপন্নতার শিকার হতে যাচ্ছেন, তা সংবেদনশীল প্রতিটি মানুষই হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন। বড়ো মেয়ে পিতার আয়ে প্রাইভেট মেডিকেলে ব্যয়বহুলভাবে পড়ালেখা চালিয়ে শেষ বর্ষে আছেন। পিতার দুর্ঘটনাজনিত অকাল মৃত্যুতে তার এই পড়ালেখা যে তীব্র ধকলাক্রান্ত হবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ধকল তিনি প্রাইভেট মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সুবিবেচনা, সামর্থ্যবান আত্মীয়স্বজন কিংবা পিতার কর্মস্থল পদ্মা অয়েল কোম্পানির সহযোগিতায় হয়তো সামলাতে পারবেন। অন্যথায় পরিণতি কী হতে পারে সেটা খোলসা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে বেলালের মতো গৃহকর্তা/পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অকাল মৃত্যুতে কতো পরিবার যে ক্ষয়ক্ষতির প্রাবল্যে কিংবা আর্থিক/ মানসিক ঝাঁকুনিতে হতাশাগ্রস্ত, দিকভ্রান্ত, বিপদগ্রস্ত, এমনকি বিপথগামী হয়ে পড়ে, তার খবর কে রাখে? আর এ সংক্রান্ত হিসেব বা পরিসংখ্যান নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা কতোজন অনুভব করে তা আমাদের জানা নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়