রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর রোটারী ক্লাবকে অভিনন্দন

চাঁদপুর রোটারী ক্লাবকে অভিনন্দন
অনলাইন ডেস্ক

রোটারী জেলা ৩২৮২, বাংলাদেশ-এর অ্যাওয়ার্ড সেরিমনি-২০২৩-এ চাঁদপুর রোটারী ক্লাব সেরা ক্লাবের পুরস্কার সহ মোট ১২টি পুরস্কার অর্জন করেছে। গত ২৪ জুন শনিবার কুমিল্লা শহরের ফান টাউনের কনভেনশন হলে এসব পুরস্কার বিতরণ করা হয়। রোটারী ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর রোটাঃ রুহেলা খান চৌধুরী, গভর্নর ইলেক্ট ও সাবেক গভর্নর সহ অন্য নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ক্লাবের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ২০২২-২৩ রোটারী বর্ষের পুরস্কার বিতরণ করেন।

চাঁদপুর রোটারী ক্লাব সেরা ক্লাবের পুরস্কার ছাড়াও বেস্ট রোটারিয়ান (রোটাঃ মাহবুবুর রহমান সুমন), বেস্ট প্রেসিডেন্ট (রোটাঃ খোরশেদ আলম পাটওয়ারী কাঞ্চন), বেস্ট সেক্রেটারী (রোটাঃ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া), বেস্ট ডেপুটি গভর্নর (রোটাঃ অ্যাডঃ সাইয়েদুল ইসলাম বাবু), বেস্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট গভর্নর (রোটাঃ মোঃ নাসির উদ্দিন খান), সেরা সিগনিফিক্যান্ট মিডিয়া কাভারেজ, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, মিটিং মিনিটস্ বুক সম্পাদনা, পোলিও কন্ট্রিবিউশন (রোটাঃ মাহবুবুর রহমান সুমন), ডিস্ট্রিক্ট ইভেন্টে সর্বোচ্চ উপস্থিতি (রোটাঃ মাহবুবুর রহমান সুমন) ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করে।

গেলো ২০২১-২০২২ রোটারী বর্ষেও সভাপতি শাহেদুল হক মোর্শেদ ও সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট পলাশ মজুমদারের নেতৃত্বে চাঁদপুর রোটারী ক্লাব সেরা ক্লাবের পুরস্কার, সেরা সভাপতি ও সম্পাদক সহ বহু পুরস্কার অর্জন করে। তাদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বর্তমান সভাপতি খোরশেদ আলম পাটোয়ারী কাঞ্চন ও সেক্রেটারী ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া চলতি ২০২২-২০২৩ রোটারী বর্ষে ক্লাব কার্যক্রমে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারাটা নিঃসন্দেহে অনেক বড়ো সাংগঠনিক দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও আত্মনিবেদনের পরিচায়ক বলে আমরা মনে করি। সেজন্যে চাঁদপুর জেলাবাসীর পক্ষে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।

১৯৭০ সালের ২০ নভেম্বর চাঁদপুরের প্রথিতযশা চিকিৎসক, সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ডাঃ নুরুর রহমান বিশ্বের সেরা আন্তর্জাতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রোটারী ইন্টারন্যাশনালের শাখা হিসেবে চাঁদপুর রোটারী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর এ সংগঠনটি চাঁদপুর শহরের উন্নয়নে কতো কিছুতেই না হাত বাড়িয়ে দিয়েছে! চাঁদপুর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ নির্মাণ, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক আইল্যান্ড নির্মাণ, বাসস্ট্যান্ডে প্রথম যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, অনূর্ধ্ব ১২ বছরের শিশুদের জন্যে দাতব্য চিকিৎসালয় পরিচালনা, বাবুরহাট সরকারি এতিমখানার নিবাসী মেয়েদের পাত্রস্থ করা ও বরদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে আর্থিক সহায়তা করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের পাশে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো, বেশ ক'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ায় উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন, প্রায় দু দশক ধরে সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রোগী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, অসহায় মানুষের চোখের ছানি অপারেশন, লেন্স সংযোজন সহ অন্যান্য চিকিৎসায় ভ্রাম্যমাণ চক্ষু শিবির পরিচালনা, দন্ত রোগের চিকিৎসা সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা, সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্যে বৃত্তি প্রদান, স্কুল ড্রেস, স্কুল ব্যাগ, খাতা, কলম সহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণে অস্থায়ী স্কুল পরিচালনা, সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, আদর্শ গ্রাম ও মহল্লা প্রতিষ্ঠায় পরীক্ষামূলকভাবে রোটারী ভিলেজ ও রোটারী কমিউনিটি করপস্ কার্যক্রম পরিচালনা, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের নগদ অর্থ সহায়তা, আত্মকর্মসংস্থানে অর্থ ও উপকরণগত সহায়তা, গৃহনির্মাণে আর্থিক সহায়তা, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার প্রদান, শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে সেমিনার আয়োজন, বৃক্ষরোপণ, প্রবীণ ও গুণীজন সম্মাননা, পুরানো সংগঠনগুলোকে মূল্যায়ন স্মারক প্রদান। ক্রীড়া উন্নয়নে সহায়তা প্রদান, করোনাকালীন মুমূর্ষু রোগীদের ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সুবিধা প্রদান সহ বহু খাতে চাঁদপুর রোটারী ক্লাব ও এই ক্লাবের সদস্যবৃন্দ সহায়তা অব্যাহত রেখে চলছেন।

‘সেবা স্বার্থের ঊর্ধ্বে’ এই প্রতিপাদ্যে সারা বিশ্বে ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রোটারী ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে চলছে বহুবিধ সেবামূলক কার্যক্রম। অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি বিজ্ঞানভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়ায় এক বছর মেয়াদী কমিটির মাধ্যমে সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করে সমাজে প্রশিক্ষিত নেতৃত্ব সৃষ্টিতে রেখে চলছে অবিস্মরণীয় ভূমিকা। জাতিসংঘের পর এই বিশ্বে সর্বোচ্চ তহবিল সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রোটারী ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই বিশ্বকে পোলিও মুক্ত করার কাজ এখন সফল সমাপ্তির পথে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী আরো কতো পাইওনিয়র প্রকল্পে রোটারী ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন রয়েছে, তার বিবরণ তুলে ধরা সত্যিই কঠিন।

চাঁদপুর রোটারী ক্লাব রোটারী ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছর পর এবং ১৯৩৭ সালে বাংলাদেশে রোটারী কার্যক্রম শুরুর ৩৩ বছর পর ১৯৭০ সালে দেশের সপ্তম রোটারী ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৫৩ বছর যাবৎ অরাজনৈতিক পর্যায়ে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় পথিকৃতের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। চাঁদপুর শহরের কবি নজরুল সড়কে সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে এই ক্লাবটির রয়েছে নিজস্ব তিনতলা ভবন। এই ভবনে সাশ্রয়ী মূল্যে মিলনায়তন ভাড়া প্রদান এবং চাঁদপুর জেলায় সর্বপ্রথম থ্রী স্টার মানের গ্র্যান্ড হিলশা নামের হোটেল প্রতিষ্ঠা করে আয়বর্ধক প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের সেবামূলক কাজ সমূহকে টেকসই করার যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সেটাও দৃষ্টান্তযোগ্য। চাঁদপুরের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চিত্ত-বিত্তের ঔদার্যে গ্রহণযোগ্যতায় উত্তীর্ণদের সদস্যপদ প্রদান করে চলছে চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের অগ্রযাত্রা। বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে আবদ্ধ ও সেবার আদর্শে উৎসর্গীকৃত সংগঠনটির সদস্যবৃন্দ। যার ফলে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও প্রাণপ্রাচুর্যে চলে ক্লাবটির কার্যক্রম। সেজন্যে স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন এই ক্লাবটি ও এর বহু সদস্যের জন্যে বিরল নয়, বলা যায় স্বাভাবিক ও অনিবার্য বিষয় হয়ে গেছে। পূর্বসূরিদের সাফল্য ও সুনামকে অনুসরণ করে এ ক্লাবটির নেতৃত্বে পর্যায়ক্রমে আসা উত্তরসূরিরা নিরন্তর ছুটে চলেন সঠিক উদ্দেশ্য সাধনে ও সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে। ফলস্বরূপ এই ক্লাবের স্পন্সরে বরিশাল রোটারী ক্লাব, চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাব ও হাজীগঞ্জ রোটারী ক্লাবের মতো টেকসই রোটারী ক্লাব, চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাব ও চাঁদপুর রূপসী রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের মতো স্বনামধন্য যুব সংগঠন গড়ে সেবার পরিধিকে অসামান্য বিস্তৃতির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাম্প্রতিক সাফল্য সহ ৫৩ বছরের সামগ্রিক সকল কাজের জন্যে অশেষ ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই এবং ক্লাবটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্যে নিরন্তর শুভ কামনা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়