রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩, ০০:০০

প্রসঙ্গ কিশোর সন্ত্রাসী এবং চাঁদপুরে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রয়োজনীয়তা

প্রসঙ্গ কিশোর সন্ত্রাসী এবং চাঁদপুরে  ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রয়োজনীয়তা
অনলাইন ডেস্ক

গত শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে চাঁদপুর শহরে কিশোর সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে লিখা হয়েছে, বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছর হবে। এরাই কখনো কিশোর সন্ত্রাসী, কখনো কিশোর গ্যাং নামে পরিচিত। কথায় কথায় তারা অস্ত্রের মহড়া দেয়। সাথী বন্ধুদের সাথে একেবারে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রথমে ঝগড়া, তারপর করে মারামারি। মারামারিতে সেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্দয়ভাবে আঘাত করে থাকে। এই হলো কিশোর সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড। চাঁদপুর শহরে এখন কিশোর সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য সীমাহীন বেড়েছে। তাদের এমন দৌরাত্ম্যে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে মানুষ। তাদের অস্ত্রের মহড়া এবং মারামারির দৃশ্য মানুষ অসহায়ের মতো শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে থাকে। তবে সাহস করে কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে গেলে তখন তারা সব পালিয়ে যায়। যেমনটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে। প্রেসক্লাব সভাপতি তার সাহসী ভূমিকায় এক কিশোর সন্ত্রাসীর হাত থেকে একটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র ছিনিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও তাদের আটক করতে পারেন নি। সভাপতির ধাওয়ায় সব পালিয়েছে। তখন সভাপতি একা হওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি।

চাঁদপুর শহরে কিশোর সন্ত্রাসীদের বিচরণ এবং মারামারির অন্যতম স্পট হচ্ছে প্রেসক্লাব এলাকা। দুপুর ১২টার পর থেকেই এ এলাকায় তাদের আনাগোনা শুরু হয়। দুপুরের পর থেকে বাড়তে থাকে। বিকেল-সন্ধ্যায় গ্রুপে গ্রুপে আসতে থাকে। প্রেসক্লাব ঘাট এলাকা, প্রেসক্লাবের পেছনেসহ আশপাশে তারা জটলা বেঁধে থাকে। কারো পূর্ব বিরোধের জের, কেউ উপস্থিত কোনো বিষয় নিয়ে করে কথা কাটাকাটি। এরপর শুরু হয় মারামারি। তখন ব্যবহার হয় দেশীয় ধারালো অস্ত্র। বিকেলে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে অবকাশ যাপনে ঘুরতে আসা মানুষজন তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ প্রেসক্লাবে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিচে নামেন। তখন তিনি দেখেন পৌর পাঠাগারের সামনে থেকে প্রেসক্লাবের প্রধান গেইট পর্যন্ত ২০-২৫ জন কিশোর ছেলের জটলা এবং চিৎকার-চেঁচামেচি। আহসান উল্লাহ তখন প্রেসক্লাবের গেইটের দিকে এগিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখেন ১৩/১৪ বছরের এক কিশোর রিকশা থেকে নামলো। তার হাতে দেশীয় ধারালো অস্ত্র। এটির সাইজ হবে প্রায় এক হাত। তখন প্রেসক্লাব সভাপতি ‘এই তোরা কারা’ বলে ধমক দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ওই কিশোরের হাত থেকে অস্ত্রটি ছিনিয়ে নেন। আর তখন সেই কিশোর ছেলেটিসহ অন্যরা দ্রুত পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডঃ চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলে যেতে দেখলে আহসান উল্লাহ তাকে থামান। এরপর সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সদর মডেল থানায় গিয়ে অস্ত্রটি ওসি মুহম্মদ আব্দুর রশিদের কাছে জমা দিয়ে আসেন। চাঁদপুর প্রেসক্লাব এলাকায় কিশোর সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণের বিষয়টি বহুবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আনা হয়। কিন্তু কোনো কাজে আসে নি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির জন্য পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দসহ শহরবাসী।

চাঁদপুর শহরে ঘোরাঘুরির জায়গা খুব বেশি নেই। মেঘনার তীরে একেবারে শহরের পশ্চিমণ্ডউত্তর প্রান্তের মোলহেড ও পুরাণবাজার হরিসভা এলাকা এবং ডাকাতিয়ার তীরে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পেছনে বিস্তৃত ফোরশোর ল্যান্ড। যারা দূরবর্তী মোলহেড ও হরিসভায় যেতে পারেন না, তারা নিকটবর্তী ডাকাতিয়া তীরকেই বেছে নেন। অথচ চাঁদপুর প্রেসক্লাব সংলগ্ন এই ডাকাতিয়া তীরে বিনোদনপ্রেমী মানুষের পাশাপাশি অবস্থান করে কিশোর সন্ত্রাসীরা। এরা প্রায়শই মারামারি সহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে ভীতি ছড়ায়। চাঁদপুর বড়ো স্টেশন মোলহেডে কিশোর সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য না থাকলেও পর্যটকদের বিব্রত ও অতিষ্ঠ করার বহুবিধ অপতৎপরতা রয়েছে। এই মোলহেডেই হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্রের নানা স্থাপনা। এসব স্থাপনা হয়ে গেলে এখানে বাড়বে পর্যটকদের ব্যাপক আনাগোনা। এমতাবস্থায় বিনোদনপ্রেমী মানুষ তথা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অনিবার্য প্রয়োজন হয়ে দাঁড়াবে পুলিশি সহায়তা। চাঁদপুর মডেল থানা ও রেল থানা থেকে পুলিশ ফোর্স দিয়ে নিয়মিত টহল কার্যক্রম চালানো হয়ে যাবে কষ্টকর, বিশেষ করে জনবল সঙ্কটহেতু অসম্ভব। এমন বাস্তবতায় চাঁদপুরে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম শুরুর উপযুক্ত প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ করে জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় এমপি অবিলম্বে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখালিখি শুরু করাটা জরুরি বলে আমরা মনে করি। ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম চাঁদপুরে শুরু হলে বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র ও চাঁদপুর প্রেসক্লাব সংলগ্ন ডাকাতিয়া তীর সহ অন্য পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়