রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৩, ০০:০০

নার্সিং ইনস্টিটিউটে যখন ধর্ষক-কর্মচারী!

নার্সিং ইনস্টিটিউটে যখন ধর্ষক-কর্মচারী!
অনলাইন ডেস্ক

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘চাকরির ফাঁদে নারীদের ধর্ষণ করতেন চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের উচ্চমান সহকারী’ শীর্ষক সংবাদ থেকে জানা যায়, এই ইনস্টিটিউটের উচ্চমান সহকারী মোঃ আল-আমিন সিকদার (৩৬)-এর আউট সোর্সিং চাকরির ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী। তার এ ধরনের যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ না পেলেও সর্বশেষ একজন কিশোরীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। গত ১৮ মে আল-আমিন কর্তৃক অফিস সহায়ক এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫ জুন মামলা দায়ের করেন ওই কিশোরীর মা। কিন্তু এ ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং মামলার তথ্য চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিবেদকের হাতে আসে ২০ জুন মঙ্গলবার। অভিযোগের শিকার আল-আমিন সিকদার চাঁদপুর শহরের কাঁচ্চা কলোনী এলাকার মোঃ নূর নবীর ছেলে। মামলার বিবরণ ও ধর্ষণের শিকার কিশোরীর জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, গত এক বছর পূর্বে ধর্ষণের শিকার কিশোরী চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চাকরি নেয়। তার দায়িত্ব ছিল নিচতলায় উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের কক্ষে। তখন থেকেই সে কিশোরীকে কারণে অকারণে কাছাকাছি আসা এবং কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। এরপর গত এপ্রিল মাসের বেতন নেয়ার জন্যে ওই কিশোরীক তার কক্ষে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করে। ওই অবস্থায় কিশোরী কোনো মতে তার ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করে এবং চিৎকার দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে।

এ ঘটনায় কিশোরীর মা মামলা করলে এবং মামলার আর্জিতে ধর্ষণের চেষ্টা লিখলেও বিচারকের কাছে এবং পৃথক বক্তব্যে কিশোরী আল-আমিনের সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বলে স্বীকার করেন। কিশোরীর বক্তব্যের আলোকে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী ৫ জুন কিশোরীটিকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে তার মায়ের জিম্মায় দেন। আগামী ২৬ জুনের মধ্যে ডাক্তারি রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে বলে বিচারক আদেশ দেন।

ধর্ষণের শিকার কিশোরী পৃথক বক্তব্যে বলেন, সে চাকুরিতে যোগদানের পর এক মাস পর্যন্ত পরিবেশ ভালো ছিলো। কিন্তু এক মাস পর থেকেই আল-আমিন তাকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। এরপর তাকে অফিসের বাথরুমে এবং ঢাকায় অফিসের কাজের কথা বলে লঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় ধর্ষণের চেষ্টা করে। এছাড়া কিশোরীকে দুর্বল করার জন্যে সে পূর্বে যেসব নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে সেসব ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে উত্তেজিত করে এবং ধর্ষণের জন্যে সম্মত করায়।

চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান। তাঁর কাছে উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা চলমান থাকার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি মামলার বিষয়ে তিনি কোনো কিছুই জানেন না। তিনি এখন জেনেছেন। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দাপ্তরিক ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন। এর আগে ২০২০ সালে আল-আমিনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে চাঁদপুরের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর লেখা পোস্ট করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামী হচ্ছেন ডাঃ শেখ মহসিন গং। মামলাটি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। ইতিমধ্যে মামলার চার্জশীট দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ওই মামলায় ৪ জন আসামীর মধ্যে আল-আমিন সিকদার প্রধান আসামী। এ বিষয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ জানান, আল-আমিন সিকদারের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা চলমান অবস্থায় আছে। এ ধরনের অপকর্ম করে সমাজে যারা অনাচার সৃষ্টি করে, তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে, নার্সিং ইনস্টিটিউটের মতো জায়গায় নারীদের যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটায়, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

আমরাও চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতির বক্তব্যের সাথে একমত। অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি কোনো পুরুষ কর্মচারী ধর্ষণ-প্রবণতায় ভোগেন, তাহলে পরিস্থিতি কোন্ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছতে পারে সেটা একজন কিশোরী অফিস সহায়কের আদালতে প্রদত্ত জবানবন্দি থেকে আঁচ করা যায়। আল-আমিন সিকদার নামে উচ্চমান সহকারী পদে অধিষ্ঠিত এই কর্মচারী কর্তৃক ধর্ষণে প্রলুব্ধ বা উদ্দীপ্ত করার জন্যে তার মোবাইল ফোনে সংরক্ষিত ভিডিও ক্লিপের অপব্যবহারের যে বিষয়টি কিশোরীর জবানবন্দিতে প্রকাশ পেয়েছে, সেটি যদি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে অনেকেই নানা বিরূপ মন্তব্য করতে দ্বিধা করবে না। আমরা মনে করি, নার্সিং ইনস্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও পোস্টিং প্রদানে নারীদেরকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে অন্য নারীরা নিরাপদ থাকার যতোটা নিশ্চয়তা আছে, আল-আমিনের মতো কম বয়সী বিপথগামী পুরুষ কর্মচারীর কাছে সেটা নেই। চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটে আল-আমিনের বিপথগামিতার নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে, সেটা তদন্ত করলে উপরোল্লিখিত মন্তব্যের সত্যতা মিলতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়