রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩, ০০:০০

অবেলায় চলে গেলেন চাঁদপুরে কম্পিউটার শিক্ষার পথিকৃৎ শাহআলম

অবেলায় চলে গেলেন চাঁদপুরে কম্পিউটার শিক্ষার পথিকৃৎ শাহআলম
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুরে প্রথম কম্পিউটার শিক্ষার পথিকৃৎ মোঃ শাহআলম বড্ড অসময়ে চলে গেলেন। অবেলায় যেনো অস্তমিত হলো আলো বিচ্ছুরণকারী এক সূর্য। তিনি মতলব ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে তাঁর বড়ো ভাই মোঃ আখতারুজ্জামানের অনুপ্রেরণায় রাজধানী ঢাকায় গিয়ে কম্পিউটারের ওপর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেন এবং তারপর ১৯৯১ সালে চাঁদপুর শহরের মিশন রোডে রামকৃষ্ণ আশ্রমের সম্মুখস্থ পুকুরের পশ্চিম পাড়ে মাইক্রো কম্পিউটার স্কুল নামে চাঁদপুরে প্রথম কম্পিউটার শিক্ষার প্রতিষ্ঠান চালু করেন। সরকারও যখন চাঁদপুরের মতো ছোট জেলাগুলোতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো প্রকল্প গ্রহণ করেনি, তখনই জনাব শাহআলম পারিবারিক সহায়তা নিয়ে সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে এই স্কুল প্রতিষ্ঠার সাহসী উদ্যোগ নেন। সহোদর ছোট দুভাই যথাক্রমে ইসমাইল হোসেন (বর্তমানে ব্যাংকার) ও আব্দুস সোবহান লিটন (ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান সেক্রেটারী)কে কম্পিউটারে দক্ষ করে স্কুলটি পরিচালনায় সহযোগী হিসেবে নেন। তিনি এই দুভাইকে স্কুলটি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে চলে যান বিদেশে। দুটি দেশে প্রায় দুবছর অবস্থান করে আবার চলে আসেন দেশে এবং আবার শক্ত করে হাল ধরেন মাইক্রো কম্পিউটার স্কুলের। ১৯৯৬ সালে স্কুলটি স্থানান্তরিত হয় চাঁদপুর শহরের জোড় পুকুর পাড়ে অর্থাৎ শহরের প্রাণকেন্দ্রে। এতে তারা ব্যবসায়িক সাফল্য খুঁজে পান। প্রতিষ্ঠার পরে একটানা ১৫ বছর চাঁদপুরে জনাব শাহআলম ও তাঁর ভাইদের পরিচালিত মাইক্রো কম্পিউটার স্কুল এককভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়। তারপর এই স্কুল ও অন্যত্র থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলেন কম্পিউটার শিক্ষার আরো কিছু প্রতিষ্ঠান। এমতাবস্থায় মাইক্রো কম্পিউটার স্কুল পরিচালনার পাশাপাশি ২০০৭ সালে জনাব শাহআলম ময়দার মিলের পেছনে গুনরাজদী গ্রামে নিজেদের বাসভবনে বেসরকারি পলিটেকনিক হিসেবে চাঁদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট (সিইআই) প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে পাঁচ বছর পরিচালনার পর সিইআইকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ষোলঘরে বহুতল ভবনে স্থানান্তর করেন। পরিবর্তিত স্থানে এটি সিইআই পলিটেকনিক হিসেবে পরিচিতি ও প্রসার লাভ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত ক’বছর যাবৎ তিনি কথা বলার সমস্যায় ভোগাসহ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হন। অবশেষে প্রায় বছরখানেক আগে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। যে কারণে তিনি গত ২৮ মে বিকেল ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি......রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৫৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি বড়ো এক ভাই, বড়ো এক বোন, ছোট দু ভাই ও দু বোন, স্ত্রী, দুই ছেলেসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান। গতকাল ২৯ মে সকালে দক্ষিণ গুণরাজদী আব্দুর রশিদ পাটোয়ারী সড়ক (লুৎফুর রহমান পাটোয়ারী বাড়ির সামনের মাঠে) প্রথম জানাজা, এরপর সেখান থেকে মরহুমের মরদেহ ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ভাটিরগাঁও গ্রামের মিয়াজী বাড়িতে নিয়ে ২য় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মরহুম মোঃ শাহ আলমের প্রতিষ্ঠিত মাইক্রো কম্পিউটার স্কুল বর্তমানে চাঁদপুর শহরের জে.এম. সেনগুপ্ত রোডে নাজিরা বিল্ডিংয়ে অবস্থিত। তিনি আর বেঁচে না থাকলেও চাঁদপুর জেলায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রথম কম্পিউটার শিক্ষার এই স্কুল এবং চাঁদপুর শহরে প্রথম পলিটেকনিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান সিইআই তাঁকে ইতিহাসের পাতায় যোগ্য ঠাঁই দিয়ে বাঁচিয়ে রাখবে। চাঁদপুর জেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণে জনাব শাহআলম যে অবদান রেখে গেলেন, তা নিঃসন্দেহে অসামান্য ও ঐতিহাসিক। তিনি অকালে মৃত্যুবরণ না করলে অবশ্য অবশ্যই আরো বেশি অবদান রেখে যেতে পারতেন। তিনি তাঁর দুটি ছেলেকেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। ছেলে দুজন বাবার প্রতিষ্ঠানকে ধরে রাখতে নিরলস শ্রম দিতে কার্পণ্য করবেন না বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা জনাব মোঃ শাহআলমের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি, তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়